ডর্টমুন্ডে হারের রাতেও ৬ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে বার্সা

বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড ৩ : ১ বার্সেলোনা
৫-৩ অ্যাগ্রিগেটে সেমিফাইনালে বার্সেলোনা
কাজটা নিজেদের মাঠেই অনেকটা করে রেখেছিল বার্সেলোনা। তবে দ্বিতীয় লেগে এতটা ঝড় ঝাপ্টা সইতে হবে সেটাও হয়ত আন্দাজ করেনি ৫ বারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। সিগনাল ইদুনা পার্কে পা রেখেছিল ২৪ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে। সেটা বলতে গেলে খড়কুটোর মিশে গেছে। জার্মানির মাটিতে ৩-১ গোলের হার নিয়েই স্পেনে ফিরতে হচ্ছে বার্সাকে।
অবশ্য ফেরার পথটা খুব একটা বিষাদময় হচ্ছে না তাদের জন্য। আগের লেগে ৪-০ গোলে জয় থাকার সুবাদে ৫-৩ গোলের অ্যাগ্রিগেটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে বার্সেলোনা। ২০১৯ সালের পর যা তাদের প্রথম সেমিফাইনাল। লিওনেল মেসি পরবর্তী যুগে ইউরোপিয়ান আসরে এই নিয়ে দুবার সেমিফাইনাল পর্যন্ত গেল ব্লু-গ্রানারা।
৪-০ গোলের লিড, প্রতিপক্ষ ডর্টমুন্ড অপেক্ষা ছিল ‘মিরাকল’ ঘটানোর। স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা ফুরফুরে মেজাজে শুরু করার কথা ছিল হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যদের। কিন্তু ডর্টমুন্ডের মাঠে তেমন কিছু হলো না। উল্টো প্রথমার্ধে নিজেদের সবচেয়ে বাজে খেলাটা উপহার দিতে হয়েছে তাদের। একে একে ৭ বার বার্সার গোলমুখে শট নিয়েছে জার্মান প্রতিপক্ষ। তাতে মিলেছে অবশ্য কেবল ১ গোল।
ম্যাচের ১১ মিনিটেই গোলকিপার ওলশেক সেজনির ফাউলের কারণে পেনাল্টি যায় বার্সেলোনার বিপক্ষে। স্পটকিক থেকে গোল করে ডর্টমুন্ডকে এগিয়ে দেন সেরহু গিরাসি। এই অর্ধে আর কোনো গোল না হলেও বার্সা নিজেও ডর্টমুন্ডকে ফিরতি চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি। গোলমুখে তারা নিয়েছে কেবল ১ শট।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর ১০ মিনিটে গোল হলো দুটি। দুটোই ডর্টমুন্ডের। তবে একটা গোল ছিল আত্মঘাতী। শুরুতে ৪৯তম রামি বেনসেবাইনির পাস থেকে নিজের এবং দলের দ্বিতীয় গোল আদায় করেন গিরাসি। কিন্তু এর চার মিনিট পরেই ভুল করে নিজেদের জালে বল পাঠান আগের গোলের কারিগর বেনসেবাইনি। অ্যাগ্রিগেটে বার্সা এগিয়ে যায় ৫-২ গোলে।
ম্যাচের ৭৫তম মিনিটে ডর্টমুন্ডকে আরেকটি গোল এনে দেন গিরাসি। এবারেও বার্সা রক্ষণের ভুলই মূল কারণ। রোনাল্ড আরাউহো বল গিরাসির পায়ে তুলে দেন। মিস করার সুযোগই ছিল না ডর্টমুন্ডের নাম্বার নাইনের জন্য। শেষ পর্যন্ত এটাই থেকে গিয়েছে স্কোরলাইন। হুলিয়ান ব্রান্ডট ডর্টমুন্ডকে আরেকটা গোল এনে দিলেও সেটা বাতিল হয় অফসাইডের জন্য। অতিরিক্ত চার মিনিটের খেলা শেষে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করে বার্সেলোনা।
১০ বছর আগে সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফিটা নিজেদের করে নিয়েছিল বার্সেলোনা। সেমিফাইনাল খেলেছে সেও ছয় বছর আগে। বার্সেলোনা তখন ইউরোপের সবচেয়ে সুখী সংসারগুলোর একটি। লিওনেল মেসি নামের ইতিহাসের সেরা ফুটবলারটা যে তখন পর্যন্ত ন্যু ক্যাম্পের আলোছায়ার সঙ্গী ছিলেন। তবে ২০১৯ সালের সেমিফাইনালেই শেষ! এরপর বার্সা আর সুদিন দেখেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চে।
মাঝে কত ঝড়ই তো গেল। বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোলের সেই হার, লিওনেল মেসির বিদায়। এমনকি আর্থিক দুর্দশা এতটাই মন্দ ছিল, নিজেদের স্টেডিয়ামের ঘাসও বিক্রি করতে হয়েছিল বার্সেলোনাকে। সেসব ফেলে হান্সি ফ্লিকের অধীনে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় ব্লু-গ্রানারা। লা-মাসিয়ার একঝাঁক তরুণ মুখের সঙ্গে অভিজ্ঞতার মিশেল। বার্সার সুসময়ে ফেরার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হয়ত এই সেমিফাইনালই।
জেএ