দলীয় স্বার্থ পরিহার করে জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য হতে হবে : বুলবুল

দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থ পরিহার করে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যমত হবার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত ৬টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বন্ধু প্রতিম একটি রাজনৈতিক দল অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব বিষয় নিজের মনমতো কিংবা দলের পছন্দানুযায়ী হয় না, হওয়া সম্ভব নয়। জাতীয় স্বার্থে দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থ পরিহার করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
শনিবার (২১ জুন) বিকেলে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিআইবি) হলরুমে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের পেশাজীবী বিভাগের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিনের সভাপতিত্বে এবং মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন এবং মোহাম্মদ কামাল হোসেন। মহানগর দক্ষিণের কর্ম পরিষদ সদস্য ডাক্তার আতিয়ার রহমান, আমিনুর রহমানসহ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেওয়া। এজন্য সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা, জনপ্রশাসন, বিচার ব্যবস্থাসহ নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের চেয়েও ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র শক্তিকে ব্যবহার করেই ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিল। যেখানে বিদ্যমান আইনে প্রধানমন্ত্রীর সীমাহীন ক্ষমতা। রাষ্ট্রপতি জানাজা আর কবর জিয়ারত ব্যতিত নিজে কোনো কাজ করতে পারেন না এমনকি কোনো কথাও বলতে পারেন না। তাকে কিছু বলতে হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যা লিখে দেবে তাই বলতে হয়। এজন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য করতে হবে। এজাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার রাজনৈতিক সরকার করবে না বিধায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এসব সংস্কার করতে হবে।
আরও পড়ুন
৫ আগস্টের পর থেকে সংস্কার ও গণহত্যার বিচার বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ষড়যন্ত্রকারীরা নানান দাবি নিয়ে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার চক্রান্ত করে আসছে উল্লেখ করে বুলবুল বলেন, জামায়াত সংস্কারের প্রশ্নে সরকারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে। আজ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী দলীয় স্বার্থে কোনো দাবি সরকারের কাছে উত্থাপন করেনি।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের বৈঠক হওয়া স্বাভাবিক। তবে বৈঠক শেষে ওই দলের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে তাদের চাওয়া অনুযায়ী নির্বাচন এগিয়ে আনার ঘোষণা অস্বাভাবিক। এই ঘোষণায় সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে আবার সব দল ও জাতিকে উপেক্ষা করে একটি মাত্র দলের ইচ্ছানুযায়ী নির্বাচন এগিয়ে আনার ঘোষণায় সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এই সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য সরকারকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং জাতির সামনে সরকারের নিরপেক্ষতা পরিষ্কার করতে হবে।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বয়কট করার পর প্রধান উপদেষ্টা ফোন করে আমির জামায়াতকে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সহযোগিতা চাওয়ায় জামায়াতে ইসলামী পরবর্তীতে ঐক্যমত কমিশনের বৈঠকে যোগদান করে দলের মতামত উপস্থাপন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী বরাবরই দেশ ও জাতির স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অবশ্য এজন্য জামায়াতে ইসলামীকে বারবার ফ্যাসিবাদ ও আধিপাত্যবাদের জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। শুধু দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষায় আধিপাত্যবাদের দোসর ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপোস না করায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসির মঞ্চে যেতে হয়েছে। আগামীতেও কোনো অপশক্তির কাছে জামায়াতে ইসলামী আপোস করবে না।
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যে মনে হয় কমিশন একটি বিশেষ দলকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে উল্লেখ করে কমিশনের উদ্দেশে ছাত্রশিবিরের সাবেক এ সভাপতি বলেন, হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে আপনারা কমিশনার হতে পেরেছেন। শহীদ ও আহতদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করলে, আপনাদেরকেও জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কমিশন যদি কোনো দলের কিংবা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নিদের্শনা বাস্তবায়ন করতে চায় তবে জনগণ সেটি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিহত করবে। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন চলবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জেইউ/এএমকে