পছন্দের খেলোয়াড় সাকিব, ফ্লিনটফ আইডল: ব্রুকস

ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটের জনপ্রিয় মুখ ইথান ব্রুকস। ২৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার প্রথমবারের মতো খেলতে এসেছেন বিপিএলে। খেলছেন সিলেট টাইটান্সের হয়ে। ইতোমধ্যে দলটির হয়ে একটি ম্যাচ জয়ে অবদান রেখেছেন।
ভবিষ্যতে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন ব্রুকসের। সিলেটে আজ ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে একান্তে আলাপ করেন এই ইংলিশ ক্রিকেটার। আলাপ করেন নিজের ক্যারিয়ার, স্বপ্ন, বিপিএলসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে।
আপনার ক্রিকেটে পথচলা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
ব্রুকস: এটা আসলে শুরু হয়েছিল আমার পরিবারের কাছ থেকে, আমার বাবা আর ভাইদের মাধ্যমে। আমরা বাবার সঙ্গে খেলা দেখতে যেতাম, আর নেটে খেলতাম। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। আর ছোট বয়সেই খেলাটার প্রতি ভীষণ ভালোবাসা তৈরি হয়।
পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার সিদ্ধান্ত কখন নিলেন?
ব্রুকস: আমার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটা আসলে নিজে থেকেই হয়ে যায়, কারণ আমাকে একটা কন্ট্রাক্ট অফার করা হয়েছিল। তখন আমার বয়স ছিল ১৮। তারপর থেকে ক্রিকেট খেলাটা আমি ভীষণ উপভোগ করছি।
ক্রিকেটার হিসেবে আপনাকে সবচেয়ে বেশি কে অনুপ্রাণিত করেছে?
ব্রুকস: আমার বাবা আর ভাইয়েরা। বাগানে তাদের সঙ্গে খেলতাম। ছোটবেলা থেকেই খেলাটাকে ভালোবাসতে শুরু করি। এরপর টিভিতে আইডলদের খেলতে দেখতাম। আন্ড্রু ফ্লিনটফের খেলা দেখতে খুব ভালো লাগতো। একদিন তাদের মতো হওয়া, দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখতাম, ছোটবেলায় তাদের অনেক ক্রিকেট দেখেছি।
ছোট থেকে কোন ক্রিকেটারকে অনুসরণ করতেন, কে আপনার আইডল?
ব্রুকস: হ্যাঁ, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফকে অনেক অনুসরণ করতাম। পরে বয়স একটু বাড়লে ক্রিস ওকসকে। আমরা একই ক্রিকেট ক্লাবে ছিলাম। তার বোলিং অ্যাকশন দেখার মতো ছিল।
প্রথমবার যেহেতু বিপিএলে, এখন পর্যন্ত কেমন অভিজ্ঞতা হলো?
ব্রুকস: দারুণ লাগছে। এখানে সবাই খুব ভালো। ভক্তরা অসাধারণ, বরাবরের মতোই দুর্দান্ত উত্তেজনাপূর্ণ। যে কারণে পরের ম্যাচটার জন্য অপেক্ষায় আছি।
এটা আপনার প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট, কেমন লাগছে?
ব্রুকস: দারুণ, দারুণ, ক্রিকেট খুব প্রতিযোগিতামূলক। ভিন্ন চ্যালেঞ্জ, ভিন্ন কন্ডিশন, এমন বোলার যাদের বিপক্ষে আগে কখনো খেলিনি। সব মিলিয়ে খুব উপভোগ করছি। নেটে কোচদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি। আর দর্শকরা অসাধারণ।
ওয়ারউইকশায়ার থেকে উস্টারশায়ারে যাওয়া কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
ব্রুকস: ভালো প্রশ্ন। আসলে তেমন চ্যালেঞ্জিং ছিল না। বন্ধুদের সাথে বড় হয়ে ওঠার জায়গা ছেড়ে আসতে খারাপ তো লাগে। কিন্তু উস্টারশায়ার আমাকে দারুণভাবে গ্রহণ করেছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আর টি-টোয়েন্টিতে খেলার সুযোগ দিয়েছে। এপ্রিল থেকে মৌসুম শুরু হলে আবার নামব এবং ডিভিশন ওয়ানে ফেরার চেষ্টা করব।
আপনি তো অলরাউন্ডার সেই দিক থেকে মানসিকভাবে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেন?
ব্রুকস: আমি বেশ রিল্যাক্সড থাকি। বিশ্লেষণ করি, প্রতিপক্ষকে বোঝার চেষ্টা করি। প্রস্তুতি ভালো থাকলে খেলাটা উপভোগ করি।
ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের কন্ডিশনের পার্থক্য কতটা চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে আপনার কাছে?
