বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ যেমন কাটলো

চলছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শূরায়ে নেজামের অধীনে পরিচালিত বিশ্ব ইজতেমার প্রথমধাপ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। আজ সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপ। এতে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের তাবলিগ অনুসারীরা। এর আগের ধাপে অংশ নিয়েছিলেন ৪১ জেলার তাবলিগের সাথী। চলুন দেখে নেওয়া যাক কেমন কাটলো প্রথম ধাপের বিশ্ব ইজতেমা—
তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিদের দরদভরা বয়ান
প্রথম ধাপের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছিল গত ৩১ জানুয়ারি (শুক্রবার)। তবে ইজতেমা শুরুর একদিন আগে থেকেই ময়দানে জমায়েত শুরু হয়েছিল সাথীদের। বৃহস্পতিবার থেকে সাথীদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেছেন তাবলিগের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন মুরব্বী।
মাওলানা আহমাদ লাট, ইবরাহিম দেওলা, মাওলানা জিয়াউল হক, মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের আহমাদ, মাওলানা ওমর ফারুকসহ আরও অনেকে বয়ান করেছেন। সবার কণ্ঠে ছিল দরদ। সবাইকে আল্লাহর দ্বীন ও নবীদের আনীত তরিকা সঠিকভাবে পালনে উৎসাহী করতে বয়ান করেছেন তারা।
সুষ্ঠু আয়োজন
প্রতি বছরের মতো এবারের বিশ্ব ইজেতেমার আয়োজনও ছিল সুষ্ঠু ও সুন্দর। সুচারুরূপে পালিত হয়েছে সব। তাবলিগের সাথীদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একাধিক স্থানে চেকপোস্ট, সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাদাপোশাকে মাঠ ও মাঠের আশপাশে অবস্থান নিয়েছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকে।
বিদেশি সাথীদের সন্তোষ প্রকাশ
ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শূরায়ে নেজামের অধীনে পরিচালিত বিশ্ব ইজতেমার প্রথমধাপের আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, এবারের ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন বিশ্বের ৭৬ দেশ থেকে তিন হাজারের বেশি তাবলিগের সাথী। তুরস্ক, কানাডা, জর্দান, আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান থেকে এসেছেন অনেকে। তাদের অনেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমকে ইজতেমার আয়োজন নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। অনেকেই বাংলাদেশের মানুষের আন্তরিকতার প্রশংসা করেছেন।
স্বস্তির পরিবেশ
ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শূরায়ে নেজামের অধীনে পরিচালিত বিশ্ব ইজতেমা দুইধাপে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবার স্বস্তির পরিবেশের দেখা মিলেছে পুরা মাঠজুড়ে। অন্যান্য বছর অজু-ইসতেঞ্জার জায়গা, চলাফেরার রাস্তায় ভোগান্তি দেখা যেতো। রান্নার জায়গার ক্ষেত্রে সংকটের মুখোমুখি হতে হতো। তবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা দুইধাপে হওয়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় স্বস্তির পরিবেশ দেখা গেছে। স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পেরেছেন তাবলিগ অনুসারীরা।
বৃহত্তর জুমার নামাজ
বিশ্ব ইজতেমায় প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয় দেশের সর্ববৃহৎ জুমা। এবারও শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিশ্ব ইজতেমার জুমার নামাজে অংশ নিয়েছে কয়েক লাখ মুসল্লি। জুমায় ইমামতি করেছেন তাবলিগের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বী মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের আহমাদ।
আরও পড়ুন
বিশ্ব ইজতেমায় যৌতুকবিহীন বিয়ে
প্রতিবারের মতো এবারও বিশ্ব ইজতেমায় বিয়ে হয়েছে। এবার বিনা যৌতুকে ৬৩ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে হযরত ফাতেমা (রা.) ও হযরত আলী (রা.) এর বিয়ের দেনমোহর অনুসারে এসব বিয়ে হয়।
আসর নামাজের পর ভারতের মাওলানা যোহাইরুল হাসান বিয়ে পড়ান। বিয়ের আগে খুতবা প্রদান করা হয়। এসময় বর-কনের অভিভাবক ও বররা উপস্থিতি ছিলেন। বিয়ে শেষে খেজুর বিতরণ এবং দোয়া করা হয়।
হৃদয়গ্রাহী মোনাজাত
প্রতি বছরের মতো এবারো বিশ্ব ইজতেমায় অনুষ্ঠিত হয়েছে হৃদয়গ্রাহী মোনাজাত। মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। তাবলিগের সাথী ছাড়াও এতে অংশ নিয়েছেন ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের কয়েক জেলার সাধারণ মুসলমানেরা। দোয়ায় অংশ নিতে আগের দিন রাত থেকে ময়দান ও ময়দানের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন অনেকে। দোয়ায় দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
ড্রোন দেখে আতঙ্কে আহত
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে ড্রোন আতঙ্কে মুসল্লিদের ছুটোছুটিতে প্রায় ৪১ জন আহত হয়েছেন।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত চলার সময় সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে ইজতেমা ময়দানের ২নং গেটের সামনে মোনাজাতের চিত্র ধারণ কাজে ব্যবহৃত একটি ড্রোন মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় বিকট শব্দে মুসল্লিরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। এই ছোটাছুটিতে প্রায় ৪০ জন মুসল্লি আহত হলে তাদের টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তাবলিগের ৫ অনুসারীর ইন্তেকাল
ঢাকার টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপে ৫জন মারা গেছেন। সর্বশেষ মারা যাওয়া তাবলিগের সাথীর নাম হাজী আব্দুল গফুর (৭৫)। এর আগে, প্রথম ধাপের ইজতেমায় আরো ৩ জন মারা যান। তারা হলেন ইয়াকুব আলী (৬০), আব্দুল কুদ্দুস গাজী (৬০) ও ছাবেত আলী (৭০)।