ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১১৫ রানে থামল বাংলাদেশের ইনিংস

শুরুটা আগের ম্যাচের পুনরাবৃত্তিরই আভাস দিচ্ছিল। ফজল হক ফারুকির করা লেগ স্টাম্পের বাইরের বল সজোরে চালালেন মুনিম শাহরিয়ার, ব্যাট-বলে সংযোগ হলো না। দায়িত্বরত আম্পায়ার ওয়াইডের সংকেত দিলেন। অতিরিক্ত খাত থেকে স্কোর সচল হলো বাংলাদেশ দলের। একইভাবে শুরু পেয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ১৫৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ দল। সে ম্যাচ জেতে ৬১ রানের ব্যবধানে।
আজ (শনিবার) সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমে আগের ম্যাচের দলীয় সংগ্রহের পুনরাবৃত্তি হলো না বাংলাদেশ দলের। আফগান বোলারদের বোলিং তোপে একেবারেই সুবিধা করতে পারেননি টাইগার ব্যাটসম্যানরা। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রানের সংগ্রহ পেয়েছে স্বাগতিকরা। এই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় এড়াতে সফরকারী আফগানদের প্রয়োজন ১১৬ রান।
চোট কাটিয়ে ফেরা মুশফিকুর রহিমকে জায়গা করে দিতে এ ম্যাচে একাদশের বাইরে রাখা হয় আগের ম্যাচে অভিষেক ক্যাপ পাওয়া ইয়াসির আলি রাব্বিকে। মুশফিকের ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ম্যাচের মাইলফলক ছোঁয়ার দিনে টিকে গেছেন ধারাবাহিকভাবে ব্যাট হাতে ব্যর্থ নাঈম শেখ। এ ম্যাচেও সুবিধা করতে পারেননি এই বাঁহাতি ওপেনার। মাত্র ৬৮ স্ট্রাইক রেটে ১৯ বল খেলে করেন মোটে ১৩ রান। রান আউটে কাটা পড়েন তিনি।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু থেকে দাপট দেখায় আফগানিস্তান। প্রথম ওভারে ব্যাট থেকে কোনো রান নিতে পারেননি মুনিম। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের খেতাব পেয়ে জাতীয় দলের টিকিট পাওয়া এই ওপেনার রানের জন্য হাপিত্যেশ করতে থাকেন, যদিও বাউন্ডারিও পেয়ে যান ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে। আগের ম্যাচের মতো এদিনও চার দিয়ে রানের খাতা খোলেন মুনিম।
মুনিমের ব্যাটিংয়ের ধরন বেশ ভালোভাবেই পড়ে ফেলেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবী। ওই চার রানেই প্যাভিলিয়নে মুনিম। আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছোটানো লিটন দাস এদিও ব্যাটিং ঝড়ের বার্তা দেন ফারুকিকে ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে মেরে। তবে সেই ইনিংসটি বড় করতে পারেননি লিটন। আজমতউল্লাহর বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ১৩ রানে। ১০ বলের ইনিংসে বাউন্ডারি ওই একটিই।
দুই উইকেট হারিয়ে পাওয়ার-প্লেতে ৩৩ রান তোলে বাংলাদেশ দল। নাঈম তখনো উইকেটে। সুযোগ পেয়ে আজও ইনিংস বড় করতে পারেননি, টেস্ট মেজাজের ব্যাটিংয়ে উল্টো দলের উপর চাপ বাড়াতে থাকেন। ইনিংসের নবম ওভারের শুরুর বলে করিম জানাতের দুর্দান্ত এক থ্রোতে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
সতীর্থ সাকিব আল হাসানের দিকে তাকালে নাঈম অবশ্য কিছুটা স্বস্তি পাবেন। ব্যাট হাতে বাঁহাতি সাকিবের ফর্মটাও পড়তির দিকে। এ ম্যাচেও ব্যর্থ সাকিব। আগের ম্যাচে ৬ বলে ৫ করে আউট হয়েছিলেন তিনি। আজ সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৯ রান। যেখানে ৬০ স্ট্রাইক রেটে ১৫ বল খরচ করলেও কোনো বাউন্ডারি নেই তার ব্যাটে। ১০ ওভারে ৪৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে মহা বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ দল।
সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চম উইকেটে দুজন গড়েন ৪৩ রানের জুটি। তাদের জুটিতেই ইনিংসের ১২তম ওভারে এসে ৩৮ বল পর বাউন্ডারির সন্ধান পায় স্বাগতিক শিবির। দলের পড়তি রান তুলতে গিয়েই বিপত্তি বাধে। ইনিংসের ১৫তম ওভারে রশিদ খানে কাটা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। ৩ চারে ১৪ বলে করেন ২১ রান।
৪৩ রানের জুটি ভাঙার পর সঙ্গীর পথ অনুসরণ করেন মুশফিকও। পরের ওভারেই সাজঘরে তিনি। ফারুকির দ্বিতীয় শিকার হন ২৫ বলে ৩০ রানে। যেখানে তার ব্যাট থেকে আসে ৪টি চারের মার। একই ওভারে শেখ মেহেদীকে ফেরান আজমতউল্লাহ। এদিন রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। আফিফও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলে বড় রানের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের।
শেষদিকে মুস্তাফিজুর রহমানের ৫ বলে ৬ এবং নাসুম আহমেদের ৯ বলে অপরাজিত ৯ বলে ৫ রানের কল্যাণে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১১৫ রানে থামল বাংলাদেশের ইনিংস। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রানের সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা। এই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় এড়াতে সফরকারী আফগানদের প্রয়োজন ১১৬ রান। আফগানদের হয়ে ফারুকি আর আজমতউল্লাহ সমান ৩টি করে উইকেট নেন।
টিআইএস/এটি/এনইউ