‘কানাডায় বাংলাদেশি পণ্যের ১০০ মিলিয়ন ডলারের নতুন বাজার’

প্রচলিত পণ্যের বাইরে বাংলাদেশের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের চেয়েও বড় একটি বাজার তৈরি হয়েছে কানাডায়। বাংলাদেশ চাইলেই এই বাজারে পুরোটাই দখল করতে পারে। এর জন্যে বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারের নীতিগত সহায়তা বাড়াতে হবে। কানাডায় কর্মরত বাংলাদেশি-কানাডীয়ান অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা নতুন এই বাজারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় টরন্টোর স্থানীয় সময় বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভে’ তারা এই মতামত প্রকাশ করেন। আলোচনায় অংশ নেন আলবার্টার এডমন্টন ম্যাকইউয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রাফাত আলম, কানাডার মূলধারার বড় স্টোরগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের সরবরাহকারী শেখ সাদ আলম এবং নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা রাফি সাইয়িদ।
কানাডার লব ল, মেট্টো, নো ফ্রিল’র মতো বড় স্টোরগুলোতে বাংলাদেশি হিমায়িত এবং প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্যকে পরিচিত করতে ভূমিকা রাখা ব্যবসায়ী শেখ সাদ আলম আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, অভিবাসীর দেশ কানাডায় দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসী বাড়ছে। একইসঙ্গে মুসলিম দেশগুলো থেকেও রাজনৈতিক আশ্রয় এবং অভিবাসন নিয়ে কানাডায় আসা মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে কানাডার মূলধারার স্টোরগুলো হালাল খাদ্য এবং দক্ষিণ এশীয় প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদসামগ্রীর চাহিদার দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
তিনি বলেন, লব ল, মেট্টোর মতো স্টোরগুলো দক্ষিণ এশীয় পণ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৬/৭ গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে ওয়াল মার্ট, ডলার স্টোরগুলোও এই ধরণের পণ্যের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ফলে তৈরি পোশাক বা চামড়াজাত পণ্যের বাইরে অপ্রচলিত পণ্যের বিশাল একটি বাজার তৈরি হয়েছে।
শেখ সাদ আলম বলেন, তিনি এখন কানাডার মূলধারার স্টোরগুলোতে এই ধরণের পণ্য সরবরাহ করছেন। কিন্তু চাহিদা মতো পণ্যের যোগান দিতে হলে আরও মানুষের সম্পৃক্ত হওয়া দরকার। তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে কেবল বাংলাদেশি হিমায়িত এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রীরই এক বিলিয়ন ডলারের একটি বাজার তৈরি করা সম্ভব।
অর্থনীতিবিদ ড. রাফাত আলম বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এথনিক ডায়াস্পোরার হাত ধরে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পণ্যের বাজার তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোও বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপর ভিত্তি করেই তাদের পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করেছে।
তিনি বলেন, কানাডার জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশই ভিজিবল মাইনরিটি। প্রক্রিয়াজাত বা হিমায়িত খাদ্যসামগ্রী তাদের প্রায় সবারই পছন্দের শীর্ষে। কানাডায় বাংলাদেশি অপ্রচলিত পণ্যের বাজার তৈরি হলে প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও এখান থেকে পণ্য যাবে।
অর্থনীতিবিদ ড. রাফাত আলম আরও বলেন, কানাডার বাজারে পণ্য নিয়ে ঢুকতে হলে অবশ্যই গুণগত মান, প্যাকেজিং এগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। কানাডীয়ানরা এই ব্যাপারে খুবই সতর্ক। কানাডায় বাংলাদেশের অপ্রচলিত পণ্যের বিশাল সম্ভাবনাকে স্বীকার করে ড. রাফাত আলম এ ব্যাপারে সরকারকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সরকারি উদ্যোগ থাকলে কানাডার সরকার, নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ী সবাই আস্থা পাবে।
অর্থনীতিবিদ রাফাত আলম বলেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই কানাডার বাজার দখলের জন্য প্রয়োজনীয় সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেয়া দরকার।
তরুণ উদ্যোক্তা রাফি সাইয়িদ বলেন, কানাডায় বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পাশাপাশি তরুণরাও বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন। কানাডার মূলধারায় বাংলাদেশি পণ্যকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তরুণ এই উদ্যোক্তা বলেন, গুণগত মান ও উৎকর্ষতা নিশ্চিত করেই আমরা কানাডার বাজারে বিভিন্ন ধরণের পণ্য সরবরাহ করছি। ফলে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশি পণ্যসামগ্রীর ব্যাপারে কানাডীয়ানদের আগ্রহ বাড়ছে।
শওগাত আলী সাগর বলেন, কানাডার বাইরে আমেরিকা, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্নদেশ- যেখানেই বাংলাদেশিদের বসবাস, সেখানেই এই ধরনের অপ্রচলিত পণ্যের বাজার বিস্তৃতি পেতে পারে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকসহ বড় ধরনের পণ্য বরাবরই সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছে। এখন অপ্রচলিত ভোগ্যপণ্যের দিকেও নজর দেয়া দরকার। এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
টিএম/এনএফ