জেন্ডার সংবেদনশীল কন্টেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেলেন চার ক্রিয়েটর ও ইনফ্লুয়েন্সার

ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহযোগিতায় জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃক যৌথভাবে পরিচালিত ‘সমতায় তারুণ্য : ইয়ুথ ফর ইকুয়ালিটি’ প্রকল্পের উদ্যোগে বুধবার রাতে তিনজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও একজন ইনফ্লুয়েন্সরকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
ঢাকার আলোকি কনভেনশন সেন্টারে জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত ‘জেন্ডার সেনসিটিভ কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা প্রদান হয়।
‘ইমার্জিং ভয়েস অন সোশ্যাল মিডিয়া ইন জেন্ডার অ্যাডভোকেসি’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়েছেন মো. নূর এ আলম এবং এরিন আক্তার। একই বিভাগে সৃজনশীলতার জন্য বিশেষ স্বীকৃতি পান মুরশিদুল আলম ভূঁইয়া। ‘জেন্ডার সেনসেটিভ ইনফ্লুয়েন্সার অব দ্য ইয়ার’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন কারিনা কায়সার।
পুরস্কৃতরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিয়মিতভাবে ইতিবাচক জেন্ডার ন্যারেটিভ প্রচার, প্রচলিত স্টেরিওটাইপ নিয়ে আলোচনা, নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কন্টেন্ট নির্মাণ করেন।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এম এ আখের। অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট- এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক করভি রাখসান্দ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ফাইন্যান্সিয়াল এডভাইজার বার্ট এসিং, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম–সচিব কাজী মোখলেছুর রহমান, এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর (প্রোগ্রাম) মাহিন চৌধুরী।
প্রধান অতিথি জনাব এম এ আখের তরুণদের ডিজিটাল দায়িত্বশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “তরুণরাই আজকের ডিজিটাল নেতৃত্ব। তারা যদি সম্মান, সমতা ও নৈতিকতার বার্তা ছড়িয়ে দেয়, তাহলে অনলাইন পরিসর বদলে যেতে বাধ্য। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সবসময় এমন উদ্যোগকে সমর্থন করে যা তরুণদের সৃজনশীলতা ও নৈতিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করে।”
নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ফাইন্যান্সিয়াল এডভাইজার বার্ট এসিং বলেন, মিডিয়া সমাজকে গড়ে বা ভেঙে দিতে পারে। বাংলাদেশে জেন্ডার সমতা ও মানবাধিকারের পথে তরুণদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্মাননা সেই তরুণদের জন্য, যারা ইতিবাচক কণ্ঠস্বর দিয়ে ডিজিটাল ক্ষেত্রকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলছে।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর (প্রোগ্রাম) মাহিন চৌধুরী বলেন, এই পুরস্কার শুধু প্রতিভার স্বীকৃতি নয়- এটি স্টেরিওটাইপ ভাঙার আন্দোলন। আমরা চাই বাংলাদেশে প্রতিটি তরুণী এমন একটি অনলাইন পরিবেশে বেড়ে উঠুক, যা নিরাপদ, সম্মানজনক এবং বৈষম্যহীন।
নিরাপদ ডিজিটাল সমাজ গঠনে যুবদের সৃজনশীল ভূমিকা তুলে ধরে জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট- এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক করভি রাখসান্দ বলেন, একজন তরুণের হাতে থাকা একটি স্মার্টফোন সমাজে কতটা পরিবর্তন আনতে পারে, আমরা তা প্রতিনিয়ত দেখছি। যারা সাহস করে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং সমতা ও সম্মানের গল্প বলে- তারাই সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আনছে। আজকের এই সম্মাননা তাদের জন্য, যারা লাইক, শেয়ার ও ফলোয়ার অপেক্ষা নৈতিকতা বেছে নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সমাজে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠায় ডিজিটাল কনটেন্টের গুরুত্ব এবং এ ক্ষেত্রে যুব সমাজের অগ্রণী ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, তরুণ–তরুণীদের সৃজনশীল কণ্ঠস্বর অনলাইন পরিসরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার অন্যতম শক্তি।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা কনটেন্ট নির্মাতাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২৫ উপলক্ষ্যে ভৈরবী সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা একটি নাটিকা পরিবেশন করে এবং সংগীত শিল্পী সভ্যতা সংগীত পরিবেশন করেন।
চার বছর মেয়াদী ‘সমতায় তারুণ্য : ইউথ ফর ইক্যুয়ালিটি’ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের আটটি বিভাগে ১৫৬ জন উদীয়মান ডিজিটাল কন্টেন্ট নির্মাতাকে জেন্ডার–সংবেদনশীলতা, নেতৃত্ব, নৈতিক গল্প–বলা এবং দায়িত্বশীল ডিজিটাল আচরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
প্রকল্পটি বাংলাদেশের যুবদের সামাজিক পরিবর্তনের চালিকাশক্তি হিসেবে বিকশিত করতে এবং একটি ন্যায়সংগত ও নিরাপদ ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে কাজ করছে।
জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট
জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা, মানবাধিকার, যুব সমাজ উন্নয়ন, বাল্যবিবাহ নিরোধ, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধসহ, বিভিন্ন সামাজিক বিষয় নিয়ে কাজ করছে। জাগো ফাউন্ডেশন, যুব সমাজ দ্বারা পরিচালিত অলাভজনক একটি শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওযার পর থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করে আসছে। জাগো ফাউন্ডেশনের প্রধান লক্ষ্য সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের মূলধারার সাথে যুক্ত করে এই সমস্ত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা। জাগো ফাউন্ডেশন যুবকদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উন্নয়ন ও সচেতনতা নিয়েও কাজ করছে।
এমএসএ
