হতে চেয়েছিলেন জজ, হয়েছেন জনগণের সেবক

আমি যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে যোগদান করি সেসময় সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) ছিলেন শরীফ হেলালী। সুবর্ণচর আসার আগে ঢাকায় থাকা অবস্থায়ই একদিন তিনি আমাকে ফোন দেন। ফোনে একটি সুসংবাদ শুনি। সেটা হচ্ছে, এসিল্যান্ড সাহেব প্রশিক্ষণে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র তিনি, প্রথম হবেন এটাই স্বাভাবিক। এরপর তার সঙ্গে কাজ করা শুরু। ভূমি অফিসের সেবায় তিনি দ্রুততা এনেছেন, উপজেলা ভূমি অফিস প্রাঙ্গণকে নান্দনিকভাবে সাজিয়েছেন। অত্যন্ত সৎ, দক্ষ, সাহসী এবং নিবেদিতপ্রাণ কর্মকর্তা হিসেবে তাকে পেয়েছি। দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বৃহত্তর উপজেলা হাটহাজারীতে কর্মরত আছেন। প্রশিক্ষণে প্রথম হওয়ার সুবাদে সরকারের অর্থায়নে ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
এভাবেই উপজেলা অফিসের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে হাটহাজারীর সহকারী কমিশনার শরীফ হেলালীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন সুবর্ণচরের ইউএনও ইবনুল হাসান। শরীফ হেলালী শেরপুর জেলায় সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এক বছর তিন মাস সেখানে দায়িত্ব পালন করেন।
পরে বদলি হন কুষ্টিয়ায়, সেখানে ব্যাপক জনবান্ধব কাজ করে আলোচনায় আসেন তরুণ এই কর্মবীর। কুষ্টিয়ায় দেড় বছর দায়িত্ব পালন করেন শরীফ হেলালী। এর পর যোগ দেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। সবকিছু ছাপিয়ে সুবর্ণচরে তার গণমুখী কাজগুলো মানুষের মুখে মুখে। সেখানে সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য সুবর্ণছায়া নির্মাণ করেন। শরীফ হেলালীর কর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন ইউএনও ইবনুল হাসান।

উপজেলা ভূমি অফিসকে একটি জনবান্ধব ও সেবামুখী অফিস হিসেবে রূপান্তর করার জন্য অনেকগুলো সংস্কারমূলক কাজ করেছেন।
গতবছরের প্রথম দিকে নজরকাড়া পারফরম্যান্সের কারণে সরকারিভাবে ইন্দোনেশিয়ায় ট্রেনিং ও শিক্ষা সফরে যান শরীফ হেলালী। ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিরে ২০২০ সালের ৪ মার্চ যোগ দেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। হাটহাজারীকে মডেল উপজেলায় রূপান্তর করতে নানামুখী উদ্যোগ হাতে নেন তিনি।
জর্জ-ব্যারিস্টার হতে চাওয়া ছেলেটি ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় শক্ত হাতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, করোনা প্রতিরোধে মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, ই-নামজারি বেগবান করা, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানে উৎসাহী করাসহ নানা উদ্যোগ নিয়ে সেবাপ্রত্যাশীদের মণিকোঠায় অবস্থান করছেন।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে হাটহাজারী উপজেলাবাসীর পাশে থেকে লড়াই করে যাচ্ছেন এই যোদ্ধা। মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, অনিয়ম রোধে ছুটছেন হাটহাজারীর আনাচে কানাছে। ভূমি অফিসে বসে মানুষের সমস্যার কথা শুনে শুধু ক্ষান্ত হন না, দ্রুত সমাধান দিচ্ছেন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গেই। পরিকল্পনা করে সমস্যা সমাধানে নিচ্ছেন নানা পদক্ষেপ। তার এই কর্মকাণ্ডে খুশি উপজেলাবাসী। অনেকেই তার কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করছেন। তৃণমূল প্রশাসনে এই কর্মকর্তা সরকারের সুফল বিলিয়ে দিচ্ছেন।
এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের শরীফ হেলালী বলেন, চাকরি জীবনের শুরু থেকে আমার চেষ্টা ছিল আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করার। আমি সব সময় চেষ্টা করি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সর্বোচ্চ আন্তরিকতার মাধ্যমে কাজ করতে। এই এলাকায় আসার পর সেবাপ্রত্যাশীদের হয়রানি ছাড়া সহজে ও দ্রুতগতিতে সেবা দিতে অফিস ব্যবস্থাপনা যুগোপযোগী ও জনবান্ধব কিছু পরিবর্তন আনতে চেষ্টা চালাই। স্বচ্ছ সেবা দিতে সহকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করি, অফিসকে দালালমুক্ত রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। হাটহাজারীতে ভেজালবিরোধী নানা অভিযান পরিচালনা করেছি।

শরীফ হেলালী কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ভাউপুর গ্রামের ইসহাক মিয়া ও সালমা আকতারের ছেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে প্রশাসন ক্যাডারে ৩৪তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। ব্যক্তিজীবন তিনি এক ছেলের জনক। তার স্ত্রী গৃহিণী।
এসএসএইচ