কাকের গায়ে ঢিল ছুড়ে টেনিসে আসা সুমাইয়া জাতীয় চ্যাম্পিয়ন

২০১০ সালের জানুয়ারিতে জন্ম। বয়স মাত্র ১৪ পেরিয়েছে। ঝালকাঠির সুমাইয়া দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় টেনিসের মহিলা এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। আজ (শুক্রবার) রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে বিকেএসপির সুবর্ণাকে ৬-০, ৬-৪ গেমে হারিয়েছেন তিনি।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সুমাইয়া রমনা টেনিস কোর্টে নিজের টেনিসে আসার গল্প বললেন এভাবে, ‘২০১৯ সালে ঝালকাঠিতে কাকের গায়ে ঢিল ছুড়ি। এতে ওই কাকের অবস্থা বেশ মুমূর্ষু হয়ে পড়ে। এটা দেখে জাহাঙ্গীর স্যার (ঝালকাঠির টেনিস সংগঠক) আমাকে টেনিসে উদ্বুদ্ধ করেন।’ ঝালকাঠির টেনিস সংগঠক জাহাঙ্গীর হোসেন বাবুলও আজ এসেছিলেন শিষ্যের খেলা দেখতে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাবুল সুমাইয়াকে নিয়ে বলেন, ‘ওকে আমিই টেনিসে এনেছি। ওর হাতের নিশানা ও শক্তি দেখে বুঝেছিলাম টেনিসে ভালো করবে।’
ঝালকাঠিতে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম সুমাইয়ার। বাবা-মা ও দুই ভাই-বোনের ছোট পরিবার। সুমাইয়ার বাবা ঝালকাঠির একটি হোটেলে কাজ করেন। সেই পরিবার থেকে টেনিসের মতো ব্যয়বহুল খেলায় আসার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। সেই বন্ধুর পথ সুগম হয়েছে জাহাঙ্গীরের কারণেই, ‘র্যাকেট ও বলের জোগান আমিই দিই। আমি নিজেও টেনিস খেলোয়াড় ছিলাম। সম্প্রতি জাতীয় পর্যায়ে মাস্টার্স টুর্নামেন্টে আমার পদকও রয়েছে। টেনিসের ঝোঁক থেকে টেনিস নিয়ে কাজ করি এলাকায়। ঝালকাঠি টেনিস ক্লাবের হয়ে তিনজন মেয়ে এখানে খেলছে।’

সুমাইয়ার টেনিসের হাতেখড়ি ঝালকাঠিতে হলেও রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে খেলেছেন বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্ট। বয়সভিত্তিক বিভিন্ন পর্যায়ে শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব রয়েছে তার। তবে জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে আলাদা। বয়স মাত্র ১৫ হওয়ায় প্রতিযোগিতার গাম্ভীর্যতা তার বক্তব্যে অনুপস্থিত, ‘টেনিস খেলতে ভালো লাগে। সব খেলাতেই জিততে চাই।’
পুরুষ এককের ফাইনালে সেনানিবাস অফিসার্স ক্লাবের জারিফ আবরার ৬-১, ৬-৩ গেমে বিকেএসপির মাহাদ বিন মালেককে পরাজিত করেছেন। বাংলাদেশের তরুণরা আমেরিকায় পাড়ি জমান উচ্চ শিক্ষার জন্য। আর জারিফ আমেরিকায় গেছেন টেনিস শিখতে। আমেরিকায় ভালো কোচের অধীনে টেনিস শেখেন, আবার ঢাকায় এসে খেলেন প্রতিযোগিতায়। গত তিন মাসের মধ্যে তিনি বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলেছেন, আবার বিজয় দিবস ও জাতীয় চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন। জারিফ তার স্বপ্ন নিয়ে বলেন, ‘আমি ইউএস ওপেনসহ শীর্ষ পর্যায়ে খেলার স্বপ্ন দেখি। ৩ মার্চ আবার আমেরিকা যাচ্ছি। সবাই দোয়া করবেন।’
পুরুষ ও নারী এককে চ্যাম্পিয়ন হওয়া জারিফ এবং সুমাইয়া অবশ্য দ্বৈতে শিরোপা জিততে পারেননি। পুরুষে জারিফ আবরার ও সায়েম জুটিকে ৭-৬, ৬-৪ গেমে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন আমেরিকান ক্লাবের রুস্তম আলী ও মিলন হোসেন। মহিলা দ্বৈতে বিকেএসপির সুবর্ণা খাতুন ও জান্নাতুন ফেরদৌস ৫-৭, ৭-৫, ১০-৭ গেমে সুমাইয়া আক্তার ও সুস্মিতা সেনকে পরাজিত করেন। নারী-পুরুষ এককে প্রাইজমানিতে ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষ একক চ্যাম্পিয়নের প্রাইজমানি যেখানে ৫০ হাজার, সেখানে নারী এককে ২৫ হাজার। সবমিলিয়ে ফেডারশেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার প্রাইজমানি দিয়েছে বিজয়ীদের।
খেলা শেষে ফেডারশেনের সভাপতি আব্দুল হাই সরকার প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার প্রদান করেন। এ সময় বিশেষ অতিথি সাবেক জাতীয় একক ও দ্বৈত চ্যাম্পিয়ন মাহতাবুর রহমান (মারুফ) এবং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ কারেনসহ অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এজেড/এএইচএস