৬ মাস পর বাফুফে সভা, ভোটার বাড়ানোর পাঁয়তারা!
২০২০ সালের ৩ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন হয়েছিল। চার বছর মেয়াদী কমিটির আর বৈধতা রয়েছে মাত্র মাস পাঁচেক। তাই এখনই ভোটের হিসাব-নিকেশ শুরু হয়েছে।
বাফুফের ২১ সদস্যের কমিটি নির্বাচিত হন ১৩৯ কাউন্সিলরের (ভোটার) ভোটে। বাফুফে বর্তমান নির্বাহী কমিটি কাউন্সিলর সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে হাঁটছে। আগামী পরশু দিন নির্বাহী সভায় নারী ফুটবল লিগে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলো ও খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির কাউন্সিলরশিপের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি হিসেবে রয়েছে।
ছয় মাস পর আগামী পরশু দিন বাফুফে নির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হবে। গতানুগতিক বিষয় ছাড়া এই সভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বার্ষিক সাধারণ সভার দিনক্ষণ। নির্বাহী কমিটির সভায় নতুন সংস্থা/প্রতিষ্ঠানদের কাউন্সিলরশিপ প্রদানে সম্মত হলে বিষয়টি এজিএমে উঠবে। এজিএমে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতে পাশ হলেই আগামী নির্বাচনে নতুন সংস্থাগুলো ভোটাধিকার পাবে।
নির্বাচনের আগে ভোটাধিকার বৃদ্ধির প্রস্তাবনা মানেই কোনো না কোনো পক্ষের সুবিধা। ফুটবল ফেডারেশনের একাংশের ধারণা, নারী ফুটবলে অংশ নেয়া ক্লাবগুলো ফেডারেশনের প্রভাবশালী সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণের অনেকটা আজ্ঞাবহ। এই ক্লাবগুলো ভোটাধিকার পেলে সেটা বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের জন্যও অনেকটাই নিশ্চিত ভোট। নির্বাচনে একটি ভোটই যেখানে গুরুত্বপূর্ণ সেখানে কয়েকটি ভোট নিশ্চিত হওয়া মানে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া।
আজ নারী ফুটবল কমিটির সভা শেষে বাফুফে সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণ নারী লিগের কাউন্সিলরশিপ প্রদানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, 'নারী ফুটবলে ক্লাবগুলোর অবদান রয়েছে। তারা সেই অবদানের প্রেক্ষিতে স্বীকৃতি চায়। কাউন্সিলরশিপ থাকলে অনেকে দল গঠনে আগ্রহী হবে। আমরা নারী ফুটবল কমিটি থেকে বিষয়টি নির্বাহী কমিটিতে পাঠাব। নির্বাহী কমিটিতে পাশ হলে এরপর এজিএমে উঠব।’
গত চার বছরের মধ্যে তিন বার নারী লিগ হয়েছে। বাফুফে এই মেয়াদে এজিএমও করেছে। এত দিন কাউন্সিলরশিপ না চেয়ে নির্বাচনের মাস পাঁচেক আগে কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে কিরণ বলেন, 'দাবিটি ক্লাবগুলোর পক্ষ থেকে এসেছে। তারা এখন দাবি করেছে।’ আজ নারী ফুটবল কমিটি কাউন্সিলরশিপ নিয়ে সভা করলেও ২৫ এপ্রিল সাধারণ সম্পাদকের নির্বাহী সভার চিঠিতে আলোচ্যসূচি হিসেবে এটি স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। ফলে এর মাধ্যমেই স্পষ্ট ফেডারেশনের নীতি-নির্ধারকদের উদ্দেশ্য।
নারী ফুটবল লিগে দুই-একটি ক্লাব বাদে বাকি ক্লাবগুলো একেবারেই যাচ্ছেতাই মানের। এদের নেই তেমন কোনো অস্তিত্ব-কাঠামো। বছরে মাত্র সাত-আটটা ম্যাচ খেলেই ফেডারেশনে তাদের ভোটাধিকার নিয়ে আপত্তি রয়েছে ফেডারেশনেরই অনেকের। কারো মতে, নারী ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়ন-রানার্স আপের বাইরে অন্য দলকে কাউন্সিলরশিপ প্রদানের যৌক্তিকতা নেই। আবার অনেকের দাবি, নারী লিগের ক্লাবগুলো কাউন্সিলরশিপ পেলে পাইওনিয়ারেও ক্লাবের পাওয়া উচিত কারণ তারা বছরের পর বছর অংশ নেয় শুধু ফুটবলের স্বার্থেই বিনিময়ে কোনো প্রতিদান নেই।
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বছর দু’য়েক আগে বলেছিলেন, 'ফিফা বাফুফের এত কাউন্সিলরশিপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।' কাউন্সিলরশিপ কমানো এবং নির্বাহী কমিটির আকার ছোট করার বিষয় আলোচনাও হয়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য কমিটি গঠন হলেও কার্যকর কোনো কিছু দৃশ্যমান হয়নি। কাউন্সিলরশিপ কমানোর আওয়াজ তোলারাই এখন আবার নির্বাচনের আগে ভোটার বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করছে।
বাফুফের নির্বাচনে সকল জেলা-বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশন, প্রিমিয়ার, বিসিএল, প্রথম বিভাগের সকল ক্লাব, দ্বিতীয় বিভাগের শীর্ষ দশটি ও তৃতীয় বিভাগের শীর্ষ আটটি ক্লাব (সর্বশেষ লিগের) ভোটাধিকার পায়। এদের সঙ্গে রেফারিজ এসোসিয়েশন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ড, কোচেস এসোসিয়েশন, মহিলা ক্রীড়া সংস্থারও ভোটাধিকার রয়েছে।
দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্রীড়া সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে প্রিমিয়ারের পাশাপাশি প্রথম বিভাগ নারী লিগও হয়। ক্রিকেট বোর্ডে নারী লিগে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর জন্য কাউন্সিলরশিপ নেই। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও আকর্ষণীয় আসর বিপিএলে অংশগ্রহণকারী ফ্রাঞ্চাইজিদের নেই ক্রিকেট বোর্ডে কোনো ভোটাধিকার।
এজেড/এইচজেএস