বিসমিল্লাহর বরকত ও তাৎপর্য

পবিত্র কোরআন শুরু করা হয়েছে বিসমিল্লাহর মাধ্যমে। শ্রেষ্ঠতম ইবাদত নামাজের প্রত্যেক রাকাত শুরু হয় বিসমিল্লাহ দিয়ে। শ্রেষ্ঠতম স্থান মসজিদে প্রবেশ করতে হয় বিসমিল্লাহ পড়ে।
‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ একটি পবিত্র আয়াত, পবিত্র তাসবিহ এবং পবিত্র দোয়া। বিসমিল্লাহর ভেতর মহান আল্লাহর সত্তাগত নামসহ তিনটি নামের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সত্তাগত নাম ‘আল্লাহ’, গুণবাচক নামসমূহের অন্যতম নাম ‘রহমান’ ও ‘রহিম’। এ কারণে এর তাৎপর্য অনেক। রাব্বুল আলামিন এতে অসীম বরকত ও প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন। এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- ‘পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।’
রাসুল (সা.) বলেছেন, 'জিবরাঈল (আ.) যখনই আমার কাছে অহি নিয়ে আসতেন, তিনি বিসমিল্লাহ পড়তেন'- (দারে কুতনি)। কোরআনের একটি সুরা ছাড়া সব সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহ রয়েছে। হাদিসের কিতাবগুলো শুরু করা হয়েছে বিসমিল্লাহ দিয়ে।
রাসুল (সা.) সমকালীন সব রাজা বাদশাহর কাছে চিঠি লিখেছেন বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করে। এরপর হুদাইবিয়ার ঐতিহাসিক সন্ধিপত্রে রাসুল (সা.) পুরো বিসমিল্লাহ লিখতে বলেছেন। অবশ্য লেখার পর কাফেরদের আপত্তির কারণে কেবল 'বিসমিকাল্লাহুম্মা' রাখা হয়। (আহকামুল কোরআন লিল জাস্সাস, খ. ১, পৃ. ৮)
ঐতিহাসিক 'মদিনা সনদ'ও শুরু হয়েছে 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম'-এর মাধ্যমে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খ. ২ পৃ. ২২৩)
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম- এ বাক্যটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছেন, হজরত সুলায়মান (আ.)। সাবা নগরীর রানি বিলকিসের কাছে লেখা চিঠিতে তিনি এ বাক্যটি ব্যবহার করেছেন। পবিত্র কোরআনের সুরা নামলের ২৯-৩০ নম্বর আয়াতে সে চিঠির বিবরণ উল্লেখ রয়েছে।
এরপর রাসুল (সা.) ছাড়া আর কোনো নবীকেই বিসমিল্লাহর বিধান দেওয়া হয়নি। প্রাথমিক যুগে রাসুল (সা.) 'বিসমিকাল্লাহুম্মা' লিখতেন। তারপর সুরা হুদের ৪১তম আয়াতে 'বিসমিল্লাহি মাজরেহা' নাজিল হলে তিনি কেবল 'বিসমিল্লাহ' লিখতে শুরু করেন।
হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যখন বিসমিল্লাহ নাজিল হয় তখন মেঘমালা পূর্ব দিকে দৌড়াতে লাগল, সাগরগুলো উত্তাল অবস্থায় ছিল, সব প্রাণী নিস্তব্ধভাবে তা শুনছিল। শয়তানকে দূরে বিতাড়িত করা হয়েছিল। তখন আল্লাহ তায়ালা নিজ ইজ্জত ও জালালিয়াতের কসম খেয়ে বলেছিলেন- যে জিনিসের ওপর বিসমিল্লাহ পড়া হবে, সেই জিনিসে অবশ্যই বরকত দান করব।’ (তাফসিরে তাবারি : ১/৫০)
বিসমিল্লাহ পড়লে শয়তান পরাজিত হয়। সে ওই স্থানে টিকতে পারে না। তার কার্যক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যায়।
হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিসমিল্লাহ বলে তুমি তোমার দরজা বন্ধ করো। এতে শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারবে না। বিসমিল্লাহ বলে বাতি নিভিয়ে দাও। একটু কাঠখড়ি হলেও আড়াআড়িভাবে বিসমিল্লাহ বলে পাত্রের মুখ ঢেকে রাখ। বিসমিল্লাহ বলে পানির পাত্র ঢেকে রাখ।’ (বুখারি : ৩২৮০; মুসলিম : ২০১২)।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না।’ (মুসলিম : ২০১৭; আবু দাউদ : ৩৭৬৬)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাবারে শয়তানের অংশ থাকে। সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে।’ (মুসলিম : ৫৩৭৬)
এনটি