জাস্ট হেল্প ফাউন্ডেশন ইউকের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

চ্যারিটি সংগঠন জাস্ট হেল্প ফাউন্ডেশন ইউকের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্বন্ধে অবহিত করতে গত বুধবার পূর্ব লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের শুরুতে ১৬তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে চেয়ারম্যান সাংবাদিক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, জাস্ট হেল্প ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে।
এ ফাউন্ডেশন চ্যারিটি রেজিস্ট্রেশন পায় ২০০৭ সালের মার্চ মাসে। একই বছর সংগঠনের পক্ষ থেকে সিলেট শহরের মিরাবাজারের আগপাড়া জামে মসজিদের জন্য লাখ টাকা অনুদান সংগ্রহ করে দেওয়া হয়।
সিলেটের গোয়াইনঘাটে প্রতিষ্ঠিত চক্ষু হাসপাতালের জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ক্রয় এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।
তিনি জানান, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে সিডরে আক্রান্ত মানুষদের জন্য ফাউন্ডেশন খাদ্য, নগদ অর্থ সাহায্য ও বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল প্রদান করে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর সহযোগিতায়।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আমাদের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে ছিল অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ, ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু শিহাব শাহরিয়ার ও কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হাফেজ ইকবালের চিকিৎসা তহবিল সংগ্রহ, সিলেট জল্লারপাড় মসজিদ ও বোরহানউদ্দিন মাদরাসার জন্য তহবিল হস্তান্তর।
চেয়ারম্যানে জানান, চলমান সাহায্য হিসেবে দরিদ্র ছাত্রদের আর্থিক অনুদান, বিধবাদের সেলাই মেশিন ও অসহায় পুরুষদের রিকশা প্রদান, রমজান মাসে খাবার ও শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ২০২০ সালে সাংবাদিক ইকবাল মনসুরের চিকিৎসা সহযোগিতায় ফাউন্ডেশন সহায়তা করে।
চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০১২ সালে আমরা সিলেট শহর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার অদূরে শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর এলাকা গোয়াইনঘাটে নিজস্ব ভূমি কিনি। সেখানে নিজস্ব ভবনে একটি চক্ষু হাসপাতাল স্থাপনের জন্য তহবিল সংগ্রহ শুরু করা হয়।
২০১৩ সালে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কাজ শুরু করা হয়। ২০১৪ সালে হাসপাতালের প্রথম তলা ও ২০১৬ সালে দ্বিতীয় তলা নির্মাণ সম্পন্ন হয়। ২০১৭ সালের শুরুতে নিজস্ব ভবন থেকেই বিনামূল্যে সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা ও স্বনামধন্য বার্ড হাসপাতালের সহযোগিতায় চক্ষু শিবিরের কার্যক্রম শুরু করা হয়।
২০১৭ সালে টেইমসাইড রোটারি ও গ্লোবাল সলিউশনের চারজন ডেলিগেট হাসপাতাল ও কার্যক্রম পরিদর্শন করে অত্যন্ত খুশি হন। তাদের সাহায্যে ২০১৯ সালে উত্তর আমেরিকার রোটারি গ্লোবাল গ্র্যান্টের জন্য আবেদন করা হয়। চারটি ধাপে পর্যালোচনার মাধ্যমে অবশেষে ২০২১ সালে ১৪৩ হাজার ডলার হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ক্রয়, স্থাপনা ও প্রশিক্ষণ বাবদ পেতে সমর্থ হয় হাসপাতালটি।
বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী হাসপাতালের নামকরণ করা হয় ‘জাস্ট হেল্প সিলেট প্রাইড রোটারি আই হসপিটাল’। বর্তমানে হাসপাতলে তিন দিন সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা ও দুই তিন মাস অন্তর অন্তর চক্ষু শিবির কার্যক্রম চালু আছে। ২০১৭ সাল থেকে প্রায় ছয় বছরে আনুমানিক ছয় হাজারের বেশি রোগীর স্বাস্থ্যসেবা ও ১ হাজার ৫৬০ জনের অন্ধত্ব দূরীকরণে সমর্থ হয়েছি- যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের দানের শতভাগ সেবা কার্যক্রমে ব্যয় হয়। কারণ ট্রাস্টিরা যাতায়াত, প্রশাসনিক খরচ, লিফলেট বা অন্যান্য খরচ দানের অর্থ থেকে ব্যয় না করে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ব্যয় করেন।
হাসপাতালের নিজস্ব ভবন ও যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের বেতন এবং প্রতিদিনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আসছে ৯ রমজানে ‘চ্যানেল এস’ টেলিভিশনে একটি চ্যারিটি আপিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষ আমাদের এ আপিলে সাড়া দেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন শেখ সুরত মিয়া আসাব, মোহাম্মদ আজাদ, তাজ চৌধুরী, শেখ শামসুল আলম, আবু সায়িদ চৌধুরী সাদি, সৈয়দ নাহাস পাশা, উদয় শংকর দাশ, মুসলেহ উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ জুবায়ের প্রমুখ।
আরএইচ