‘একসিটে ১৭ ঘণ্টা টানা ফ্লাইটে বসে থাকতে হয়। ভাড়াও কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস-তার্কিশ এয়ারলাইন্সের মতোই বেশি। তবে কেন তাদের মতো আপ্যায়ন করবে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স?’

বিমানের গত ২৮ জুলাইয়ের টরন্টো থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইটে এক যাত্রীর এমন ‘আবদারে’ ফ্লাইটে হইচই তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্রুরা যাত্রীদের বারবার ‘দুঃখিত স্যার’ বলতে থাকেন। একপর্যায়ে বিমান কর্তৃপক্ষকে ‘অ্যালকোহল’ সরবরাহের বিষয়ে যাত্রীদের দাবির কথা জানাবেন বলে আশ্বাস দেন।

একই ঘটনা ঘটেছে বিমানের টরন্টোগামী দ্বিতীয় ফ্লাইটে। এই ফ্লাইটে ভারত ও নেপালের অল্প সংখ্যক যাত্রী থাকায় তারা কেবিন ক্রুর কাছে মদ চান। এ সময় ক্রুরা মদ সরবরাহ না করায় তারাও হইচই করেন।

আরও পড়ুন>> টরন্টো ফ্লাইটে দুই শতাধিক যাত্রী, অর্ধেক ভারত-নেপালের

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব ফ্লাইটেই অ্যালকোহল দেওয়া হয়, তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে এটি নিষিদ্ধ রয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় মদ সরবরাহের বিষয়টি বিমানের পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ে তোলা হবে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কানাডার মন্ট্রিয়াল প্রবাসী ও বিমানের ফ্লাইটে ঢাকায় আসা যাত্রী মনোয়ারুল আহমেদ অনয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, টরন্টো ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় ২০ ঘণ্টা ও দেশে ফেরার সময় প্রায় ১৭ ঘণ্টা সময় লাগে। এই দীর্ঘ সময়ে যাত্রীদের মধ্যে অবসাদ দেখা দেয়। দীর্ঘ পথে যাত্রীদের সর্বোচ্চ ইন-ফ্লাইট বিনোদনের ব্যবস্থা করে প্রতিটি এয়ারলাইন্স। অ্যালকোহল, বিয়ারসহ অনেক এয়ারলাইন্স ফ্লাইটে প্লেয়িং কার্ডস (তাস) দিয়ে থাকে। একই রকম ভাড়া নিলেও বিমান যাত্রীদের এসব বিনোদন দিতে পারছে না। এভাবে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।

এদিকে ইন-ফ্লাইট বিনোদনের বিষয়ে কোন কথা না বললেও বিমানের টরন্টো ফ্লাইটের বিষয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. যাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘আপাতত টরন্টো রুটে ভালো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে। আমরা ভারত এবং নেপালের থেকে যাত্রী পেয়েছি যারা নিজ দেশ থেকে ঢাকা হয়ে টরন্টো ফ্লাইটের টিকিট কেটেছেন। এটা খুবই ভালো সাইন।’ 

এর আগে গত বুধবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট কানাডার টরন্টোর উদ্দেশে রওনা হয়। যাত্রা বিরতিসহ ঢাকা থেকে টরন্টো যেতে ফ্লাইটটির মোট সময় লেগেছে সাড়ে ১৯ ঘণ্টা। এর মধ্যে ফ্লাইটটি আকাশে ছিল ১৭ ঘণ্টা।

বিমান সপ্তাহে রোববার ও বুধবার এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। প্রতি রোববার বিজি৩০৫ ঢাকা থেকে মধ্যরাত ৩টায় যাত্রা করে রিফুয়েলিংয়ের জন্য স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবতরণ করবে। এক ঘণ্টা বিরতি শেষে ইস্তাম্বুল থেকে রওনা দিয়ে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে ফ্লাইটটি টরন্টো পৌঁছাবে।

প্রতি বুধবার বিজি-৩০৫ বাংলাদেশ সময় মধ্যরাত ৩টা ৩০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে টরন্টোর উদ্দেশে যাত্রা করবে। যাত্রাপথে ফ্লাইটটি রিফুয়েলিংয়ের জন্য স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবতরণ করবে। এক ঘণ্টা বিরতি শেষে ইস্তাম্বুল থেকে রওনা দিয়ে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ফ্লাইটটি টরন্টো পৌঁছাবে।

চলতি বছরের ২৬ মার্চ দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকে টরন্টোর উদ্দেশে পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান। ফ্লাইটটিতে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও বিমানের এমডি ও অন্যান্য কর্মকর্তারা ছিলেন।

এআর/জেডএস