যুক্তরাষ্ট্রে অনিশ্চয়তায় টিকটকের বিনিয়োগকারীরা

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ভবিষ্যৎ আবারও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। চীনা মালিকানাধীন অ্যাপটির মার্কিন কার্যক্রম বিক্রির সময়সীমা আরও এক দফা বাড়তে যাচ্ছে। এর ফলে সম্ভাব্য মার্কিন বিনিয়োগকারীরা পড়েছেন অপেক্ষার ঘোরে।
টিকটক কিনতে আগ্রহী ধনকুবের বিনিয়োগকারী ফ্র্যাঙ্ক ম্যাককোর্ট জানিয়েছেন, তারা এখন শুধু অপেক্ষা করছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, সেটিই দেখছেন তারা। তবে সুযোগ এলে এগোতে প্রস্তুত আছেন বলেও জানান তিনি।
ম্যাককোর্ট বলেন, প্রয়োজনীয় অর্থ ইতিমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস একটি আইন পাস করে। সেই আইনে বলা হয়, চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সকে টিকটকের মার্কিন অংশ বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপটি নিষিদ্ধ হবে।
আইনপ্রণেতাদের অভিযোগ ছিল, বাইটড্যান্সের সঙ্গে চীনা সরকারের সম্পর্ক রয়েছে। এতে মার্কিন ব্যবহারকারীদের তথ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে এনে আইনটি পাস করা হয়।
টিকটক ও বাইটড্যান্স শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, ব্যবহারকারীদের তথ্য নিরাপদ। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্বে থাকাকালে আইনে স্বাক্ষর করেন। ২০২৫ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টও আইনটি বহাল রাখে।
তবে বাস্তবে বিক্রির সময়সীমা একাধিকবার পিছিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার পঞ্চম দফায় সময় বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
এর আগে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, টিকটক বিক্রির একটি সমঝোতা হয়ে গেছে। তিনি বলেছিলেন, এতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সম্মতিও রয়েছে। তবে সেই দাবি বাস্তবে রূপ নেয়নি।
ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, ‘সুশৃঙ্খল’ মার্কিন বিনিয়োগকারীরা টিকটক কিনবেন। তাদের মধ্যে ওরাকলের ল্যারি এলিসন ও ডেলের মাইকেল ডেলের নামও উল্লেখ করা হয়।
অক্টোবরে ট্রাম্প ও শির বৈঠকে চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠক শেষ হলেও কোনো চুক্তি হয়নি। চীন বা বাইটড্যান্স—কেউই বিক্রির অনুমোদনের কথা জানায়নি।
এ অবস্থায় বিশ্লেষকদের ধারণা, সময়সীমা আবারও বাড়বে। কারণ এখনো কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
ফ্র্যাঙ্ক ম্যাককোর্ট বলেন, টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম অত্যন্ত প্রভাবশালী। এ ধরনের প্ল্যাটফর্মের ক্ষমতা সীমিত হাতে থাকা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
ম্যাককোর্টের বিনিয়োগকারী দলে আছেন রেডিটের সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যালেক্সিস ওহানিয়ান। আছেন কানাডীয় বিনিয়োগকারী কেভিন ও’লিয়ারিও।
ম্যাককোর্ট জানান, তিনি চান টিকটক আইন মেনে পরিচালিত হোক। হোক বিক্রি, না হয় বন্ধ।
তিনি আরও বলেন, চীনা প্রযুক্তি ছাড়াই টিকটক চালাতে চান তিনি। বিশেষ করে বিতর্কিত রিকমেন্ডেশন অ্যালগরিদম বাদ দেওয়ার পক্ষে তিনি। তার ‘প্রজেক্ট লিবার্টি’ বিকল্প প্রযুক্তি তৈরি করেছে বলেও দাবি করেন।
টিকটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। সেই অনিশ্চয়তার মধ্যেই অপেক্ষায় আছেন বিনিয়োগকারীরা।