গরুর দুধ উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। দুধের চাহিদার ৮০ শতাংশ আসে দেশীয় ডেইরি ফার্ম থেকে। এত অর্জনের পরও করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব ও যথাযথ তদারকির অভাবে কঠিন সংকটের মুখে পড়ছে দেশের ডেইরি শিল্প।

একদিকে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি অন্যদিকে চলমান বিধিনিষেধে দুগ্ধপণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় উভয় সংকটে পড়েছেন দেশের প্রায় ৭ লাখ দুগ্ধ খামারি।

খামারিদের দাবি, সংকট উত্তরণে এখনই পদক্ষেপ না নিলে পথে বসতে বাধ্য হবেন কয়েক লাখ খামারি। যদিও রোজার কারণে এখনো বাজারে দুধ ও মাংসের চাহিদা পর্যাপ্ত রয়েছে। তাই কোনোমতে টিকে থাকতে পারছেন তারা। কিন্তু বিধিনিষেধ যদি ঈদের পরেও অব্যাহত থাকে তাহলে অধিকাংশ খামারিই খামার বন্ধ করে দেবেন। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে গো-খাদ্যের দাম বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়ে গেছে। মজুতদারদের সিন্ডিকেটের কারণেই এ অবস্থা। কারণে-অকারণে তারা দাম বৃদ্ধি করছেন। একদিকে দুধের দাম কমছে, অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম বাড়ছে। যে কারণে উভয় সংকটে পড়তে হচ্ছে প্রতি বছর। এ জন্য প্রণোদনা না দিয়ে গো-খাদ্যের নাম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কৃষি শিল্পের অংশ হিসেবে ভর্তুকি সুবিধার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনসহ খামারিদের বিভিন্ন সংগঠন। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. এমরান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোজার মধ্যে এখন পর্যন্ত অবস্থা ভালো। তবে বিধিনিষেধ যদি আরও বেশিদিন থাকে তাহলে রোজার পরে খারাপ সময় আসতে পারে। ঈদের পরে হয়ত সংকট শুরু হয়ে যাবে। 

দুধের দাম কিছুটা কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, দুধের দাম একেক জায়গায় একেক রকম। সিরাজগঞ্জে দুধের দাম যেখানে ছিল ৪০-৪৫ টাকা। সেখানে দাম কমে ৩৮-৪০ টাকা হয়েছে। রাজধানীতে যেখানে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় দুধ বিক্রি করতাম। এখন লিটার প্রতি ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। গম ও ভূসির বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়ে গেছে। আমাদের অনুরোধ এ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কারণে-অকারণে তারা দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। 

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৫ লাখ খামারিকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৪৪৮ কোটি টাকা প্রণোদনা দেয় সরকার। যদিও ডেইরি খামারিদের দাবি গত বছর তাদের ক্ষতি হয়েছিল ৫ লাখ কোটি টাকা।

সরকারের প্রণোদনার বিষয়ে জানতে চাইলে এমরান হোসেন বলেন, সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে তাতে একজন খামারি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পেয়েছে। এ ধরনের প্রণোদনা আমরা চাই না। আমাদের দাবি হলো, গো-খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হোক। চাল ও তেলের দাম নিয়ন্ত্রণের মতো সরকার যেন গো-খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ নেয়। 

একই সঙ্গে ডেইরি শিল্পকে কৃষি শিল্পের মর্যাদা প্রদানের দাবি করে তিনি বলেন, কৃষি শিল্পের অংশ হিসেবে কোনো ভর্তুকি আমরা পাই না। তার ওপর রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ বিল সব কিছুই দিতে হচ্ছে বাণিজ্যিক হিসেবে। সরকার আমাদের পৃষ্ঠপোষকতার পরিবর্তে উল্টো হয়রানি করছে। 

বরিশাল বিভাগীয় ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও খামারি উজ্জ্বল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার খামারে পাঁচটি গরু আছে। সরকারি উদ্যোগে যদি এই মুহূর্তে গো-খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা না যায় তাহলে আমাদের মতো ক্ষুদ্র খামারিরা আর টিকে থাকতে পারব না। ভবিষ্যতে প্রণোদনা দিলেও তা দিয়ে নতুন করে আবার খামার শুরু করা কঠিন হবে। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ডেইরি ফার্মের সংখ্যা ৭ লাখ। এছাড়া গৃহস্থালি পর্যায়েও অনেক গরু লালন-পালন করা হয়। এ খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় এক কোটি মানুষ। ডেইরি ফার্মে উৎপাদিত দুধের মাত্র ১০ শতাংশ নেয় আড়ং, মিল্কভিটা, ফার্মফ্রেশের মতো শিল্প প্রতিষ্ঠান। বাকি ৯০ শতাংশই বিক্রি করা হয় ট্র্যাডিশনাল বাজারে। করোনার কারণে দুধ বিক্রেতাদের এই বড় বাজারটিতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

আরএম/এসকেডি/এইচকে/জেএস