চসিক নির্বাচন নিয়ে ইসিতে বিএনপির ১৮ অভিযোগ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বরাবর ১৮টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিএনপির সিনিয়র মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে অভিযোগটি ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীরের কাছে জমা দেওয়া হয়।
পরে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় আরেকটি জালিয়াতির নির্বাচন চলছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে পুলিশি তাণ্ডব চলেছে। আমাদের কাছে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে যে, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবারই পুলিশ কমিশনারসহ বিভাগীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করেন। মিটিংয়ে কিভাবে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে পাইকারি হারে মামলা ও গ্রেপ্তার করা যায় সেবিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়াও এজেন্টদের গ্রেপ্তার ও বিএনপি নেতাকর্মীদের এলাকাছাড়া করে ভোট ডাকাতি করতে হবে সেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, সকাল থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী সেটাই শুরু হয়েছে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য যত ধরনের মেকানিজম আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও চট্টগ্রামে দায়িত্বরত নির্বাচনী কর্মকর্তারা মিলে সেই কাজটিই করছে। প্রশাসন বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারদের মতো কাজ করছে। ভোট ডাকাতিতে প্রশাসনযন্ত্র সরকারি দলকে বিজয়ী করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপির দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সহস্রাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের এলাকা ছাড়া করা হয়েছে।
বিএনপির ১৮ অভিযোগ
১. আজ সকালে ভোট শুরু হওয়ার পর সব ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা। এদের সহযোগিতা করছে পুলিশ। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা বিএনপির এজেন্টদের কোনো কেন্দ্রেই ঢুকতে দেয়নি।
২. ভোটের দিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক কেন্দ্র প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দখল করে নেয়। এরপর বাকি কেন্দ্রগুলোতেও তারা দখলের মহাউৎসবে নেমেছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আজ কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ সেকান্দর, শাহ আলম, মনোয়ারা বেগম মনি ও তার মেয়ে, হাজী মোহাম্মদ মহসিন, মোহাম্মদ ফরিদুল আলমসহ আরও শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
৩. অনেক কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টরা ঢুকতে গেলে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। গোপন কক্ষে ইভিএমে ভোট দেওয়ার সময় প্রত্যেক ভোটারের সঙ্গে একজন আওয়ামী লীগ ক্যাডার দাঁড়িয়ে থেকে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করছে।
৪. গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী-চট্টগ্রামে একজন ভোটার জানিয়েছেন তার ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। গণমাধ্যমে আরও জানা গেছে, একটি কেন্দ্রের বুথে প্রসেনজিৎ নামের নৌকা প্রতীকের এক এজেন্টকে গোপন কক্ষে গিয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে।
৫. ধানের শীষের প্রার্থী শাহাদত হোসেন বাকলিয়া টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভোট দিয়েছেন। ওই কেন্দ্রেও ধানের শীষের এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
৬. চট্টগ্রামের জামাল খানসহ অনেক কেন্দ্রে ভোটারদেরকেও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। অনেক জায়গায় হামলা করা হয়েছে।
৭. ভোটের আগের দিন রাতে বিভিন্ন স্থান থেকে কিশোর গ্যাং সদস্যদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। যা তারা নিজেরাই ফেসবুকে পোস্ট করে।
৮. ১৩ নং ওয়ার্ডের পাহাড়তলী হাসপাতাল কলোনি কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রায় ২০০ জনের সশস্ত্র একটি গ্রুপ এসে হামলা করে কেন্দ্র থেকে এজেন্টসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের বের করে দেয়। এতে ঐ কেন্দ্রের সদস্য সচিব সাবেক ছাত্রদলের সহ-সভাপতি রিফাত হোসেন শাকিলসহ ৭-৮ জন নেতাকর্মী আহত হয়।
৯. ১৪ নং লালখান বাজার ওয়ার্ডে প্রকাশ্যে লাঠিসোটা, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সব কেন্দ্র থেকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিএনপির সব এজেন্টদের বের করে দেয়। মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী মনোয়ারা বেগম মনি, কাউন্সিলর প্রার্থী শাহ আলমদেরও বের করে দিয়ে লাঞ্ছিত ও হামলা করে। এতে কাউন্সিলর প্রার্থী শাহ আলম, মনোয়ারা বেগম মনি ও মহিলা দল নেত্রী গুলজার বেগমসহ ১৫-১৬ জন নেতাকর্মী আহত হয়। এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থী মনোয়ারা বেগম মনির মেয়ের মাথা মারাত্মকভাবে জখম হয়।
১০. ১৯ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ বাকলিয়া, ১১নং ওয়ার্ড দক্ষিণ কাট্টলি, ২৫নং ওয়ার্ড রামপুর কেন্দ্রে সকাল থেকে কোনো এজেন্ট ঢুকতে দেয়নি আওয়ামী ক্যাডাররা।
১১. ২৩ নং উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের পোস্তার পাড় আসমা খাতুন কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপি কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ মহসিনসহ এজেন্টদেরকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। ঐ ওয়ার্ডের খান সাহেব বিদ্যালয় কেন্দ্রে কোনো এজেন্ট প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ভোটের আগের দিন রাত্রে খান সাহেব বিদ্যালয় কেন্দ্রের আশেপাশে অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা মহড়া দিয়েছে।
১২. ২৭নং ওয়ার্ড আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ কেন্দ্রে থেকে সকাল ৯টার দিকে বিএনপি কাউন্সিলর প্রার্থী সেকান্দরকেসহ এজেন্টদের মারধর শেষে বের করে দেওয়া হয়। এছাড়া সকাল সাড়ে ৯টায় দিকে সাফেয়া খাতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেপারী পাড়া তালেবিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা ভোটারদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে এজেন্টসহ ভোটারদের বের করে দিয়ে নিজেরাই ভোট দেয়। এরপর ওই ওয়ার্ডের সব কেন্দ্র আওয়ামী লীগ দখলে নেয়।
১৩. ২৮ নং ওয়ার্ডে বন্দর স্কুল, ইউসুফ স্কুল, দারুল হাকিম, পাঠানটুলী বালক ও বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্টদের সকাল ১০টার দিকে বের করে দেয়।
১৪. ৩৮ নং ওয়ার্ড আজিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ও সাইক্লোন সেন্টার কেন্দ্রে সকাল সোয়া ৯টার দিকে বন্দর থানার ওসি নিজে এসে কেন্দ্র কমিটির আহ্বায়কসহ সকলকে বের করে দেয়। এরপর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাকি সব কেন্দ্র থেকে প্রশাসনের সহযোগিতায় বিএনপির সব এজেন্টদেরকে বের করে দেয়।
১৫. ৩৯ নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদিয়া কেন্দ্রে বিএনপি নেতা পারুলকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুপিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মারাত্মকভাবে জখম করে।
১৬. ৪০ নং ওয়ার্ডের প্রায় সমস্ত কেন্দ্র থেকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ধানের শীষের এজেন্টদেরকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বের করে দেয়। প্রশাসনকে জানানোর পরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
১৭. ৪১ নং ওয়ার্ড চৌধুরী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলচৌধুরী পাড়া কেন্দ্রে সকাল থেকে কোন এজেন্ট ঢুকতে দেয়নি। এরপর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বাকি কেন্দ্র থেকেও প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ সব এজেন্টদের বের করে দেয়।
১৮. সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডের প্রায় সব কেন্দ্র থেকে বিএনপি প্রার্থীর সব এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়।
এসআর/ওএফ