ব্রুকস: বিশাল পার্থক্য, ইংল্যান্ডে বাউন্স বেশি, পেস থাকে। এখানে লো বাউন্স, স্পিন বেশি। এখানেও সেটা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। যত বেশি অনুশীলন করব, ততই উপকার হবে।
সৌন্দর্যে ভরা সিলেটের পরিবেশ কেমন উপভোগ করছেন?
ব্রুকস: অবিশ্বাস্য সুন্দর। বিশেষ করে মাঠে অনেক দর্শক। সবশেষ ম্যাচের শেষ ওভারে ব্যাটিং করার সময় এত জোরে শব্দ করছিল- যা দেখে মনে হচ্ছিল এটাই সবচেয়ে জোরালো দর্শক যার সামনে আমি খেলছি।
সেই ম্যাচে তো শেষ পর্যন্ত সিলেটকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন, কেমন লাগছিল তখন?
ব্রুকস: দারুণ, দর্শকরা পুরো ম্যাচজুড়েই শক্তি জুগিয়েছে। ম্যাচটা একটু কাছাকাছি ছিল, তবে জয় তো জয়ই। ভালো লাগে এমন ম্যাচ জেতাতে পারলে, নিজের মধ্যে অন্যরকম (খুশি) কাজ করে।
কোনো ম্যাচে যখন শেষ ওভারে জয় পান তখন কেমন লাগে?
ব্রুকস: আমি মনে করি না আমি ম্যাচ জিতিয়েছি, কারণ আমি শেষ রানটা করিনি, আউট হয়ে গিয়েছিলাম। আমি রেগে ছিলাম, কারণ আমি জেতাতে চেয়েছিলাম। আশা করি ভবিষ্যতে সুযোগ আসবে।
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে আপনার সবচেয়ে পছন্দের কে?
ব্রুকস: সাকিব আল হাসান, তিনি তো ইংল্যান্ডে দীর্ঘদিন খেলেছেন। আমার নিজ কাউন্টির প্রতিনিধিত্বও করেছেন। তাই তার ক্যারিয়ার, খেলা দেখেছি। তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা খুবই চমৎকার।
বাংলাদেশি খাবার খাচ্ছেন, কোনটা বেশি ভালো লাগছে?
ব্রুকস: হ্যাঁ, খেয়েছি, খুব সুন্দর। ডাল-ভাত আর খাসির মাংস খেয়েছি, খুব ভালো।
বাংলাদেশের কোন সংস্কৃতিটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে?
ব্রুকস: মানুষ খুব বন্ধুসুলভ, সহযোগী। খাবার অসাধারণ, প্রথম সপ্তাহটা খুব বিশেষ করে তুলেছে।
বিপিএলের সঙ্গে অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের তুলনা করবেন কীভাবে?
ব্রুকস: এটা আমার প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি। এখানে বিশ্বমানের খেলোয়াড় আছে। ক্রিকেট খুব কঠিন। তুলনা করা কঠিন, তবে বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি অবশ্যই খুব ভালো।
যখন ক্রিকেট খেলেন না, তখন সময় কীভাবে কাটে?
ব্রুকস: গলফ খেলি, স্পোর্টস সায়েন্সে পড়াশোনা করছি, চার মাস বাকি। পরিবার, গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে সময় কাটাই। আমি সাদামাটা মানুষ।
ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন সময় কোনটা ছিল?
ব্রুকস: নিজের হোম কাউন্টি দল থেকে ছেড়ে যাওয়াটা। এরপর উস্টারশায়ারে যাওয়া। এখানে তিন বছরের চুক্তি করেছি। ভাগ্য ভালো ছিল।
আপনার দেশের জেসন রয়, উইল জ্যাকস, জোফরা আর্চার বিপিএল খেলে জাতীয় দলে এসেছেন, আপনি কী ভাবেন এটা নিয়ে?
ব্রুকস: অনেকে বলেন এটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগের পথ। আমি এসব নিয়ে ভাবি না। ভালো হলে সুযোগ আসবেই। আমি শুধু ক্রিকেট উপভোগ করতে চাই। তবে অবশ্যই ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে চাই।
আগামী দুই–তিন বছরে নিজেকে কোথায় দেখেন?
ব্রুকস: আমি বেশি দূর ভাবি না। এখন সিলেটের জন্য খেলছি, ম্যাচ জিততে চাই। ক্রিকেট উপভোগ করাই মূল লক্ষ্য।
এসএইচ/এফএইচএম
