মানবীয় গুণ ভেবে করা প্রতিদিনের এই কাজগুলোও ইবাদত

সাধারণত নামাজ, তিলাওয়াতকেই ইবাদত মনে করি আমরা। এর বাইরে অন্যের সঙ্গে ভালো ব্যবহার, কুশল বিনিময়, কোনো গরিবকে দান করা— এসব বিশেষ মানবীয় গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম ইসলামে এসবও ইবাদতের অন্তভুর্ক্ত। কারো সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলা, গবিরকে দান করা, নিয়ম করে আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর রাখা— সবগুলোর কারণে একজন মুসলিমের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে পুরস্কার জমা হতে থাকে। একটু একটু করে জান্নাতের কাছাকাছি যেতে থাকে একজন মুসলিম।
শুধু মানবীয় গুণ ভেবে করে চলেছি এমন অনেক কাজই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইবাদত হিসেবে গণ্য। প্রতিদিনের এমন কিছু কাজের বিবরণ তুলে ধরা হলো যা আপনি নিয়মিত করেন বা করার চেষ্টা করেন, কিন্তু জানেন না এসবও আপনার ইবাদতের পাল্লা ভারী করছে। জানার পর থেকে কাজগুলো আপনার অন্তরকে প্রশান্ত করবে আশা করি।
সালাম দিয়ে কথা বলা
একজন মুসলিম হিসেবে আমরা কারো সঙ্গে দেখা হলেই সালামের মাধ্যমে কথা শুরু করি। পরিবার ও চারপাশের পরিবেশ আমাদের অন্যকে সালাম দিতে উৎসাহিত করে। হাদিসে সালাম প্রদানকে হৃদ্যতা বৃদ্ধির কারণ বলা হয়েছে।
হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়। (আবু দাউদ, হাদিস ৫১৯৭)
অন্য হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে মুসাফাহা করো, এতে তোমাদের অন্তরে বিদ্যমান প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে। একে অন্যকে হাদিয়া প্রদান করো, এতে হৃদ্যতা সৃষ্টি হবে এবং শত্রুতা ও ঘৃণা দূরীভূত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস, ৫২১২)
অন্যের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার
আমরা সবাই অন্যের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার ও সুন্দরভাবে কথা বলার চেষ্টা করি। মুসলিম-অমুসলিম সবাই অন্যের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করি। ভালো ব্যবহারকে একটি মানবীয় গুণ, একইসঙ্গে তা ইবাদত ও আমলের পাল্লা ভারী করে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে আল্লাহতায়ালা ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব লাভ করবে। ’ (সুনানে তিরমিজি)
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে তা হলো- আল্লাহতায়ালার ভয় ও সুন্দর আচরণ। আর সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে তা হলো- (মানুষের) মুখ এবং লজ্জাস্থান। ’ (সুনানে তিরমিজি)
আরও পড়ুন
দান-সদকা
চলাফেরার পথে প্রতিদিনই আমাদের কাছে অনেকে নিজেদের প্রয়োজনে সাহায্য প্রার্থনা করে। অনেক সময় দান করার ইচ্ছা না থাকলেও অসহায়ের আকুতি দেখে আমরা দান করি। এই বিষয়টি জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘হে লোক সকল! তোমরা সালাম প্রচার করো, (ক্ষুধার্তকে) খাবার দান করো, আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখ এবং লোকে যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা নামাজ পড়ো। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস, ২৪৮৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস, ১৩৩৪-৩২৫১; দারেমি, হাদিস, ১৪৬০)
আত্মীয় স্বজনের খোঁজ খবর
আমরা নিয়মিতই আমাদের আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খরব রাখার চেষ্টা করি। সময় নিয়ে ফোন দিয়ে কুশল বিনিময় করি।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা নিজ বংশ সম্পর্কে ততটুকুই জানবে যাতে তোমরা আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করতে পারো। কারণ, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলে আত্মীয়-স্বজনদের ভালোবাসা পাওয়া যায় এবং ধন-সম্পদ ও বয়স বেড়ে যায়। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৯)
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৩৮)
মৃত আত্মীয়ের রুহের মাগফিরাত কামনা
মৃত আত্মীয় স্বজনের প্রতি সবারই মায়া থাকে। তাদের স্মরণ করে তাদের স্মৃতিচারণ করি। স্মৃতিচারণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করতে পারি। এর ফলে তাদের পরকালের জীবনে কিছুটা প্রশান্তি মিলবে। কারণ, মানুষ মরে যাওয়ার পর পৃথিবীর কোনো স্মৃতিচারণ বা কল্যাণ কামনা তাদের উপকারে আসে না। শুধুমাত্র আত্মীয়-স্বজনের পাঠানো নেক আমলই তাদের কাজে আসে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল (জারি থাকে)।
(প্রথম) সদকায়ে জারিয়া (চলমান সদকা); (দ্বিতীয়) ওই ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; (তৃতীয়) নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩৬৫১)