নবম ও দশম ভাবসম্প্রসারণ : সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই
সুপ্রিয় নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। আজ তোমাদের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের নির্মিত অংশ থেকে আরো দু’টি ভাব-সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব। ভাব-সম্প্রসারণ লেখার সময় তোমরা মূল ভাব, সম্প্রসারিত ভাব, মন্তব্য এরূপ পয়েন্ট করে না লিখে অনুচ্ছেদ করে লিখবে। তাহলে বেশি নম্বর পাবে।
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই
ভাব-সম্প্রসারণ : মানুষে মানুষে অনেক ধরনের বিভেদ-বৈষম্য থাকতে পারে। কিন্তু সামগ্রিক বিবেচনায় সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে আমরা সবাই মানুষ।
সব মানুষ একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। সৃষ্টির মধ্যে মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ। পৃথিবীর একই জল-হাওয়ায় আমরা বেড়ে উঠি। আমাদের সবার রক্তের রং লাল। তাই মানুষ একে অন্যের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। ভৌগোলিকভাবে আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, অথবা আমরা যে যুগেরই মানুষ হই না কেন, আমাদের একটিই পরিচয় আমরা মানুষ। কখনো কখনো স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমরা জাত-কুল-ধর্ম-বর্ণের পার্থক্য তৈরি করে মানুষকে দূরে ঠেলে দিই, এক দল আরেক দলকে ঘৃণা করি, পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হই। কিন্তু এগুলো আসলে সাময়িক। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, আমরা একে অন্যের পরম সুহৃদ। আমাদের উচিত সবাইকে ভ্রাতৃত্ত্বের বন্ধনে আবদ্ধ রাখা। প্রত্যেককে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেয়া এবং তার অধিকার সংরক্ষণে একনিষ্ঠ থাকা। মানুষের মধ্যে নারী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ব্রাহ্মণ-শূদ্র, আশরাফ-আতরাফ, হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, কেন্দ্রবাসী-প্রান্তবাসী এমন ভাগাভাগি কখনোই কাম্য হতে পারে না। তাতে মানবতার অবমাননা করা হয়। তাই আধুনিককালে এক বিশ্ব, এক জাতি চেতনার বিকাশ ঘটছে দ্রুত। মানব জাতির একই একাত্ম-ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলে যুগে যুগে, দেশে দেশে মারামারি, যুদ্ধ-বিগ্রহ কমে আসবে। মানুষ সংঘাত-বিদ্বেষমুক্ত শান্তিপূর্ণ এক বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। সর্বত্র মনুষ্যত্বের জয়গাথা ঘোষিত হবে।
সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে, বিশুদ্ধভাবে ভালোবাসতে পারলেই বিশ্বে প্রার্থিত সুখ ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিশ্রাম কাজের অঙ্গ এক সঙ্গে গাঁথা
নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা।
ভাব-সম্প্রসারণ: কাজ এবং বিশ্রাম একে অন্যের পরিপূরক। কাজ আনে জীবনে সমৃদ্ধি আর বিশ্রাম আনে কাজের শক্তি ও প্রেরণা। কাজেই চলা এবং থামা এ দুয়ের মেলবন্ধনেই জীবনের ছন্দ।
কাজ ও বিশ্রাম আপাতদৃষ্টিতে বিপরীত বলে মনে হলেও প্রকৃত অর্থে তা একই প্রক্রিয়ায় দু’টি দিক। কাজের পাশাপাশি বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অনস্বীকার্য। চোখের পাতা যেমন চোখেরই একটা অংশ তেমনি বিশ্রামও কাজের একটা অংশ। চোখের কাজ দেখা কিন্তু চোখের পাতা সেই দেখার কাজ কখনও কখনও বন্ধ রেখে চোখকে অবসর দেয়। এতে চোখকে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়। আমরা যদি কিছু সময় একটানা কাজ করি, তবে আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং কর্মক্ষমতা লোপ পায়, একঘেয়েমির ফলে আসে গভীর অবসাদ ও ক্লান্তি। এ ধরনের পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য আমরা বিশ্রামের প্রয়োজন অনুভব করি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করলে আমাদের ক্লান্তি দূর হয়, মন প্রশান্ত হয় এবং আমাদের কর্মশক্তি ফিরে আসে। আমরা তখন নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কাজে আত্মনিয়োগ করতে সক্ষম হই। আর বিশ্রাম ছাড়া যদি আমরা ক্রমাগত কাজ করতে থাকি, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কাজের সফলতার জন্য এবং বেশি শক্তি অর্জনের জন্য কাজের সাথে উপযুক্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু দুঃখ হলেও সত্য, অনেক ধনিক শ্রেণির মানুষ আছেন, তারা তাদের স্বার্থের কারণে শ্রমিকদের বেশি কায়িক পরিশ্রম দিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করে থাকে। পক্ষান্তরে শোষিত গরিবেরা অবহেলিত, শোষিত, শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরা শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ইতিহাস পড়লে আমরা জানতে পারি যে, ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকরা ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজের ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকেই নির্য়াতিত হন এবং নিহত হন। অবশ্য ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়াতে ILO (International Labour Organization) সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজ করার পক্ষে যুক্তি পেশ করেন এবং মে মাসের ১ তারিখকে ‘বিশ্ব শ্রমিক দিবস’হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আবার সমাজে কিছু ভিন্ন চিত্রও দেখা যায়। আমরা ইংরেজি প্রবাদে পড়েছি- ‘Early to bed and early to rise, makes a man healthy, wealthy and the wise.’ কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী কিংবা গবেষককে দেখা গেছে যে, নিজের ইচ্ছায় তারা ভালো রেজাল্টের আশায় প্রায়শ প্রতি রাত জেগে লেখাপড়া করে কিংবা কম্পিউটারে কাজ করে। এতে অনেক সময় হিতে বিপরীতও হয়। টানা কাজের ফলে তাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে হয়। ফলে চিকিৎসার খরচও বেড়ে যায়। অথচ যদি নিয়মিত পরিকল্পনা অনুযায়ী রুটিন মাফিক কাজ করে বিশ্রাম নেয়া হয়, তাহলে তাদের তেমন জটিল কোনো সমস্যাই থাকবে না।
কাজ ও বিশ্রাম একে অপরের সাথে জড়িত। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে ভাবা যায় না। তাই কাজের সাথে সাথে বিশ্রামের প্রতিও গুরুত্ব দেয়া উচিত।
এমকে