নবম ও দশম শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় পত্রের (তৃতীয় পর্ব)
সুপ্রিয় নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। আজ তোমাদের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের প্রতিবেদন লেখার উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করব।প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই সূত্র নম্বর উল্লেখ করবে। তাহলে বেশি নম্বর পাবে।
উদাহরণ :
১। মনে করো, তোমার নাম মারুফ শাকুরী। তুমি ঢাকার আদর্শ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির একজন ছাত্র। তোমার বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সপ্তাহ সম্পর্কিত প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি প্রতিবেদন রচনা করো। (দাপ্তরিক বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন)
জানুয়ারি ০৭, ২০২০
প্রধান শিক্ষক
আদর্শ বিদ্যালয়
ঢাকা।
বিষয়: বিদ্যালয়ে আয়োজিত বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ সম্পর্কিত প্রতিবেদন।
সূত্র নম্বর: আ.বি.ঢা, বাসাসাস/০৬/০১/২০২০
মহোদয়,
যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি আপনার প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার একজন নিয়মিত ছাত্র। সম্প্রতি আমাদের বিদ্যালয়ে তিনদিন ব্যাপী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ- ২০২০ উদযাপন হয়ে গেল। আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আপনি আমাকে ঐ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে আদেশ দিয়েছেন।
অতএব, মহোদয়ের নিকট সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি আপনার আদেশানুসারে (সূত্র নম্বর: আ.বি.ঢা,বাসাসাস, ০৬/০১/২০২০) আদ্দিষ্ট হয়ে সম্প্রতি সমাপ্ত বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ-২০২০ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন নিচে উপস্থাপন করছি।
নিবেদক,
আপনার অনুগত ছাত্র
(মারুফ শাকুরী)
সাধারণ সম্পাদক, আদর্শ বিদ্যালয় সাংস্কৃতিক ক্লাব, ঢাকা
বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদযাপন কমিটি- ২০২০
সংযুক্তি :
প্রতিবেদনসহ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদযাপনের দু’টি স্থিরচিত্র।
ঢাকার আদর্শ বিদ্যালয়ে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদ্যাপন
ঢাকার আদর্শ বিদ্যালয়ে বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা গত ৩ জানুয়ারি থেকে ৬ জানুয়ারি, ২০২০ পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিযোগিতার শুভ উদ্বোধন করেছিলেন এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং শেষ দিন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান পুরস্কার বিতরণ করেন। সারা বছর নিয়মিত লেখাপড়ার পর বার্ষিক পরীক্ষার শেষে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে।
প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু ছিল বৈচিত্র্যময়। সব ধরনের শিক্ষার্থী যাতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সুপ্ত মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে সেজন্য বিষয়গুলো ছিল এ রকম : আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা’, নির্ধারিত বক্তৃতা, বিতর্ক, গদ্যপাঠ, পুঁথিপাঠ, হাসির গল্প বলা, ধারাবাহিক গল্প বলা, সুন্দর হস্তাক্ষর, প্রবন্ধ রচনা, স্বরচিত গল্প-কবিতা পাঠ, একক অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, আধুনিক গান, পল্লিগীতি, দেশাত্মবোধক গান ইত্যাদি। এতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণে আগ্রহী থাকায় বাছাইয়ের মধ্যে সীমিত সংখ্যক প্রতিযোগীকে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ঐ তিনদিন বিদ্যালয়ের হল মিলনায়তনে উপচে পড়া দর্শকের সামনে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়েছে মূল্যবান বই। সারা বছরের একাডেমিক পুরস্কারও এ সময়ে বিতরণ করা হয়। শ্রেণিশৃঙ্খলা, নিয়মিত উপস্থিতি ইত্যাদি বিষয়েও পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল। প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের জন্য একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করতে বলেন। বার্ষিক সাহিত্য সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা উপলক্ষে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল তা প্রতিযোগীদের সংখ্যাধিক্য থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায়। প্রতিযোগিতার সময় প্রতিযোগী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত শৃঙ্খলার পরিচয় দিয়েছে। শিক্ষকরা শৃঙ্খলা রক্ষায় সার্বক্ষণিকভাবে তৎপর ছিলেন। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পারস্পরিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি সফল হয়ে ওঠে।
বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা যেমন আনন্দ লাভ করেছে, তেমনই সারা বছরের অর্জিত পুরস্কারসহ বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার একটি সুন্দর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লাভ করায় শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত উৎসাহিত হয়েছে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্থানীয় অভিভাবকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বিপুল সংখ্যক অভিভাবক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পুরস্কার বিতরণের পর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে। বিদ্যালয়ের বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা : মারুফ শাকুরী, শ্রেণি: দশম, শাখা: বিজ্ঞান, রোল : ১
প্রতিবেদনের শিরোনাম : আদর্শ বিদ্যালয়ে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদযাপন
প্রতিবেদন রচনার তারিখ : জানুয়ারি ৭, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ
প্রতিবেদন তৈরির সময় : সকাল ১১টা
২। মনে করো, তোমার নাম সুমন। তুমি ‘ঢাকা পোস্ট.কম’ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। বর্তমানে নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রচনা করো। । (সংবাদপত্রের প্রতিবেদন)
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি : জনজীবন বিপর্যস্ত
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সুমন, ঢাকা, ০৮ জানুয়ারি ২০২০
সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে চরমভাবে। পিঁয়াজ ছাড়াও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর দাম ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এ অস্বাভাবিক ও আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে সমাজে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ।
দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করছেন অর্থনীতিবিদগণ। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এ আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ একাধিক। প্রথমত, এমন নৈরাজ্য এ দেশে চিরন্তন যে, মুনাফালোভী মজুতদাররা প্রায়শই অধিক মুনাফা অর্জনের মানসিকতায় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি। দেশের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ এরূপ ভাতা পেলেও অসুবিধার দায়ভার বহন করে সমাজের বৃহত্তম অংশ। লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, সরকার কর্তৃক মহার্ঘভাতা ঘোষণার পরক্ষণেই অজ্ঞাত কারণে বাজারে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারি কর্মচারীগণ যে হারে মহার্ঘভাতা পেয়েছে, দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে সরকারি কর্মচারীরাও সমস্যামুক্ত হতে পারেনি। তাই অবিলম্বে এ অনাকাক্সিক্ষত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এর প্রতিরোধকল্পে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত আবশ্যক।
মূল্যবৃদ্ধি আমাদের দেশে এটাই যে প্রথম, তা নয়। আমাদের দেশে এটি একটি অনিবার্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিজনিত এমন নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টির ঘটনা বিরল। অন্য দেশে এমনটি ঘটলে বিক্ষোভ দানা বেঁধে, সরকারকে জবাবদিহি করতে হয় জনগণের কাছে। কিন্তু এদেশের সরলপ্রাণ মানুষ এরূপ কোনো ঘটনা নিয়ে বেশি মাতামাতি পছন্দ করে না। অবস্থানদৃষ্টে মনে হয়, এ জাতীয় সমস্যা তারা এ দেশে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নিয়েছে এবং জনগণ এটাও মনে করে যে, এ বিষয়ে তাদের কোনো দায় নেই।
এ রকম পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস হলেও ঢাকার খিলগাঁও বাজার, কাওরানবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে বারবার। আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এসব ঘটনায় কেউ কেউ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এমন অমানবিক সমস্যাপীড়িত করে যারা নিজেদের সুখ-সম্পদ আহরণের চেষ্টার মত্ত, তারা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। এসব অসৎ ও দুর্নীতির লোকদের উৎখাত এখন সময়েরই দাবি। এ বিষয়ে সরকারি বেসরকারি অভিজ্ঞ মহলের মনোযোগ দেওয়া খুবই জরুরি মনে করেন সাধারণ জনগণ।
প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা : সুমন, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ‘ঢাকা পোস্ট.কম’, ঢাকা।
মোবাইল : 0171...86, ই-মেইল : [email protected]
প্রতিবেদনের শিরোনাম : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: জনজীবন বিপর্যস্ত
প্রতিবেদন রচনার তারিখ : জানুয়ারি ০৭, ২০২০
প্রতিবেদন তৈরির সময় : সকাল ১১টা
প্রতিবেদনের সংযুক্তি : প্রতিবেদনসহ দুটি বাজারের দুই কপি স্থির চিত্র।
প্রেরক প্রাপক
ই-মেইল: [email protected] ই-মেইল: [email protected]
শিক্ষক, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা
এমকে