তাওয়াফের সৌন্দর্য নষ্ট হয় যেসব ভুলে

পবিত্র হজ ও ওমরাহ পালনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন তাওয়াফ। কাবা শরিফকে কেন্দ্র করে সাতবার প্রদক্ষিণের এই ইবাদতটি সঠিক নিয়মে আদায় করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অজ্ঞতা বা অতিরিক্ত আবেগের কারণে অনেক হজ ও ওমরাহযাত্রী তাওয়াফের সময় এমন কিছু কাজ করে ফেলেন, যা সুন্নতসম্মত নয়; বরং অন্যের জন্য কষ্টের কারণও হয়ে দাঁড়ায়। হজকে আরও শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য করতে তাওয়াফে প্রচলিত কিছু ভুল তুলে ধরা হলো।
হজ ও ওমরাহর প্রতিটি আমল নির্ভুলভাবে আদায়ের জন্য ইসলামী শরিয়তের দিকনির্দেশনা জানা জরুরি। তাওয়াফের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। নিচে তাওয়াফের সময় সাধারণভাবে যে ভুলগুলো দেখা যায়, তা ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো—
১. পাখির বিষ্ঠা থেকে বাঁচার অজুহাতে মোজা বা বিশেষ ধরনের জুতা পরে তাওয়াফ করা এবং নারীর স্পর্শ এড়াতে হাত ঢেকে রাখা।
২. মুখে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা, যেমন—‘আমি সাত চক্কর তাওয়াফ করার নিয়ত করছি।’
৩. হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার সময় নামাজের শুরুতে তাকবির বলার মতো করে দুই হাত তুলে ধরা।
৪. হাজরে আসওয়াদ চুমু খাওয়ার জন্য ভিড় করা কিংবা ইমামের আগেই নামাজ শেষ করে সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করা।
৫. হাজরে আসওয়াদের সামনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা, যার ফলে ভিড় বাড়ে এবং অন্যদের চলাচলে বিঘ্নতা ঘটে।
৬. মাকামে ইবরাহিমের কাছাকাছি দুই রাকাত তাওয়াফের নামাজ আদায়ে জোর দেওয়া, এতে তাওয়াফকারীদের চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
৭. তাওয়াফের সময় ডান হাত বাম হাতের ওপর রেখে হাঁটা।
৮. নির্দিষ্ট স্থান বা আমলের জন্য নির্দিষ্ট দোয়া বেঁধে নেওয়া, যেমন—
- রুকনে ইরাকি কোণে গিয়ে নির্দিষ্ট শব্দে দোয়া করা।
- মিজাবুর রহমানের নিচে দাঁড়িয়ে বিশেষ দোয়া পড়া।
- রমল করার সময় নির্দিষ্ট বাক্যে দোয়া পড়া।
- তাওয়াফের শেষ চার চক্করে নির্ধারিত শব্দে দোয়া করা।
৯. দুইটি শামি কোণ চুমু খাওয়া বা স্পর্শ করা।
১০. কাবা শরিফের দেয়াল কিংবা মাকামে ইবরাহিমে হাত বুলানো।
১১. কাবার দরজার বিপরীত পাশে দেয়াল থেকে বেরিয়ে থাকা একটি উঁচু অংশকে ‘আল-উরওয়াতুল উসকা’ মনে করে সেখানে হাত লাগিয়ে বরকত নেওয়ার চেষ্টা করা।
১২. বৃষ্টির সময় তাওয়াফ করার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এই বিশ্বাসে যে এতে সব পূর্বের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
১৩. কাবার মিজাব দিয়ে নেমে আসা বৃষ্টির পানি থেকে বরকত গ্রহণের চেষ্টা করা।
১৪. জমজমের পানি দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে দাড়ি, টাকা-পয়সা ও কাপড় ভিজিয়ে বরকত নেওয়ার প্রবণতা।
ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, তাওয়াফসহ হজ ও ওমরাহর সব আমল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী আদায় করাই সবচেয়ে নিরাপদ ও উত্তম পথ। বাড়তি আবেগ বা লোকাচার হজ ও ওমরাহর মূল সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা নষ্ট করতে পারে। তাই প্রত্যেক হজ ও ওমরাহযাত্রীর উচিত হজ ও ওমরাহর সফরে যাওয়ার আগে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং অন্য মুসল্লিদের কষ্ট না দিয়ে ইবাদত সম্পন্ন করা।
সূত্র : অ্যাবাউট ইসলাম
এনটি