কোরআনে বর্ণিত হজরত ঈসা (আ.)-এর ৭ মুজিজা

হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা পবিত্র কোরআনে একাধিকবার তুলে ধরা হয়েছে। কোরআনের বর্ণনায় তিনি ও তার মা মরিয়ম (আ.) মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।
মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, হজরত ঈসা (আ.) আল্লাহর প্রেরিত একজন নবী। তিনি মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিয়েছেন। কোরআনে তার জীবন ও মিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত সাতটি অলৌকিক মুজিজার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কুরআনে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের যেসব মুজিজার কথা এসেছে, সেগুলো মানব ইতিহাসে অনন্য ও বিস্ময়কর। এসব মুজিজা আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন এবং হজরত ঈসা (আ.)–এর নবুয়তের সত্যতার প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত।
অলৌকিক জন্ম
প্রথম মুজিজা হলো অলৌকিক জন্ম। পিতা ছাড়া জন্ম গ্রহণ করেন হজরত ঈসা (আ.)। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ফেরেশতারা মরিয়ম (আ.)–কে সুসংবাদ দেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ‘কালিমা’ তাকে দান করা হবে। তার নাম হবে মসিহ ঈসা ইবনে মরিয়ম। মরিয়ম (আ.) বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কোনো পুরুষ তাকে স্পর্শ করেনি, তাহলে সন্তান হবে কীভাবে? জবাবে বলা হয়, আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোনো কিছুর ফয়সালা করেন, তখন শুধু বলেন, হয়ে যাও, আর তা হয়ে যায়।
দোলনায় কথা বলা
দ্বিতীয় মুজিজা হলো দোলনায় কথা বলা। মায়ের পবিত্রতা ও সতীত্বের পক্ষে সাক্ষী দিয়েছেন নবজাতক ঈসা (আ.) নিজেই। যখন মরিয়ম (আ.) শিশুসহ নিজ সম্প্রদায়ের সামনে আসেন এবং তারা তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন তিনি শিশুর দিকে ইশারা করেন।
উপস্থিত লোকেরা বিস্ময়ে বলে, দোলনার শিশুর সঙ্গে কথা বলব কীভাবে? ঠিক তখনই শিশু ঈসা (আ.) বলেন, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, নবী বানিয়েছেন, আমাকে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন এবং আমাকে মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন।
মাটির পাখিতে প্রাণ সঞ্চার
তৃতীয় মুজিজা হলো মাটির পাখিতে প্রাণ সঞ্চার। আল্লাহর অনুমতিতে হজরত ঈসা (আ.) মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি তৈরি করে তাতে ফুঁ দেন, আর তা জীবন্ত পাখিতে পরিণত হয়।
জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান
চতুর্থ মুজিজা হিসেবে কোরআনে এসেছে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগী আরোগ্য করার ঘটনা। আল্লাহর অনুমতিতে তিনি এসব দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষকে সুস্থ করে তুলতেন।
মৃতকে জীবিত করা
পঞ্চম মুজিজা হলো মৃতকে জীবিত করা। আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমতিতে হজরত ঈসা (আ.) মৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জীবনে ফিরিয়ে আনতেন, যা তার নবুয়তের এক শক্তিশালী নিদর্শন।
গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকা
ষষ্ঠ মুজিজা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকা। তিনি মানুষকে জানিয়ে দিতেন, তারা কী খায় এবং ঘরে কী জমা করে রাখে। কুরআনে বলা হয়েছে, এতে ঈমানদারদের জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শন।
আসমানি দস্তরখান
সপ্তম মুজিজা হলো আসমানি খাবারের দস্তরখান। হজরত ঈসা (আ.)–এর শিষ্যরা আল্লাহর কাছে আসমান থেকে খাবার নাজিল করার আবেদন জানান, যাতে তাদের হৃদয় প্রশান্ত হয় এবং ঈমান আরও দৃঢ় হয়।
ঈসা (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ জানান, তিনি খাবার পাঠাবেন; তবে এরপর কেউ আল্লাহকে অবিশ্বাস করলে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।
কোরআনের এসব বর্ণনা মুসলমানদের কাছে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের মর্যাদা ও গুরুত্বকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরে এবং প্রমাণ করে, তিনি আল্লাহর একজন সম্মানিত নবী ও রাসুল।
এনটি