বেনজেমার হ্যাটট্রিকে নাটকীয়ভাবে বিদায়ঘণ্টা বাজল মেসির পিএসজির

Dhaka Post Desk

স্পোর্টস ডেস্ক

১০ মার্চ ২০২২, ০৩:৫৮ এএম


বেনজেমার হ্যাটট্রিকে নাটকীয়ভাবে বিদায়ঘণ্টা বাজল মেসির পিএসজির

ম্যাচের বয়স ঘণ্টার কাটা পেরিয়ে গেছে তখন। রিয়াল মাদ্রিদ তখনো ম্যাচে এক গোলে, আর সামগ্রিকভাবে দুই গোলে পিছিয়ে, মানসিকিভাবেও। এরপরই শুরু কারিম বেনজেমা শো’র৷ গুণে গুণে পিএসজির জালে জড়ালেন তিন গোল, একাই। আর তাতেই লিওনেল মেসির পিএসজির বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে। পিএসজিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে, সামগ্রিকভাবে ৩-২ গোলের জয় নিয়ে শেষ আটে চলে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। 

ম্যাচের আগে কথা হচ্ছিল মেসিকে নিয়ে, এমবাপের চোট নিয়ে; ওদিকে রিয়ালের ক্যাসেমিরো-মেন্দির না থাকা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বিস্তর। তবে রিয়ালে যে কারিম বেনজেমা নামের একজন আছেন, সেটা যেন ভুলেই যাওয়া হচ্ছিল বারবার। 

সান্তিয়াগো বের্নাবিউতে আজ দুই অর্ধে যেন দুই মাদ্রিদেরই দেখা মিলেছে। সেটার কারণও এই বেনজেমাই। প্রথমার্ধে বেনজেমা ছিলেন বোতলবন্দি৷ তাতে রিয়ালও ছিল বিবর্ণ।

বেনজেমারই স্বদেশি কিলিয়ান এমবাপে তখন ঘুরিয়েছেন ছড়ি। পিএসজি শুরু থেকেই আক্রমণ শানিয়েছে বেশ। আক্রমণের চেয়ে লিওনেল মেসির দায়িত্বটা বেশি ছিল মাঝমাঠে; লিয়ান্দ্রো পারেদেস, মার্কো ভেরাত্তি, দানিলো পেরেইরাদের সঙ্গে বাড়তি মিডফিল্ডার হিসেবে যোগ দিয়ে পিএসজিকে এনে দিয়েছিলেন মাঝমাঠের দখল। 

ফল দেখা যাচ্ছিল আক্রমণে৷ শুরুর ১২ মিনিটে এক কিলিয়ান এমবাপের শটই দুবার ঠেকিয়েছিলেন থিবো কোর্তোয়া। আধঘণ্টা পেরোনোর আগেই এমবাপে একবার জালে জড়িয়েছিলেন বল, তবে অফসাইডের খড়গে তা আর গোলে রূপ পায়নি। 

তার আফসোস অবশ্য মেটে কিছুক্ষণ পরই। নেইমারের পাস থেকে প্রতি-আক্রমণে পেয়ে দিয়েছিলেন গোলটা। প্রথম লেগের গোল, আর এই ম্যাচের প্রথমার্ধের গোল, সব মিলিয়ে লড়াইয়ে দুই গোলে এগিয়ে গিয়েছিল পিএসজি৷ বিরতিতে যখন এই অগ্রগামিতা নিয়েই যাচ্ছিল পিএসজি, তখন মনে হচ্ছিল শেষ আট থেকে বুঝি ৪৫ মিনিটেরই দূরত্বে পিএসজি!

সেটা মনে হচ্ছিল পরের অর্ধের শুরুতেও। এমবাপের গোলটা যখন অফসাইডের কাটায় পড়ে বাতিল হলো তখনো। গোল না হোক, সুযোগ যে আসছিল অবারিত!

তবে বেনজেমার এক গোলেই খেলার গতিপথ বদলে যায় পুরোপুরি। প্রথম গোলে বেনজেমার প্রেসের কাছে বল হারিয়ে বসেছিলেন জিয়ানলুইজি ডনারুমা, বল গেল ভিনিসিয়াস জুনিয়রের কাছে। মারকিনিয়োস তাকে ঠিকঠাক মার্ক করতে পারেননি, পারেননি স্লাইড করে তার পাসটা ঠেকাতেও। মাঝে ফাঁকায় পড়ে থাকা বেনজেমার কাছে গেল বল, প্রথম ছোঁয়াতেই তিনি বলটা পাঠান জালে। 

তাতে নাটকীয়ভাবে ম্যাচের রঙটা যায় বদলে। এতক্ষণ মুহুর্মুহু আক্রমণে ওঠা পিএসজির সুযোগ তৈরির ফল্গুধারাতেও বাঁধ পড়ল এবার। তাতে দলের মানসিকতা তো বটেই, কোচের কৌশলেরও দায় আছে বৈকি। মেসিকে খানিকটা ওপরে নিয়ে এসেছিলেন গোলের আশায়, সর্বনাশটা হলো সেখানেই। গোল তো হলোই না, পিএসজি হারাল মাঝমাঠের দখল। 

৭৬ মিনিটে লুকা মদ্রিচের পাস থেকে বেনজেমা করলেন দ্বিতীয় গোলটা৷ ততক্ষণে পিএসজিকে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে তাদের ইতিহাস। শেষ কয়েক বছরেই যে বার্সা আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে লিড খুইয়ে বিদায় নিয়েছিল দলটি! 

সেই ভাবনা থেকেই হয়তো, দ্বিতীয় গোলের পরই হকচকিয়ে গেল পিএসজি। তৃতীয় গোলটায় ভিনিসিয়াস থেকে বল কেড়ে নিয়ে ক্লিয়ারও করলেন না ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মারকিনিয়োস, তাতে প্রথম ছোঁয়াতে গোল বেনজেমার৷ ৩৪ বছর ৮০ দিন বয়সে করা এই হ্যাটট্রিকের সুবাদে বনে যান সবচেয়ে বেশি বয়সে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হ্যাটট্রিক করা খেলোয়াড়৷ তবে তার চেয়েও বড় বিষয়, পিএসজির কফিনে শেষ পেরেকটা ঠোকা হয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদের। নিজেরা চলে যায় শেষ আটে। অপূর্ণই রয়ে যায় মেসি এমবাপে নেইমারদের নিয়ে গড়া পিএসজির গ্যালাকটিকোর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার স্বপ্ন।

এনইউ/আইএসএইচ

Link copied