প্রায় ৯ বছর পর নতুন একটি এয়ারলাইন্স পেখম তুলে বাংলাদেশের আকাশ পরিবহনকে স্বস্তির আবহাওয়ায় ভরিয়ে দিচ্ছে। বাংলার আকাশে বিচরণ করতে যাচ্ছে দেশের নবীনতম বিমানসংস্থা এয়ারএ্যাস্ট্রা। বাংলাদেশের এভিয়েশনে আসছে ২৪ নভেম্বর তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় এয়ারএ্যাস্ট্রা। ঢাকা থেকে কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনার মধ্য দিয়ে দেশের আকাশপথকে রঙিন করে তোলার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছে তারা।

বাংলাদেশের আকাশ পরিবহন শিল্পের ইতিহাস অম্ল মধুর। নানারকম উচ্ছ্বাস আর আবহ নিয়ে দেশের আকাশপথে বিচরণ করার জন্য বেসরকারি বিমান সংস্থা জিএমজি এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজসহ ৮/৯টি এয়ারলাইন্সের শুভাগমন ঘটেছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আজ সেসব এয়ারলাইন্স ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়েছে। 

প্রায় ২৬ বছর যাবত বেসরকারি বিমানসংস্থাগুলো নানাভাবে বাংলাদেশ আকাশ পরিবহনকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। বারবার বন্ধুর পথে হোঁচট খেতে হয়েছে। বন্ধ হওয়ার মিছিলকে সমৃদ্ধ করেছে, যা কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমন এই বন্ধ হওয়ার মিছিলের পরিবর্তে এগিয়ে যাওয়ার মিছিলে রূপান্তরিত হবে এই প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ এভিয়েশন।

একটি এয়ারলাইন্সের আবির্ভাবে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা বাংলাদেশের মতো অধিক জনবহুল দেশে বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখে। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। একটি দেশের আকাশপথের গতিশীলতা থাকলেই অন্যান্য সকল শিল্পের গতিশীলতা বজায় থাকে। এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে অন্যান্য সকল শিল্পের গতিশীলতা আরও বেগবান হবে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প মূলত দেশীয় পর্যটকদের ওপরই নির্ভরশীল। দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও বেশি বিকশিত করার জন্য এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে যেন এই শিল্পে সুবাতাস বয়ে যাচ্ছে। শীতের প্রারম্ভে সারা বিশ্বের জনপ্রিয় নিউ জেনারেশন এয়ারক্রাফট এটিআর ৭২-৬০০ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে এয়ারএ্যাস্ট্রা।  

আরও পড়ুন : ‘যাত্রী সেবার মাধ্যমে আস্থা অর্জন করবে এয়ার অ্যাস্ট্রা’

কোভিড-১৯ এর কবলে পড়ে সারা বিশ্বের এভিয়েশন শিল্প চরম দোদুল্যমান অবস্থায় পড়েছিল। অনেক সুখ্যাতি সম্পন্ন এয়ারলাইন্স করোনা মহামারির করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে প্রি-কোভিড অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনি। সেখানে এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমন বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্পের অগ্রগতির পরিচয় বহন করছে, সাথে দেশের অর্থনীতির পজিটিভ সূচককে নির্দেশ করছে।

বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে করোনা মহামারিতে বিপরীত চিত্রও দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় দশ বছরের বেশি সময় ধরে সেবা দেওয়া এয়ারলাইন্স রিজেন্ট এয়ারওয়েজ কোভিড-১৯ এর শুরুতে বন্ধ হয়ে যায়, যা আজ অবধি আর ব্যবসায় ফিরে আসতে পারেনি।

বর্তমানের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা দিয়ে ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত রাখার নীতি থাকা উচিৎ প্রত্যেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। শুধুমাত্র বর্তমানকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভবিষ্যত ব্যবসাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে দেখা গেছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে। মহামারি এভিয়েশন শিল্প কিংবা এর সাথে সংশ্লিষ্ট পর্যটন শিল্প কিংবা হোটেল ইন্ডাস্ট্রির চরমভাবে ক্ষতি করেছে। 

করোনা মহামারির কারণে হাজার হাজার কর্মক্ষম লোক বেকার হয়ে গেছে। করোনা পরবর্তীতে এয়ারএ্যাস্ট্রার আগমনে প্রায় তিন শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে যা বেকার সমস্যা দূরীকরণে ভূমিকা রাখছে। প্রাথমিকভাবে দু’টি এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে এয়ারএ্যাস্ট্রা। ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম রুটে ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন নতুন এয়ারক্রাফট, নতুন নতুন রুট, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। 

এয়ারএ্যাস্টার আগমনের কারণে দেশের জিডিপিতে বাংলাদেশ এভিয়েশন ও পর্যটন শিল্পের অংশীদারিত্ব বাড়বে। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফসহ অভিজ্ঞতায় ভরপুর একটি পরিচালনা পর্ষদ এয়ারএ্যাস্ট্রাকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা থাকছে একজন এভিয়েশন কর্মী হিসেবে। 

এয়ারএ্যাস্ট্রা বাংলাদেশের আকাশ পরিবহনে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ারসহ জাতীয় বিমানসংস্থার সাথে উন্নত সেবা আর সাশ্রয়ী ভাড়ায় দেশীয় যাত্রীদের আস্থা অর্জন করবে এই প্রত্যাশা সকলের। প্রত্যাশার পারদ ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বগতির কারণে আশা করছি ভবিষ্যত পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে শেয়ার বৃদ্ধি করে দেশীয় এভিয়েশনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এয়ারএ্যাস্ট্রা।

একজন এভিয়েশন কর্মী হিসেবে এয়ারএ্যাস্টাকে জানাই স্বাগতম, সুস্বাগতম।


মো. কামরুল ইসলাম ।। মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স