‘বড় পদ’ পেতে পারেন মাহফুজ-আসিফ, স্বতন্ত্র নাকি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন?

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করেছেন দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দুই নেতা অংশ নিচ্ছেন। ঢাকা-১০ আসন থেকে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও মাহফুজ আলম এখনো কোনো আসনের কথা জানাননি। তবে, শেষমেশ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) ছাতার তলে আসার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা।
এনসিপি নেতাদের দাবি, গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শক্তি হিসেবে দলটি তাদের ‘ঘর’, আর সে কারণে মাহফুজ ও আসিফের সঙ্গে দলীয়ভাবে আলোচনা চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে এনসিপিতে তারা যোগদান করতে পারেন। ভবিষ্যতে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এনসিপি গণঅভ্যুত্থানের দল এবং গণঅভ্যুত্থানের শীর্ষ নেতৃত্ব হিসেবে এনসিপি তাদের (মাহফুজ-আসিফ) ঘর। আমরা আশা করি যে, এনসিপিতে তারা আসবেন। তাদের জন্য দরজা সবসময় উন্মুক্ত।
গত ১০ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপস্থিত হয়ে দুই ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগপত্র জমা দিলে প্রধান উপদেষ্টা তা গ্রহণ করেন। পরে প্রেস সচিব জানান, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দুজনের পদত্যাগ কার্যকর হবে।
পরদিন ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় তফসিল ঘোষণা করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই তফসিল ঘোষণা করেন। সেই থেকে তারা আর উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকছেন না।

ঢাকা-১০ ও লক্ষীপুর-১ আসন কাউকে মনোনয়ন দেয়নি এনসিপি
সূত্র মতে, দুই ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করার পর থেকে তারা কোন দলে যোগ দিচ্ছেন, তা নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন, তারা বিএনপিতে যোগ দেবেন, আবার কেউ বলছেন গণঅধিকার পরিষদে যোগ দেবেন। তবে তারা কেউই কোনো দলে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।
গত ১২ ডিসেম্বর আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ। এই কথা জানিয়ে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থন কাম্য।
এদিকে ঢাকা-১০ আসনে (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ) বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখন পর্যন্ত এই আসনে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি।

এনসিপি সূত্রে জানা যায়, আসন্ন সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রথম ধাপে ১২৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন ঘোষণা করেছে দলটি। প্রথম ধাপে ঢাকা-১০ আসনে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আসিফ মাহমুদ এনসিপিতে যোগ দিলে তিনি এই আসন থেকে শাপলা কলি প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।
অপরদিকে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে মাহফুজ আলম প্রার্থিতা করবেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে। যদিও প্রথম ধাপে এ আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি এনসিপি।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের এই আসনটি রামগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই উপজেলায় মাহফুজ আলমের বাড়ি। সেখান থেকে তিনি নির্বাচন করবেন বলে আগেই গণমাধ্যমে বলেছিলেন তার ভাই মাহবুব আলম।
এনসিপিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন মাহফুজ-আসিফ
সদ্য পদত্যাগ করা দুই উপদেষ্টা জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগদান করলে তারা দলটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন বলে একাধিক সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক যুগ্ম সদস্য সচিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপদেষ্টা পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা মাহফুজ ও আসিফ আমাদের দলেই ভিড়ছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তারা যোগ দিতে পারেন। এখন পর্যন্ত এটাই আশা করা যায়। তাদের বিষয়ে আলোচনাটা মূলত সিনিয়র তিন-চারজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে তারা দলে আসবেন। এরপর নির্বাচন করলে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন।

দলের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের এনসিপিতে যোগদানের বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। হয়তো তারা আসবেন।
তারা যদি এনসিপিতে যোগ দেন, তাহলে কি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবই হতে পারে। আলোচনা চলছে, একটু সময় দিন। সময়মতো সবকিছু জানিয়ে দেওয়া হবে।
এমএসআই/এমজে
