মানুষের জন্য কঠিন যে ৩টি সময়
সুফইয়ান ইবনে উয়াইনাহ বলেন, তিন সময়ে মানুষ সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়। এই সময় তিনটি হলো- ১. মায়ের পেট থেকে পৃথিবী জন্ম নেওয়া নবজাতক। ২. মৃত্যুর মুহূর্ত। ৩. কিয়ামতের দিন।
>> যখন সে মায়ের পেট থেকে দুনিয়াতে প্রথম আসে। কারণ সে তাকে এক ভিন্ন পরিবেশে আবিস্কার করে।
জন্মের আগে মানব সন্তান মায়ের গর্ভে এমন এক জগতে থাকে যার সঙ্গে পৃথিবীর কোনো সম্পর্ক নেই। এরপর যখন সে জন্মগ্রহণ করে তখন সে থাকে অসহায়। বাবা-মা তাকে পরম যত্নে লালন পালন করে বড় করে তোলেন; বাবা-মায়ের সান্নিধ্য সে সবচেয়ে বেশি লাভ করে। আর তাই তাদের ওঠা-বসা, কথাবার্তা, সভ্যতা-ভদ্রতা, বিনয়, নম্রতা এসব কিছুর প্রভাব সন্তানের ওপর পরে এবং তারা এ থেকে শিক্ষা লাভ করে। একজন আদর্শ পিতা-মাতাই পারেন সমাজকে আদর্শ জাতি উপহার দিতে।
>> যখন সে মারা যায়। কারণ সে তখন এমন এক সম্প্রদায়কে দেখে যাদেরকে দেখতে সে অভ্যস্ত নয়।
মানুষের ‘রূহ কবজ’ করার প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা হলেন ‘মালাকুল মাউত’ হজরত আজরাইল আলাইহিস সালাম।তার সহযোগী বহু ফেরেশতা আছেন। মালাকুল মাউতের নির্দেশে এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ফেরেশতারা যখন তাদের মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের দশা কেমন হইবে।’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত, ২৭)।
তিনি আরো বলেন, ‘তিনিই স্বীয় বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী এবং তিনিই তোমাদের রক্ষক প্রেরণ করেন। অবশেষে যখন তোমাদের কাহারও মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন আমার প্রেরিতরা তাহার মৃত্যু ঘটায় এবং তাহারা কোন ত্রুটি করে না’ (সুরা আনয়াম: ৬১)।
হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই যখন ঈমানদারের দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে পরকালের পথে যাত্রার সময় ঘনিয়ে আসে, তখন উজ্জ্বল শুভ্র চেহারার ফেরেশতারা তাঁ কাছে নেমে আসেন। তাদের চেহারাগুলো যেন একেকটি সূর্য। তাদের সঙ্গে থাকে জান্নাতি কাফন ও জান্নাতি সুগন্ধি।তারা তার কাছে বসে পড়েন। তারপর মৃত্যুর ফেরেশতা এসে তার মাথার পাশে বসে বলেন, হে পবিত্র আত্মা! আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে এসো।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর পাত্রের মুখ থেকে গড়িয়ে পড়া ফোঁটার মতো তার আত্মা বেরিয়ে আসে। আজরাইল আলাইহিস সালাম সেই আত্মাকে বরণ করে নেন। আজরাইল আলাইহিস সালাম হাতে নেওয়া মাত্র চোখের পলকে অন্য ফেরেশতারা সেই আত্মা নিয়ে জান্নাতি কাফনে ও জান্নাতি সুগন্ধিতে রেখে দেন। তার থেকে মেশকের চেয়ে উত্তম সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে, যা (কখনো কখনো) জমিনেও অনুভূত হয়...
যখন একজন কাফেরের দুনিয়া থেকে বিদায়ের এবং পরকালের পথে যাত্রার সময় ঘনিয়ে আসে, তখন আসমান থেকে অসুন্দর কিছু ফেরেশতা নেমে আসেন। তাদের সঙ্গে থাকে হামানদিস্তা। তারা তার সামনে বসেন। তারপর মালাকুল মউত এসে তার মাথার কাছে বসেন। বলেন, হে অপবিত্র আত্মা! আল্লাহর রাগ ও অসন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে এসো। তারপর তিনি তার দেহে আঁচড়াতে শুরু করেন, যেভাবে ছুরিকে ভেজা পশমে আঁচড়ানো হয় এবং দেহ থেকে আত্মাকে উৎপাটন করে নিয়ে আসেন। (মুসনাদে আহমদ, ১৮৫৫৭)
>> হাশরের মাঠে; কারণ তখন সে নিজেকে এক ভীতিকর অবস্থায় সবার মাঝে একত্রিত হতে দেখতে পাবে।
কিয়ামতের দিন এমন এক কঠিন মুর্হূতের মধ্য দিয়ে যেতে হবে মানুষকে যা পৃথিবীর কোনো বিপদ সংকুল পরিস্থিতি দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে কিয়ামতের বিভীষিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বর্ণিত হয়েছে, ‘অতঃপর যখন (কিয়ামতের) ধ্বংস-ধ্বনি এসে পড়বে। সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাইয়ের কাছ থেকে, তার মা-বাবা,তার স্ত্রী-সন্তান থেকে, সেদিন প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে। সেদিন কিছু কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে, সহাস্য, উৎফুল্ল, আর কিছু কিছু চেহারার উপর সেদিন থাকবে মলিনতা। কালিমা সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে। (সূরা আবাসা, (৮০), আয়াত, ৩৩-৪১)
কাতাদা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, প্ৰত্যেক মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে এবং পিতা মাতা স্ত্রী এবং সন্তানদের কাছ থেকে সেদিন মুখ লুকিয়ে ফিরবে। পৃথিবীতে ভাইয়েরা একে অপরের সবথেকে বেশি সহযোগী হয়ে থাকেন, অপরকে সাহাপ্য করে থাকেন। মা-বাবাকেও এর থেকে বেশি সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবং স্বভাবগত কারণে এর থেকেও বেশি স্ত্রী এবং সন্তানদের সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। কিন্তু কিয়ামাতের দিন মানুষ এমন গভীর সম্পর্কগুলোও ভুলে যাবে, শুধু নিজেকে নিয়ে, নিজের হিসাব নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। (তাফসিরে মাযহারী, ৭ম খন্ড, ৩৬১, তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ১৪, ১৩৭, সূরা মারইয়াম, (১৯) আয়াত, ১৫)
এনটি