আর্জেন্টিনার চার ফাইনালের সাক্ষী

১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম আসরেই ফাইনাল খেলেছিল আর্জেন্টিনা। এর পরের ফাইনাল খেলতে সময় লেগেছিল ৪৮ বছর। ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচ কাভার করেছিলেন আর্জেন্টিনার সাংবাদিক জোর্জে বারাজা। ’৭৮-২০১৪ চার বার ফাইনালে উঠেছে ম্যারাডোনার দেশ। চার বারই উপস্থিত ছিলেন তিনি।
১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা ষষ্ঠ বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবে। আর্জেন্টিনার ছয় ফাইনালের মধ্যে পাঁচটিতেই প্রতিনিধিত্ব থাকবে বারাজার। তার মনের গহীনে দাগ কেটেছে সেই ’৭৮, ‘আর্জেন্টিনার প্রথম শিরোপার স্বাক্ষী ছিলাম। সেটা আমার ব্যক্তিগত ও ক্যারিয়ারের উভয়ের ক্ষেত্রে স্মরণীয়।’ আর্জেন্টিনার সেই বিশ্বকাপে এসেছিলেন তিন বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের পেলে। বারাজা পেলের সঙ্গে সেই বিশ্বকাপে সাক্ষাৎ করেন। চার দশক আগের সেই ছবি এখনো সযত্নে রেখেছেন। দোহার মেইন প্রেস সেন্টারে বেশ শিহরিত হয়েই পেলের সঙ্গে ১৯৭৮ সালে তোলা ছবি দেখালেন।

১৯৭৩ সাল থেকে সাংবাদিকতা করা বারজার প্রথম বিশ্বকাপ ছিল ১৯৭৮। ১৯৮২ সালে স্পেন বিশ্বকাপ তার কাভার করা হয়নি। ১৯৮৬-২০২২ পর্যন্ত টানা বিশ্বকাপ কাভার করে যাচ্ছেন ৬৮ বছর বয়সী এই সাংবাদিক। বিশ্বকাপের পাশাপাশি কোপা আমেরিকা ১০টি কাভারের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
’৯০ সালে জার্মানির কাছে আর্জেন্টিনার শিরোপার হারটা এখনো বেশ পোড়ায় এই আর্জেন্টাইন সাংবাদিককে। ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফাইনাল ম্যাচে ক্যানেজিয়া সহ আরো চার জন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার ছিল না। পূর্ণাঙ্গ দল থাকলে ম্যাথিউসের জার্মানিকে হারানোর সক্ষমতা ছিল আর্জেন্টিনার।’
সেই ১৯৯০ সালের পর আর্জেন্টিনাকে আবার ফাইনালে দেখেছেন ২০১৪ সালে। প্রতিবেশি দেশ ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা আবারও জার্মানির কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয়। সেই হারটির জন্য আর্জেন্টিনার ব্যর্থতাকেই বড় হিসেবে দেখছেন এই সাংবাদিক, ‘ঐ ম্যাচে আর্জেন্টিনা অসংখ্য গোলের সুযোগ পেয়েছিল। ফাইনাল ম্যাচে সুযোগ খুব কম আসবে। সেই সুযোগ যদি কাজে লাগানো না যায় তাহলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব নয়।’
মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা ষষ্ঠ বারের মতো বিশ্ব সেরা হওয়ার দোড়গোড়ায়। এবার আর্জেন্টিনাকে নিয়ে অনেক আশাবাদ তার, ‘এই দলটি অত্যন্ত গোছালো ও সুন্দর ফুটবল খেলছে। মেসির মতো তার সতীর্থরাও দারুণ আত্নবিশ্বাসী। চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব এই দলের। ’৮৬ সালের ম্যারাডোনার দলের মতোই লাগছে মেসির এই দলকে।’
ম্যারাডোনা ও মেসি দুই জনকেই কাছ থেকে দেখেছেন এই বর্ষীয়ান সাংবাদিক। মেসি না ম্যারাডোনা কে সেরা? সারা বিশ্বে আলোচিত বিষয়। তার দৃষ্টিতে মেসিই এগিয়ে, ‘আমার কাছে মেসি সেরা। তবে ম্যারাডোনার সঙ্গে তুলনা করব না।’
আর্জেন্টিনা ১৯৭৮ ও ’৮৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে । দুই বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়েই খানিকটা তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা স্বাগতিক হিসেবে ফিক্সচারে প্রভাব খাটানোর এবং ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার হ্যান্ড অফ গড ইস্যু এখনো সমালোচনার খোরাক জোগায়। এই দুই বিষয়ে তার অভিমত, ‘৭৮ সালে আমার প্রথম বিশ্বকাপ। প্রতিটি ঘটনা মনে আছে। আর্জেন্টিনা বিশেষ কোনো সুবিধা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। মাঠে তারা সেরাটাই খেলেছে। '৮৬ সালে ম্যারাডোনার গোলটি হাতেই হয়েছে এটা সত্য।’
এজেড/এনইআর
