‘খারাপ করলে গালি দেয়, ভালো করলে তালিও দেয়’

বাংলাদেশ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অঙ্গনের শুরু থেকেই ছিলেন হাসিবুল হোসেন শান্ত। আইসিসি ট্রফির ম্যাচজয়ী রানও এসেছিল এই পেসারের ব্যাট থেকে। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ২০০৪ সাল পর্যন্ত। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর বিসিবিতে চাকরি শুরু করেন এই পেসার।
২০১৬ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত শান্ত বয়সভিত্তিক দলের নির্বাচকের দায়িত্ব সামলেছেন। সবশেষ আজ (২০ সেপ্টেম্বর) শনিবার নতুন করে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সহকারী নির্বাচকের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজের অনুভূতি, লক্ষ্যসহ বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক সাকিব শাওনকে।
ঢাকা পোস্ট: জাতীয় দলের নির্বাচকের দায়িত্ব পেলেন। কেমন লাগছে?
শান্ত: অনুভূতিটা আসলে এখনো বুঝতে পারছি না। যখন কাজ করা শুরু করব, ভালোভাবে এগিয়ে যেতে পারব তখন বলতে পারব। আসলে কাজটা ভালো নাকি তিতা সেটা তখনই বলতে পারব। যদিও অনেক বছর ধরেই এই কাজটা করে আসছি, তবে সেটা বয়সভিত্তিক দলের হয়ে।

ঢাকা পোস্ট: ৯ বছর বয়সভিত্তিক দলের নির্বাচক ছিলেন, নিশ্চয় ভেবেছিলেন একদিন জাতীয় দলের দায়িত্ব পাবেন?
শান্ত: হ্যাঁ, ইচ্ছা তো ছিলই যেহেতু অনেক বছর ধরে যুক্ত রয়েছি। স্বপ্ন দেখতাম ক্রিকেট বোর্ডের হয়ে কাজ করছি, যদি ভালো করি অবশ্যই জাতীয় দলের জন্য নির্বাচিত হব। আজ সেটা পূরণ হলো। আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাই। যেহেতু ক্রিকেট বোর্ড বিশ্বাস রেখেছে, সেই বিশ্বাসের মর্যাদা যেন রাখতে পারি এটাই লক্ষ্য থাকবে।
ঢাকা পোস্ট: আপনি বয়সভিত্তিক দলে লম্বা সময় কাজ করেছেন। এ কারণে আপনার জন্য খেলোয়াড় নির্বাচন করা কতটা সহজ হবে?
শান্ত: হ্যাঁ, এটা ঠিক আছে। কিন্তু এখানে কিন্তু শুধু বয়সভিত্তিক দল না, প্রথম বিভাগের ক্রিকেটারও রয়েছে। এছাড়া প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড় রয়েছে। সব মিলিয়ে অনেক নতুন খেলোয়াড় খেলে। এনসিএল আছে, বিসিএল আছে, যেখানে কিছু লোকাল খেলোয়াড় আছে। এ টিম রয়েছে, এইচপি টিম রয়েছে- সেখান থেকে আসলে জাতীয় দলের খেলোয়াড় নির্বাচনের বিষয় রয়েছে।
আর আমি যাদেরকে চিনি সেটা তো আমার অ্যাডভান্টেজ। তাদের ছাড়াও বাইরে অনেক খেলোয়াড় রয়েছে, সবাইকে চিনতে হবে। তবে আমার তো মোটামুটি আসলে সব ক্রিকেটারকে চেনা, কিছু নতুন খেলোয়াড় বাদে সবাইকে মোটামুটি চিনি। শুধু এটা করলে হবে না। আসলে যারা ভালো খেলে তাদের তুলে আনতে হবে। তার জন্য প্রথমে দুই নির্বাচকের সাহায্য আমার খুব দরকার।

