হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর দিনকে আরবিতে কী বলা হয়?

হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ৮ জিলহজ থেকে। এ দিন হাজিরা ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। রাসুল সা.-এর সুন্নতের অনুসরণের জন্য তারা এই আমলের মাধ্যমে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন।
এ দিন জোহরের আগেই—অর্থাৎ সূর্য ঢলার আগে—মিনায় পৌঁছানো মুস্তাহাব। সেখানে হাজিরা জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজআদায় করেন। এ দিন মিনায় রাত যাপন করা সুন্নত।
মিনা প্রান্তর
পবিত্র মিনা হলো মক্কা ও মুজদালিফার মাঝে অবস্থিত একটি জায়গা। এটি মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। মিনার উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে পাহাড় রয়েছে, এটি শুধুমাত্র হজের সময় বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এর এক প্রান্তে থাকে জামরাতুল আকবা (বড় শয়তান), এবং অপর প্রান্তে মুজদালিফার দিকে থাকে ওয়াদি মুহাসসার। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মিনার গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক মর্যাদা রয়েছে।
মিনায় অবস্থানকে কী বলা হয় আরবিতে?
৮ জিলহজ হজের আনুষ্ঠানিকতার দিনটিকে ইয়াওমুত তারবিয়া বলা হয়। এ দিনটিই হজের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিন। ছয়দিন ধরে চলমান থাকে হজের এই আনুষ্ঠানিকতা। এই দিন রাসূলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কেরাম মিনায় গিয়ে পানি সংগ্রহ করেছিলেন আরাফায় অবস্থানের প্রস্তুতি হিসেবে। তাই একে ইয়াওমুত তারবিয়া বলা হয়।
ইবনু কুদামা “আল-মুগনি” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, তারা এই দিনে আরাফার জন্য পানি সংগ্রহ করত বলে একে 'তরবিয়ার দিন' বলা হয়।
আরও বলা হয়, স্বপ্নে ছেলেকে কোরবানির আদেশ পাওয়ার পরদিন সকালে ইব্রাহিম (আ.) চিন্তায় পড়ে যান—এটা কি স্বপ্ন, না আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ? এই দ্বিধা ও চিন্তার কারণে একে ‘তরবিয়া’ (ভেবে দেখা) বলা হয়।
আবার অনেকে বলেন, এই দিনে হাজিরা নিজেদেরকে ইমান ও তাকওয়ার দ্বারা সঞ্জীবিত করেন, আরাফার দিন (হজের মূল রোকন) এর প্রস্তুতি হিসেবে।
তরবিয়ার দিনের ইহরাম ও আমল
তামাত্তু হাজিরা (যারা ওমরা শেষে ইহরাম থেকে মুক্ত হন) মক্কা বা আশপাশ থেকে এ দিন সকালে পুনরায় ইহরাম বাঁধেন। জাবির (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমাদের আদেশ দেন যেন মিনায় যাওয়ার সময় ইহরাম বাঁধি।
কিরান ও ইফরাদ হাজিরা যারা এখনও ইহরাম অবস্থায় আছেন, তারা আগের ইহরামেই থাকেন।
হাজিরা এ দিন গোসল করে, অন্তরে হজের নিয়ত করেন ও বলেন “লাব্বাইকা হজ্জান।”
অন্য কারো পক্ষ থেকে হজ করলে মনে মনে নিয়ত করে বলেন,
“লাব্বাইকা হজ্জান আন ফুলান/ফুলানা।” তারপর তালবিয়া পাঠ শুরু করেন, “লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক...”
মিনায় রাত যাপন ও আরাফার প্রস্তুতি
হাজির জন্য সুন্নত হলো, জোহরের আগেই মিনায় পৌঁছানো ও বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করা। ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন এবং বলতেন, “রাসূলুল্লাহ সা.ও তাই করতেন।”
এছাড়া আরেক হাদিসে জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, তরওয়ার দিনে তারা মিনায় গমন করেন, হজের নিয়ত করেন, এবং রাসূলুল্লাহ সা. সেখানে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ আদায় করেন এবং সূর্য ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
আরাফায় গমন
৯ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায়ের পর সূর্য ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করে হাজিরা মিনা থেকে আরাফার দিকে যাত্রা করেন। তারা তালবিয়া, তাকবির ও আল্লাহর জিকিরে রত থাকেন।
আনাস (রা.) বলেন, আমাদের কেউ তলবিয়া বলত, কেউ তাকবির বলত—কেউ কাউকে এতে বাধা দিত না।
সূত্র : আল জাজিরা