হাই লাইন ডিফেন্স প্রশ্নে অগ্নিশর্মা বাটলার

আগামী বছর মার্চে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়া কাপে খেলবে। এশিয়া কাপের প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশ দল থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলে গতকাল দেশে ফিরেছে। দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ৮ গোল হজম করেছে। এতে বাংলাদেশ দলের বৃটিশ কোচ পিটার বাটলারের হাই লাইন ডিফেন্স তত্ত্ব বেশ সমালোচনার মধ্যে পড়েছে।
প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করা নারী ফুটবল দলকে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া ৫০ লাখ টাকা ঘোষণা করেছিলেন। আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফুটবলারদের সেই প্রতিশ্রুত অর্থ প্রদান করে। সেই অনুষ্ঠান শেষে বৃটিশ কোচ পিটার বাটলার তার হাই লাইন তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। উল্টো তিনি শত সমালোচনা সত্ত্বেও তার হাই লাইন ডিফেন্স চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ অ-২০ দল লাওসে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ১-৬ গোলের ব্যবধানে হেরেছে এই হাই লাইন ডিফেন্সের জন্য। থাইল্যান্ডেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। বড় প্রতিপক্ষের সঙ্গে নিজেদের অর্ধে সেন্টার হাফের কাছে ডিফেন্স লাইন রাখছেন বাটলার। এতে সহজেই প্রতিপক্ষের গতিশীল ফরোয়ার্ডরা বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের পরাস্ত করে গোলের পর গোল করছেন।
এত গোলের পরও এই কৌশলের পুনরাবৃত্তি কেন এমন প্রশ্নে বাটলার অবস্থান অনড় বলে জানান, 'আপনার পছন্দ হোক বা না হোক, হাই-লাইন ডিফেন্স আমাদের সিস্টেমের অংশ এবং এটা থাকবেই। আমি পরিবর্তন করি, কিন্তু মূল ধারাটা বদলাই না। দলের সফলতা, ব্যর্থতার মতো হাই লাইন ডিফেন্স নিয়েও আমি দায়বদ্ধ। বাংলাদেশ এশিয়া কাপে উঠেছে, সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হাই লাইন ডিফেন্স খেলেই।'
জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও কোচ জুলফিকার মাহমুদ দেশের অন্যতম ফুটবল বিশ্লেষক। তিনি বাংলাদেশ দলের রক্ষণভাগের কৌশলের দুর্বলতা নিয়ে বলেন, 'ক্রমাগত একই ভুলে গোল হজম হচ্ছে। ডিফেন্সের সঙ্গে গোলরক্ষকের গ্যাপ অনেক থাকছে। সব ম্যাচই একই হাই লাইন ডিফেন্স প্রয়োগযোগ্য নয়। প্রতিপক্ষ অনুযায়ী খেলার ধরন ও কৌশল নির্ধারিত হয়।'
থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগে জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন বাটলার। এখন দুই ম্যাচে আট গোল খেয়ে হারে তিনি বাস্তবতার কথা বলেছেন, 'গোল খাওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে থাইল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে খেললে। আপনারা প্রায়ই ভুলে যান, আমরা প্রতিটি ম্যাচ খেলি বাইরে, দেশে নয়। ঢাকায় খেলতে না পারার কারণে প্রতিপক্ষের মাঠে অনেক কষ্ট করতে হয়। শক্তিশালী দলের বিপক্ষে মাঝে মাঝে বড় ব্যবধানে হারাটা বাস্তবতা। আমি বাস্তববাদী। জয় থেকে যতটা শেখা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি শেখা যায় পরাজয় থেকে। কারণ জয় অনেক সময় দুর্বলতাকে ঢেকে দেয়। কিন্তু সত্যটা হলো—গোল তো সব দলই খায়। এটা ফুটবলের অংশ। আমরা বাংলাদেশ। টপ-৫০ র্যাঙ্কের কোনো দলের বিপক্ষে খেললে সমস্যায় পড়বই।'
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল কয়েক মাস পর এশিয়া কাপ খেলবে। সেই দল থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ গোলে হারছে। সেটার পেছনে বড় কারণ হাই লাইন ডিফেন্স। অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলেও কোচের কাছে এটি নির্বোধ মনে হয়েছে। এতে তার পেশাদারিত্বের অভাব ও মানসিক মনোভাব বোঝা যায়।
নারী দলের সিনিয়র ফুটবলাররা ভুটানে লিগ খেলছেন। ভুটানে খেলা ঋতুপর্ণা, রুপ্নাসহ আরো কয়েকজন ডাকলেও ঐ লিগে খেলে ভালো পারফরম্যান্স করা সাবিনা, মাসুরাকে কেন প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাকছেন না এমন প্রশ্ন হয়েছিল। এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি আরেক প্রশ্নে ভুটান প্রসঙ্গে বলেন, 'আমি বিষয়টা বুঝি এবং শ্রদ্ধা করি। তারা সেখানে যায় কিছু অর্থ উপার্জন করতে, খেলার সময় পেতে। এটা একদম স্বাভাবিক। আমাদের দেশে এখনো লিগ বা পর্যাপ্ত ট্রেনিং সুবিধা নেই। কামলাপুর মাঠ পেলেও অবকাঠামোগত ঘাটতি আছে। তাই ওদের বাইরে যাওয়া দোষের কিছু নয়।'
থাইল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ০-৩ গোলে হেরেছিল। ঐ হারের পর কোচ সিনিয়র ফুটবলারদের দিকে ইঙ্গিত করে সমালোচনা করেছিলেন। আজ এ নিয়ে প্রশ্ন হলে তিনি বলেন, 'আমি রিতুর সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেছি। সে ভীষণ ভালো মেয়ে। হয়তো কিছু ভুল ধারণা ছিল। কিন্তু মারিয়া মান্ডার মতো কেউ ফিরেই দারুণ পারফর্ম করে। তাই আমি কাউকে সমালোচনা করছি না, বরং পেশাদারভাবে গঠনমূলক পরামর্শ দিচ্ছি। অনেক সময় মিডিয়া সমালোচনাকে ভুলভাবে নেয়, কিন্তু পেশাদার জগতে এটা ইতিবাচকভাবেই নেওয়া হয়।'
পাঁচ মাস পর বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ খেলবে। সেখানে উত্তর কোরিয়া, চীনের মতো প্রতিপক্ষ। এই সময়ে তাদের সঙ্গে ব্যবধান ও প্রস্তুতি নিয়ে কোচ বলেন, 'বিষয়টা মূলত শারীরিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। আমাদের মেয়েরা অনেক সময় শারীরিকভাবে সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। আমাদের আরও শক্তিশালী, আরও ফিট হতে হবে। এজন্য আমরা অস্ট্রেলিয়া থেকে ক্যামেরন লর্ড নামে এক ফিটনেস কন্ডিশনার এনেছি, যিনি বড় ভূমিকা রাখবেন।'
এজেড/এইচজেএস