ঢাকা পোস্ট: নির্বাচক হলে তালির সাথে গালিও শুনতে হয়...
শান্ত: এটা তো অবশ্যই স্বাভাবিক, চেষ্টা করব ভালো করার জন্য। আর খারাপ করলে তো অবশ্যই কথা শুনতে হবে। যখন ক্রিকেট খেলেছি তখন তো খারাপ করলে ৩৫ হাজার দর্শক মাঠে বসে একসাথে গালি দিয়েছে। তবে ভালো কাজ করলে তো মানুষ তালিও দেয়, খারাপ কাজ করলে গালিও দেবে। অবশ্যই গালি না খাওয়ার জন্য চেষ্টা করবো। আমার কাজ থাকবে সততার সাথে করার। এর পাশাপাশি লক্ষ্য থাকবে ইচ্ছা করে যেন কোন ভুল কাজ না করি।
ঢাকা পোস্ট: ঘরোয়া থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিটা খেলাই তো নির্বাচকদের মাঠে বসে দেখা উচিত?
শান্ত: অবশ্যই। দেখুন একজন নির্বাচককে কিন্তু মাঠে বসে খেলা দেখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা নিয়ে লিপু ভাই এবং রাজের সাথে কথা বলবো। চেষ্টা করব মাঠে বসেই সবকিছু এনালাইসিস করার। যখন বয়সভিত্তিক দলে ছিলাম সবসময় মাঠেই থেকেছি। যেহেতু অভ্যাস আছে এটা, আমার জন্য সমস্যা হবে না।
ঢাকা পোস্ট: আমিনুল ইসলাম বুলবুল আপনাকে আলাদা করে কিছু বলেছে কিনা?
শান্ত: বিসিবি সভাপতি আমাকে বলেছেন যে, আমি অনেক দিন বয়সভিত্তিক দলে ছিলাম। তো সেই হিসেবে আমার উপর একটা আস্থা রেখে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমিও আশ্বস্ত করেছি যে আমি ভালো করার চেষ্টা করবো। বোর্ড মনে করেছে এই জায়গায় আমি সঠিক, সে জন্য দিয়েছে। আমি যেন এটার প্রতিদান দিতে পারি, এটাই ইচ্ছা।

ঢাকা পোস্ট: স্যালারি নিয়ে মন খারাপ নেই নিশ্চয়?
শান্ত: আসলে স্যালারি নিয়ে আমার এইভাবে চিন্তা নেই। বোর্ড যেভাবে সিদ্ধান্ত নিবে। তবে স্যালারি অবশ্যই লাগে, সেটা বোর্ড অবশ্যই দেখবে। এটা নিয়ে ভাবছি না।
ঢাকা পোস্ট: আপনি নতুন যোগ দিলেন, বাকি দুইজন অনেকদিন ধরেই রয়েছেন...
শান্ত: দেখেন লিপু ভাই অনেক অভিজ্ঞ, ক্রিকেটটা ভালো বোঝেন। তার সঙ্গে রাজ আছে অনেকদিন ধরেই। যেটা সিদ্ধান্ত হবে সবার সঙ্গে কথা বলেই সব কিছু করব। প্রথমত উনাদের তো একটা ডিসিশন থাকবে। তারপরে আমার যেটা পছন্দ থাকবে সেটা আলোচনা করে সবকিছু করব। লিপু ভাই সিনিয়র মানুষ। উনার সাথে কথা বললে অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে আশা করি।
ঢাকা পোস্ট: পরিবার থেকে সবাই নিশ্চয় খুশি?
শান্ত: ফ্যামিলি থেকে সবাই আসলে খুব খুশি। বড় মেয়ে আছে সে খুব খুশি, ছোট বাচ্চা আছে ছেলে ও আসলে বুঝতে পারছে না খুব একটা। তবে আমার স্ত্রী খুব খুশি। সে অনেকদিন ধরেই বলছিল যে তার একটা ইচ্ছা আমি যেন জাতীয় দলের নির্বাচক হতে পারি। আজকে আমার স্ত্রীর ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আমার চাইতে সে বেশি খুশি হয়েছে। সবসময় বলত কবে হবো, আজকে পূরণ হলো আলহামদুলিল্লাহ।
এসএইচ/এএল
