লাঞ্ছিত রেফারিরা, ‘ঘুমিয়ে’ বাফুফে, প্রতিবাদ নেই রেফারিজ সমিতিরও

বাজে সময় পার করছেন বাংলাদেশের রেফারিরা। খেলা পরিচালনার সম্মানীর জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে, অন্যদিকে মাঠে লাঞ্ছনার শিকারও হচ্ছেন। দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাফুফের রেফারিদের দিকে নেই খেয়াল। তেমনি রেফারিদের সম্মান ও দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল রেফারিজ এসোসিয়েশনেরও নেই কোনো প্রতিবাদ।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ। সেই চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনটি রেফারি লাঞ্ছিত ঘটনার ঘটেছে বড় আকারে। ৩০ এপ্রিল ফর্টিজ মাঠে পিডব্লিউডি ও ওয়ারী ক্লাবের মধ্যকার ম্যাচে হাফ টাইমে দেখা যায় কয়েকজন কর্মকর্তাকে উৎশৃঙ্খলভাবে রেফারির উপর চড়াও হতে। ওয়ারী ক্লাবের কর্মকর্তা কবীরকে দেখা যায় অত্যন্ত ঔদ্ধত্য আচরণে। রেফারির সঙ্গে বাজে ব্যবহার করায় প্রথমে হলুদ কার্ড পরবর্তীতে লাল কার্ড দিতে দেখা যায়। সহকারী রেফারির কাছ থেকে পতাকা কেড়ে নেয়ার ঘটনাও দেখা গেছে।
৩০ এপ্রিল এই ঘটনার ঘটার পর প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত। ওয়ারী ক্লাবও ইতোমধ্যে আরও তিন ম্যাচ খেলেছে। এখনো ফেডারেশনকে ওয়ারী ক্লাব এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সেই ম্যাচের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় কিছু দিন পরই গাজীপুরে বিসিএলে আরেক ম্যাচে ফরাশগঞ্জ পিডব্লিউডি ম্যাচে ফরাশগঞ্জ রেফারিকে আক্রমণ করে। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে গেছে গতকাল সিটি ক্লাব ও বাফুফে এলিট একাডেমীর মধ্যকার ম্যাচে। রেফারি জিএম চৌধুরি নয়নকে খেলা শেষে বেদম প্রহার করা হয়। তিনি এতে মাঠে লুটিয়ে পড়েন। এরপর আরেক দফা মারের শিকার হন।
ঘরোয়া ফুটবলে এক সময় রেফারি প্রহার ছিল নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। মাঝে কয়েক বছর এ রকম ঘটনা কমে আসছিল। চলতি মৌসুমে আবার এটা প্রকট আকার ধারণ করছে। বাফুফে নীতি নির্ধারকরা দক্ষতার সঙ্গে উঁচু মানের প্রবাসী আনার ক্ষেত্রে যতটা মুন্সিয়ানা দেখাচ্ছেন ঠিক ততটাই নিষ্ক্রিয়তা ঘরোয়া ফুটবলের ইস্যুতে। রেফারিদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটার সপ্তাহ খানেক পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচারের ফাইলও উঠেনি।
বাফুফে সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেন, 'তিনটি ঘটনাই ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছে রয়েছে। তারা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দ্রুত শাস্তি কার্যকর করবেন।' কালকের ঘটনার পর আজ সকাল থেকেই মূলত বাফুফে একটু নড়েচড়ে বসেছে। ৩০ এপ্রিল ওয়ারী ক্লাবের কর্মকর্তারা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। সেই ঘটনার দুই দিনের মধ্যে কড়া শাস্তি প্রদান করতে পারলে গতকালের ঘটনা নাও হতে পারত বলে ধারণা ফুটবলসংশ্লিষ্টদের।
ফুটবল ফেডারেশন রেফারিদের লাঞ্ছনার ঘটনায় শাস্তি প্রদানে বিলম্ব করছে। রেফারিদের সম্মান ও অধিকার আদায়ের সংগঠন রেফারিজ এসোসিয়েশনেও একেবারে নিশ্চুপ। রেফারিরা মাঠে প্রহারের শিকার অথচ এখনো কোনো প্রতিবাদ লিপি দেয়নি সংগঠনটি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাজী ওসমান অনেকটাই নিষ্ক্রয় এমনই তথ্য নির্বাহী কমিটির অনেকের। রেফারিজ এসোসিয়েশনের সভাপতি বাফুফে থেকে মনোনীত হন। সেটাও ফেডারেশন এখনো মনোনয়ন দেয়নি।
বাফুফের একটি রেফারিজ কমিটিও থাকে। সেই কমিটির চেয়ারম্যানও মনোনয়ন দিতে পারেননি নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল। ফলে রেফারিদের দুঃখ-দুর্দশা দেখার আনুষ্ঠানিক কেউ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে একাধিক রেফারি বলেন, 'এ রকম দুঃসময় আমরা কখনো পার করিনি। কোটি টাকার ওপর সম্মানী বকেয়া আবার মাঠে সমর্থক-কর্মকর্তারা প্রহার করছে। ফেডারেশন কোনো শাস্তি দিচ্ছে না। আমরা যে বিচার জানাব নেই রেফারিজ কমিটির চেয়ারম্যান। আমাদের সমিতির নেতাকেও (সাধারণ সম্পাদক) পাওয়া যায় না সব সময়।'
এক দিকে নেই সম্মানী, আরেক দিকে সম্মানহানী ফলে অনেক রেফারির আচার-আচরণ রুদ্রমূর্তি। এতে একজন রেফারির উপর ফেডারেশনের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারক খানিকটা নাখোশও বলে শোনা যাচ্ছে।
ঘরোয়া ফুটবলের মৌসুম সমাপ্তির দিকে অথচ ডিসিপ্লিনারি কমিটির প্রথম সভাই হয়েছে ৭ মে গত সপ্তাহের বুধবারে। সেই সভায় প্রিমিয়ার লিগের চার ম্যাচের ফাইল উথাপিত হয়েছিল। অথচ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্তর বিসিএলে ওয়ারী ক্লাবের কর্মকর্তাদের ঘটনাটি সেই সভায় বাফুফে সচিবালায় উঠায়নি। এখন হয়তো পরবর্তী সভায় বিসিএলের তিন ম্যাচের বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এজেড/এইচজেএস