গিফটের জিনিস নিয়ে সন্দেহ হলে যা করবেন

গিফট, উপহার বা হাদিয়া দেওয়া ও নেওয়া উভয়ই সুন্নত। কোনো প্রকার শর্ত ছাড়া এবং স্বার্থ বিবেচনা না করে, কারও প্রতি অনুরাগী হয়ে যে দান বা উপঢৌকন প্রদান করা হয়, তা-ই হাদিয়া। এই হাদিয়া বা উপহার অত্যন্ত উচ্চপর্যায়ের সদাকাহ বা অনুদান। হাদিয়া বা উপহার দাতা ও গ্রহীতা উভয়কে সম্মানিত করে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য (কাউকে কিছু) দেয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দেওয়া থেকে বিরত থাকে; আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যে ভালোবাসে আর আল্লাহর জন্যই যে ঘৃণা করে, সে তার ঈমান পূর্ণ করল।’ (তিরমিজি, হাদিস, ২৫২১)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘পরস্পর হাদিয়া দাও, মহব্বত বৃদ্ধি পাবে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস, ৫৯৪)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘হাদিয়া দেওয়ার মাধ্যমে মহব্বত তৈরি হয় এবং ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকে।’ (বিহারুল আনওয়ার, ৭৪/১৬৬)
কেউ হাদিয়া (গিফট) দেওয়ার পর যদি কখনো এই বিষয়টির হালাল হারাম নেয় সন্দেহ তৈরি হয় তাহলে করণীয় হলো- সম্ভব হলে প্রথমে হাদিয়াদাতার উপার্জন হালাল কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা, এবং আর যেই বস্তুটি গিফট করা হয়েছে, তা হালাল কিনা- এটা নিয়ে সন্দেহ হলে সেই বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা। যদি যাচাই বাছাইয়ের পর গিফটদাতার উপার্জন বা গিফট পাওয়া বস্তুটি হালাল হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে তা ব্যবহার করা যাবে।
আর যদি এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া না যায়, তাহলে তা ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, এমন সন্দেহজনক বিষয়ের ক্ষেত্রে হজরত নুমান ইবনু বাশীর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহভাজন বিষয় বা বস্তু আছে, যে ব্যাপারে অনেক মানুষই অবগত নয় যে, এগুলো হালাল, নাকি হারাম। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় হতে বিরত থাকবে, তার দীন ও মান-মর্যাদা পুত-পবিত্র থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি সেই রাখালের মতো, যে রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার কাছাকাছি নিয়ে চরালো, তার পাল অজান্তেই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাবধান! প্রত্যেক দায়িত্বশীলেরই (প্রশাসন বা সরকারেরই) চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) আছে, আর আল্লাহ তায়ালার নিষিদ্ধ চারণভূমি হলো তার হারামগুলো। মনে রাখতে হবে, মানব দেহের ভিতরে একটি মাংসপিন্ড আছে, যা ভালো থাকলে গোটা শরীরই ভালো থাকে। আর এটি নষ্ট হয়ে গেলে বা বিকৃতি ঘটলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে যায়। সেই মাংসপিন্ডটিই হলো ’কলব’ (অন্তঃকরণ)। (বুখারী ৫২, মুসলিম ১৫৯৯, তিরমিযী ১২০৫, আবূ দাঊদ ৩৩৩০, আহমাদ ১৮৩৭৪, দারিমী ২৫৭৩, সহীহ আত তারগীব ১৭৩১)
এনটি