অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযানের দাবি নুরের

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র প্রবেশ, প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ ও সন্ত্রাসীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে সমন্বিতভাবে একটি বিশেষ যৌথ অভিযান পরিচালনার দাবি জানাই।
আজ (শনিবার) বিকেল পৌনে ৩টায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালের সামনে তিনি এসব কথা বলেন।
নুর বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো হামলাকারীদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তারে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওসমান হাদি দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরও অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। হাদি এখন হাসপাতালে শয্যাশায়ী। চিকিৎসকদের ভাষায় তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষের দোয়া।
তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও সরকার শুধু সান্ত্বনার বাণী দিচ্ছে। কিন্তু দোষীদের ধরতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এই বয়ান আমরা আগেও শুনেছি। শেখ হাসিনাও এমন কথা বলতেন। শুধু আশ্বাস দিয়ে জনগণকে শান্ত রাখা যাবে না।
সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে অভিযোগ করে নুর বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর একের পর এক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রামে সংসদ সদস্য প্রার্থীর গুলিবিদ্ধ হওয়া, আল রাজী কমপ্লেক্সে হামলা, স্বর্ণ ও ব্যাংক ডাকাতির মতো ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়নি। এসব ঘটনায় সরকারের কঠোর অবস্থানের অভাবই আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
তিনি অভিযোগ করেন, জুলাই আন্দোলনের মামলার আসামিরা এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীরা সহজেই জামিন পাচ্ছে, এমনকি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে তিনি আদালত ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
নুরুল হক নুর বলেন, এই হামলা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এর পেছনে একটি সংগঠিত চক্র কাজ করছে। সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র ও সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে তিনি সীমান্তে কঠোর নজরদারি ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান দরকার। জুলাই আন্দোলনের যারা রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারাই এখন সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ। অথচ যারা আন্দোলনে ছিলেন না, তারাই রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে।
নির্বাচন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে নুর বলেন, দেশে অনিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমি আহ্বান জানাই যে, ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা নয় বরং জুলাইয়ের ঐক্য রক্ষাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, হামলার সময় পুলিশ সদস্যরা কাছাকাছি থাকলেও তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা সরকারকে দিতে হবে। ওসমান হাদির ওপর আঘাত মানে জুলাইয়ের ওপর আঘাত। আজ যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে সামনে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থান নির্ধারণে বাধ্য হবে। তবে আলোচনার মাধ্যমে সংকট উত্তরণের পথ খুঁজে বের করার যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরএইচটি/এনএফ