ছিলেন বাদশা, তবুও জীবিকা নির্বাহ করতেন নিজ উপার্জনে

একাধারে নবী, শাসক ও কর্মঠ ব্যক্তি ছিলেন হজরত দাউদ (আ.)। আল্লাহ তায়ালা তাকে যেমন নবুয়ত ও আসমানী কিতাব জাবুর দান করেছিলেন, তেমনি দিয়েছিলেন অসাধারণ কণ্ঠস্বর ও লোহা গড়ার অনন্য দক্ষতা। কোরআনে বর্ণিত তার জীবন আজও মানবজাতির জন্য এক পূর্ণাঙ্গ আদর্শ।
আল্লাহ তায়ালা নবী দাউদ (আ.)-কে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বাদশা, আবার একই সঙ্গে আল্লাহর প্রেরিত নবী। তার প্রতি অবতীর্ণ হয় পবিত্র কিতাব জাবুর।
ইতিহাসে তার নাম স্মরণীয় হয়ে আছে অসাধারণ সুমধুর কণ্ঠস্বরের জন্য। বলা হয়, তিনি যখন আল্লাহর জিকির ও দোয়া পাঠ করতেন, তখন মানুষ, পাখি এমনকি প্রকৃতিও যেন বিমোহিত হয়ে পড়ত।
এই সুরেলা কণ্ঠের প্রভাব আজও বিভিন্ন সংস্কৃতিতে টিকে আছে। তুর্কি সংস্কৃতিতে এখনো খুব সুন্দর কণ্ঠস্বরের মানুষকে বলা হয় তার কণ্ঠ ‘দাউদি’, অর্থাৎ নবী দাউদ (আ.)-এর মতো।
তবে নবী দাউদ (আ.)-এর জীবন শুধু আধ্যাত্মিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আল্লাহ তায়ালা তার নির্বাচিত নবীদের শুধু দ্বীনের জ্ঞানই দেননি, বরং বাস্তব জীবনের প্রয়োজনীয় দক্ষতাও শিক্ষা দিয়েছেন। নবী দাউদ (আ.)-কে আল্লাহ লোহা নরম করা ও তা দিয়ে বিভিন্ন বস্তু তৈরি করার জ্ঞান দান করেন।
কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, আল্লাহ দাউদ (আ.)-এর জন্য লোহাকে সহজ করে দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ধাতু শিল্পের পথিকৃৎ। তার তৈরি লোহার বর্ম ও অস্ত্র তার জাতিকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে বড় ভূমিকা রাখে।
দিনের বেলা তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন, আর রাতে নিজের হাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই আত্মমর্যাদা ও শ্রমের শিক্ষা তাকে ইসলামের ইতিহাসে অনন্য করে তুলেছে।
নবী দাউদ (আ.)-এর জীবন কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। নেতৃত্ব, ইবাদত, পরিশ্রম ও আত্মনির্ভরশীলতা সবকিছুর এক অনন্য সমন্বয় ছিল তার জীবনে। তার জীবনী শুধু ইতিহাস নয়, বরং মানবজাতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।
দিনে রাজা, রাতে কামার। নবী দাউদ (আ.)-এর এই জীবনদর্শন আজও মানুষকে শেখায়, মর্যাদা কখনো শ্রমের পরিপন্থী নয়; বরং দায়িত্ব ও পরিশ্রম একসঙ্গেই একজন মানুষকে সত্যিকারের মহান করে তোলে।
এনটি