মুক্তপাঠের সিঁড়ি বেয়ে লাখো মানুষ কর্মক্ষেত্রে
গরুর খামার করবেন বলে অনেকদিন ধরেই পরামর্শের জন্যে অনেকের কাছে গিয়েছেন জাহিদুল ইসলাম। তবে কারও তথ্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এরপর একজনের পরামর্শে ঘরে বসেই একটি পরিপূর্ণ কোর্স সম্পন্ন করেন। এখন তার খামারের আয়ে দিব্যি চলছে সংসার।
গরু মোটাতাজাকরণের প্রশিক্ষণটি জাহিদুল ইসলাম বাংলা ভাষায় সর্ববৃহৎ ই-লার্নিং প্লাটফর্ম ‘মুক্তপাঠ’ থেকে নেন। বিনামূল্যে কোর্সটি সম্পন্ন করেই মাঠে নেমে পড়েন সিরাজগঞ্জ জেলার এ খামারি।
আলাপকালে তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, আসলে কোনো কিছু শুরু করতে তো দরকার সঠিক তথ্য ও দিকনির্দেশনা। মুক্তপাঠ তাকে দুটিই দিয়েছে। ফলে এখন তিনি সফল একজন উদ্যোক্তা হতে পেরেছেন। এমন সুযোগ পাওয়ায় অনেক বড় উপকার হয়েছে তার।
তিনি বলেন, এখানে প্রশিক্ষণ শেষে শতভাগ ধারণা ও জ্ঞান নিই। এরপর স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলি। সরকারি অফিসে যোগাযোগ করি। সবমিলিয়ে সবার কাছ থেকেই ভালো ধারণা নিয়ে শুরু করেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শুধু জাহিদুল ইসলাম নন তার মতো লাখো মানুষ মুক্তপাঠ থেকে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রাথমিক ধারণা ও শিক্ষার শুরুটা মুক্তপাঠ থেকে হওয়ায় পরবর্তীতে ধাপে কাজ করতে গিয়ে তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি তাদের।
সূত্র জানায়, সরকারের এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের ই-লার্নিং প্লাটফর্ম মুক্তপাঠ থেকে সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। মুক্তপাঠে এ পর্যন্ত ১১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী নিবন্ধিত রয়েছে। যারা ২০০টির অধিক কোর্সের বিষয়ে জ্ঞানার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন। ১৮ লাখ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে কোর্স সমূহে এনরোল করেন।
এটুআই প্রকল্পের পলিসি স্পেশালিস্ট আফজাল হোসেন সারোয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুক্তপাঠ নামটা শুনলে যেমন মনে হয় মুক্ত। ঠিক এর কাজগুলোও তেমনি উন্মুক্ত। যে কেউ চাইলে এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। পাঠ্যবিষয়সহ কারিগরি, কর্ম, নীতিগত প্রায় সব ধরনের আয়োজনই আমাদের রয়েছে।
তিনি জানান, অনেক মানুষ এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভ করছেন। সবার জন্যে উন্মুক্ত এ প্লাটফর্ম থেকে অনেক কিছু জানা ও শেখার আছে। এখানে যারা শেখান তারাও কিন্তু অনেক দক্ষ। সুতরাং যে কেউ চাইলে মুক্তপাঠে যুক্ত হয়ে তার নিজস্ব চাহিদা মতো তথ্য সহযোগিতাসহ নানা দিক নির্দেশনা পেতে পারেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নয় লাখ ৫০ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী মুক্তপাঠ কোর্স সম্পন্ন করে সার্টিফিকেটও অর্জন করেছেন। ৫৫টি প্রতিষ্ঠান মুক্তপাঠের মাধ্যমে অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৬ হাজারেরও অধিক সরকারি কর্মকর্তা মুক্তপাঠে কোর্সসমূহে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইন কোর্সকে সহজ করার লক্ষ্যে মুক্তপাঠের একটি অ্যাপও প্রস্তুত করা হয়েছে।
যেভাবে যাত্রা শুরু
যে কোনো স্থান থেকে আগ্রহী যে কেউ যেন অনলাইনে জ্ঞানার্জন করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ প্রধানমন্ত্রী মুক্তপাঠ উদ্বোধন করেন।
মুক্তপাঠের অনলাইন কোর্সগুলো তৈরি করে থাকেন মূলত বিভিন্ন সরকারি ও স্বনামধন্য বেসরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কোর্সগুলোর ব্যবস্থাপনা ও মান নিয়ন্ত্রণ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কোর্সগুলোতে আগ্রহী যে কেউ অংশগ্রহণ করে প্রদত্ত পাঠ বা লেসন সম্পন্ন করে, লাইভ সেশনে অংশ নিয়ে এবং নির্ধারিত পরীক্ষা/কুইজ/অ্যাসাইনমেন্টে অংশ নিয়ে অনলাইনে সার্টিফিকেট পেতে পারেন।
মুক্তপাঠের অনলাইন কোর্সগুলোর পাশাপাশি রয়েছে অফলাইন ভার্সন। এর মাধ্যমে অনলাইন প্রশিক্ষণ ছাড়াও অফলাইনের কন্টেন্ট ব্যবহার করে যে কেউ শিখতে পারেন। মুক্তপাঠে সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টিগ্রেশন করা হয়েছে। ফলে মূল প্লাটফর্মের পাশাপাশি মুক্তপাঠের কন্টেন্ট ইউটিউব, গুগল প্লাস এবং ফেসবুকেও পাওয়া যাচ্ছে।
মুক্তপাঠ ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিকভাবে আইটিইউ কর্তৃক দেওয়া ওয়ার্ল্ড সামিট অব ইনফরমেশন সোসাইটি পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়াও প্লাটফর্মটি সোহেল সামাদ স্মৃতি পুরস্কার-২০১৮ পেয়েছে।
একে/আরএইচ