সব্যসাচী নিহাদের দিকেও চোখ নির্বাচকদের

বছর কয়েক আগেও নিহাদুজ্জামান নামটা দেশের ক্রিকেটে তেমন পরিচিত ছিল না। তবে সবশেষ তিন বিপিএলে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পর সর্বশেষ আসরে খেলেছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে। বিপিএলে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলেও সদ্য সমাপ্ত ডিপিএলে নিজেকে আবারও প্রমাণ করেছেন নিহাদ।
এবারের ডিপিএলে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলেন নিহাদ। নিজের কাজটা ছিল বোলিং নিয়ে, সেটা বেশ ভালোভাবেই করেছেন তিনি। বাড়তি হিসেবে ব্যাট হাতেও রান করেছেন। আবাহনীর বিপক্ষে এক ম্যাচে তো করেই বসলেন ৮২ রান, খেললেন দৃষ্টিনন্দন সব শট। আসরজুড়ে বল হাতে ২২ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেছেন ২৬০ রান। তবুও কোথাও যেন আলোচনায় নেই এই ক্রিকেটার।
অথচ ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার আগেই সব শেষ হতে বসেছিল নিহাদের। মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার পরে হাত ভেঙে দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। তবে দমে যাননি নিহাদ। নানা চড়াই-উৎরাই পার করে কয়েক সিজন বিরতির পর ফিরেই দ্যুতি ছড়াচ্ছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট লিগে। জীবন তো এমনই তীব্র খরার পর ফসলের জমিতে এক পশলা বৃষ্টির মতো। যে বৃষ্টির ছোঁয়ায় ফিরে পেতে থাকে সোনালি ফসল। নিহাদও ফিরেছেন নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই শেষে।

২০১৪ সালের যুব বিশ্বকাপ খেলেছিলেন নিহাদ। যে দল থেকে ১০ জন ক্রিকেটার ইতোমধ্যে জাতীয় দলে খেলে ফেলেছেন। তবে নিহাদের সুযোগ আসেনি এখনো। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নটাকে পুষে রেখেছেন সযত্নে। সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলেছেন অবিরাম। ডিপিএল শেষ করে ঢাকা পোস্টকে শোনালেন সেই গল্পই।
নিহাদ বলছিলেন, 'চেষ্টা করছি নিজের পারফরম্যান্স ধরে রাখার। সব ক্রিকেটারের লক্ষ্য থাকে জাতীয় দল, আমারও তাই। পরিবারের জন্য হলেও আমি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে যাবো। এখন বিসিবির কোনো একটা প্রোগ্রামে যদি সুযোগ পেতাম তাহলে আরও ভালো হবে।'
নিহাদের বন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজরা এখন জাতীয় দলের তারকা। মাঠ থেকে মাঠের বাইরে সবখানেই আলোচনায় তারা। জীবনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেই দুর্ঘটনা না হলে বোধহয় নিহাদও থাকতেন আজ আরও ভালো কোনো জায়গায়। জীবন কাকে কখন কোথায় দাঁড় করাবে এটা আসলেই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। তবে বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বোলিং অ্যাকশান পরিবর্তন করে আবারো ফেরার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নিহাদ। জীবন মানেই তো লড়াই, যে লড়াই কেবল নিজের সঙ্গে নিজের।

নিহাদের পারফরম্যান্স নজরে পড়েছে বিসিবির নির্বাচক প্যানেলেরও। ঢাকা পোস্টকে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, 'সে ভালো করছে, অন্যদের মতো তার দিকেও নজর রয়েছে।' এখন দেখার বিষয় নিহাদ নিজেকে কতদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। কবেই বা স্বপ্নের দরজাটা খুলে যায় তার।
এসএইচ/এফআই