১০ম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার শুরু ২১ সেপ্টেম্বর
আগামী ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনব্যাপী ১০ম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার (এটিএফ) ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট সামিট (বিটিডিএস) ২০২৩ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের মেলা রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজন করা হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টায় বিআইসিসিতে মেলার উদ্বোধন করবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহাবুবুল আলম।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মেলা ও সামিট উপলক্ষ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণকে দেশবিদেশের মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় করা এবং আঞ্চলিক পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সেতুবন্ধন করতে এ মেলার আয়োজন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান রাহাত আনোয়ার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনো কুমার রায়, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) প্রেসিডেন্ট শিবলুল আজম কোরায়েশি, ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ট্রিয়ার) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খবির উদ্দিন আহম্মেদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান এবং ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি প্রতিনিধি সানিমুল হক ভূঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় পর্যটন বিচিত্রার আয়োজনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় আগামী ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিআইসিসিতে শুরু হচ্ছে ১০ম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট সামিট ২০২৩।
এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিল (আইএসসি) এবং ১০ম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার ২০২৩ এর চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলাল।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুজিবস বাংলাদেশ’র চলমান উদ্যাপনের সঙ্গে সংগতি রেখে ঢাকার বিআইসিসিতে ১০ম এটিএফ এবং বিটিডিএস ২০২৩ এর আয়োজন হতে চলেছে। যা ইতোমধ্যে পর্যটন জগৎ এবং এশিয়ার ভ্রমণ ক্যালেন্ডারে একটি অন্যতম প্রধান জায়গা অর্জন করে নিয়েছে। গত ৯ বছরে এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার এ অঞ্চলের ভ্রমণপিপাসু মানুষ ও পর্যটন পেশাদারদের একত্রিত হওয়ার জন্য একটি প্রধান প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হতে যাওয়া এ বছরের এটিএফ ১০ম বার্ষিকী উদ্যাপন করার কারণে আরও আকর্ষণীয় হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। মেলায় প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা কিন্তু অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করলে ছাত্রছাত্রীদের কোনো প্রবেশ মূল্য লাগবে না।
এটিএফ ঢাকা একটি বার্ষিক পর্যটন মেলা, যা প্রতি বছর ন্যাশনাল ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (এমটিও) ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যুর অপারেটর, ডেস্টিনেশন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (ডিএ), বিদেশি দূতাবাস এবং বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় ভ্রমণ অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে এক ছাদের নিচে একত্রিত করে।
এটিএফ ঢাকার এই বছরের থিম ‘কানেক্টিং রিজিওনাল ট্যুরিজম’, পর্যটন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা বিনিময়, সীমান্তের এপার-ওপার সংযোগ স্থাপন এবং আঞ্চলিক পর্যটন ভোট গঠনের গুরুত্বের ওপর জোর দিচ্ছে। মেলার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যটনের গুরুত্ব অনুধাবন করে বিটিডিএস ২০২৩-এ নানা সেমিনার এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য– Investment Opportunities in Tourism, Emerging Trend of Smart Tourism, Responsible Initiative for the Sustainability of Future Tourism, Future Skills Jobs and ENtrepreneurship in Tourism। প্যারালাল সেশনের ফোরাম ডিসকাসনে থাকবে পর্যটন বিষয়ক স্টোরি টেলিং, ক্যারিয়ার গাইডেন্স, প্রফেশনাল টক ও এনভারনমেন্টাল ক্লিনিক।
এ মেলা ও সামিটকে বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এবং অনুষ্ঠানের টাইটেল স্পন্সর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মতো সংস্থাগুলো সার্বিকভাবে সমর্থন করছে। এ সমর্থন পর্যটন শিল্পের প্রচার এবং বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে দেখানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতির অংশ।
এটিএফ ঢাকার সমাপনী শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, সংযোগ, সহযোগিতা, প্রাপ্তি এসব কিছুর একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতিফলন। অংশগ্রহণকারী সবাই শেষ দিনে একত্রিত হয়ে এর গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত করবেন এবং আগামী সুযোগ ও পরিকল্পনার পরামর্শ দেবেন। ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি ব্যাংক এবারের মেলার ব্যাংক পার্টনার। স্ট্রাটেজিক পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিআইডিএ) এবং স্কিল পার্টনার হিসেবে ন্যাশনাল ছিল। ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনএসডিএ) অংশগ্রহণ করায় মেলার আয়োজক পর্যটন বিচিত্রা পরিবার অত্যন্ত আনন্দিত।
আরও আছে, এটিএফ’র ১০ম সংস্করণে ইনোভেশন পার্টনার এটুআই (আইসিটি মন্ত্রণালয়), যার সহযোগিতায় আর্ট ট্যুরিজম নিয়ে আলোচনা আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভ্রমণ মেলা হিসেবে এটিএফ ঢাকা পর্যটন মানচিত্রে একটি বড় জায়গা নিয়ে আছে। পর্যটকরা লোভনীয় ভ্রমণ গন্তব্য, অনন্য অভিজ্ঞতা এবং বিশেষ ভ্রমণ প্যাকেজের বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। কোলাহলপূর্ণ শহর থেকে নিরিবিলি সৈকত, ঐতিহাসিক স্থান থেকে আধুনিক আকর্ষণ– ভ্রমণের প্রতিটি দিককে ভালোভাবে তুলে ধরবে এবারের মেলা।
এটিএফ ঢাকায় বাংলাদেশ, ভারত, চীন, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম এবং দুবাইসহ একাধিক দেশের ১৫০টি পর্যটন সংস্থার অংশগ্রহণের জন্য গর্বিত, যা এ মেলার আঞ্চলিক ব্যাপ্তি এবং প্রভাবের প্রতিফলন। বি টু বি ব্যবসার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যও এখানে বিভিন্ন প্যাকেজ, ডিসকাউন্ট ও অফার থাকবে।
এ খেলার অন্যতম সেরা আকর্ষণ হলো শিশুদের অংশগ্রহণ, কারণ তারাই ভবিষ্যতের অংশ। শিশুদের উৎসাহ দিতে প্রতি বছর মেলায় একটি বড় অঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই।
১০ম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার উদ্যাপনের জন্য বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শক প্রদর্শক এবং উৎসাহীরা ঢাকায় জড়ো হচ্ছেন। করোনা পরবর্তী জীবনে এবারের মেলা কেবল অতীতের উদ্যাপন নয়, বরং পর্যটনের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে চলা একটি ব্লু প্রিন্ট, যেখানে যোগাযোগ এবং তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে পর্যটনের নতুন দিগন্ত প্রসারিত হবে।
এ বছরের মেলায় মোট ১৫০টি পর্যটন প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে। যার মধ্যে ৫০টির অধিক বিদেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মেলার প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা, প্রবেশ কুপনের বিপরীতে র্যাফেল ড্র বিজয়ীদের জন্য থাকবে এয়ারলাইন্স টিকিটসহ আকর্ষণীয় গিফট বাউচার।
এমআই/এসএসএইচ/