পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে জটিলতা নিরসন প্রবাসীদের সম্মিলিত অর্জন

ব্রিটিশ বাংলাদেশি নাগরিকদের দীর্ঘ হয়রানির পর প্রবাসীদের দাবির মুখে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের প্রথিতযশা আইনজীবী ও লন্ডনের নিউহ্যাম বারার টানা তিনবারের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার নাজির আহমদ।
সম্প্রতি পূর্ব লন্ডনে তরুণ আইনজীবী আমিন চৌধুরীর পরিচালনায় লন্ডন স্কুল অব কমার্স অ্যান্ড আইটির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান।
লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ব্যারিস্টার নাজির আহমদ ও সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান। অতিথিদের মধ্য থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা কেএম আবু তাহের চৌধুরী, ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, নাসরুল্লাহ খান জুনায়েদ ও ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে নাজির আহমদ বলেন, দাবি আদায়ে সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে কড়া নাড়তে হয়। আর্টিকোলেট ওয়েতে দাবি তুলে ধরতে হয়। আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি এবং স্মার্টলি সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি তাহলে আমাদের সব দাবি এক এক করে পূরণ করতে পারব ইনশাআল্লাহ। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংক্রান্ত আমাদের দাবি পূরণ আমাদের প্রবাসীদের সম্মিলিত অর্জন। এ বিজয় ও আনন্দ আমাদের সবার। এতে দেড় কোটি প্রবাসী লাভবান হবেন।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকার, বিশেষ করে আইন ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও তার টিমকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বিশাল প্রবাসীদের স্বার্থে এ দাবি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন বলে জানান ব্যারিস্টার নাজির আহমদ।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি ও সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানসহ আমরা কয়েকজন প্রফেশনাল লন্ডনে বেশ কয়েকটি সেমিনার ও রাউন্ড টেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করি। এগুলোতে আমরা প্রবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট ছয় দফা দাবি উত্থাপন করি। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সংক্রান্ত জটিলতার অবসান। গত বছর আগস্টে আমরা একই সময়ে ঢাকায় ছিলাম। এবারও একসঙ্গে ঢাকায় ছিলাম। প্রতিবারই জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দাবিগুলো আমরা জোরালোভাবে তুলে ধরি, যা জাতীয় পত্রিকাগুলো গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে। কোনোকিছুতেই কাজ হচ্ছিল না।
জটিলতা নিরসনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে ব্যারিস্টার নাজির বলেন, এবার পৌনে দুই মাস বাংলাদেশ সফর করলাম। সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানও মাসখানেক দেশে ছিলেন। সফরের শেষ পর্যায়ে আমরা ভাবলাম সর্বশেষ একবার চেষ্টা করে দেখি। কেবল এই উদ্দেশ্যে আমি ও সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের সাথে সাক্ষাৎ করি। সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট। তারাও আমাদের দাবির প্রতি পরোক্ষভাবে সায় দিয়েছিলেন। আমরা বিনীতভাবে আমাদের দাবির যৌক্তিকতা আইন উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরি। এরপর বরফ গলা শুরু হয়। তিনি আশ্বাস দেন এটির সমাধান করবেন। আমরা কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম যে আশ্বাস কি আশ্বাসের মধ্যেই থাকবে। পরে সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান লন্ডনে চলে আসেন এবং আমি সিলেট যাই। কয়েকদিন পর হংকং হয়ে লন্ডন ফিরি ২১ জানুয়ারি। লন্ডন হিথ্রোতে ল্যান্ড করার পর মোবাইল অন করার সঙ্গে সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারির ম্যাসেজ পেলাম। পরের দিন তার সঙ্গে কথা বললাম। তিনি জানালেন ড. আসিফ নজরুল স্যার খুব জোর দিয়ে বলেছেন আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনারা কি চান তার একটা খসড়া নিয়ে আসতে।
অন্যদিকে আইন উপদেষ্টার পিএস সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে ফোন করে তাগাদা দিয়েছেন। এগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা কি চাই তার একটি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয় খসড়া প্রেরণ করি ২৪ জানুয়ারি। এর কয়েকদিন পর ৩০ জানুয়ারি সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে মিশনগুলোতে সার্কুলার পাঠানোর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের প্রবাসীদের দাবি সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়।
পরিবর্তিত নিয়ম ব্যাখ্যা করে ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দানের ক্ষেত্রে পুরোনো নিয়মে বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্টের পরিবর্তে নিম্নোক্ত ডকুমেন্টগুলোর যেকোনো একটি ডকুমেন্ট দিলে চলবে– বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট; মেয়াদোত্তীর্ণ হাতে লেখা বাংলাদেশি পাসপোর্ট/এমআরপি পাসপোর্ট; বিদেশি পাসপোর্টে নো ভিসা রিকোয়ার্ড স্টিকার; জাতীয় পরিচয়পত্র; জন্ম সনদ; শিক্ষা সনদ; বাংলাদেশি জাতীয়তা জ্ঞাত হওয়া যায় এমন অন্য যেকোনো সরকারি দলিল।
বিভিন্ন সময় এ নিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে যারা কাজ করেছেন ও সোচ্চার ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। এর মধ্যে ব্যারিস্টার নাজির আহমদ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন– সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলী, জজ নজরুল খসরু ও বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা কেএম আবু তাহের চৌধুরী।
এসএসএইচ