২০২০ সাল থেকে চেষ্টা করেও যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লাইট পরিচালনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারছে না রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সম্প্রতি নতুনভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে তারা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানায়, বর্তমানে বিমানের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে নিউইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনা করা। তবে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আরও ছয়টি বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন করেছে তারা। বিমান ২০৩০ সালের মধ্যে এশিয়ার সেরা এয়ারলাইন্স হতে চায়। এ রুট তাদের সেরা হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিমান যে আবেদনটি করেছে সেটিকে ‘ফরেন এয়ার ক্যারিয়ার’ আবেদন বলা হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশনে (ডিওটি) জমা দেওয়া হয়েছে। বিমানের পক্ষে ডিওটিতে আবেদন করেন বিমানের অ্যাটর্নি (নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী) রবার্ট ডব্লিউ জনসন।

মোট ১৬৯ পাতার আবেদনপত্রে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, বর্তমানে তারা ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক রুটে সরাসরি সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়। মাঝে তুরস্কের ইজমির আদনান মেনদেরেস বিমানবন্দরে এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতি দিয়ে জেট ফুয়েল নেওয়া হবে। তবে, এ সময় কোনো যাত্রী ওঠানো বা নামানো হবে না।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশে আসার অপেক্ষায় ১২ বিদেশি এয়ারলাইন্স

বিমান আরও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে বিমান আরও ছয়টি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়। সেগুলো হচ্ছে- লস এঞ্জেলস, ওয়াশিংটন ডিসি, বোস্টন, হোস্টন, ডালাস ও নিউ জার্সি (নিয়ার্ক)।

এসব রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সম্ভাব্য যাত্রাবিরতির ১০টি বিমানবন্দরের নামও প্রস্তাব করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি, ইতালির রোম, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, তুরস্কের ইস্তাম্বুল ও ইজমির, ভারতের নিউ দিল্লি ও নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডাম।

বিমান তার অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়। এটি টানা ৭৯০০ মাইল উড়তে সক্ষম। তারপরও বিমান রিফুয়েলিংয়ের জন্য তুরস্কে যাত্রাবিরতি দেবে।

আরও পড়ুন : যান্ত্রিক ত্রুটি : ১১ ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ল বিমানের ফ্লাইট

রুটটি চালু হলে বিমানের কী পরিমাণ লাভ-ক্ষতি হবে, সে বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিমান যদি সপ্তাহে পাঁচটি করে ফ্লাইটের অনুমোদন পায় সে ক্ষেত্রে তারা প্রথম ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতে পারবে। তবে, ২৬০টি রিটার্ন ফ্লাইট পরিচালনার পর তারা ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো আয় করতে পারবে (যদি ৭০% সিট ভর্তি থাকে)।

এর আগে ২০০৫-০৬ সালে ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক রুটে ৭৯টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল বিমান। ওই সময় প্রতি ফ্লাইটে গড়ে ১৪৫ জন করে মোট ১১ হাজার ৪৫৫ যাত্রীবহন করেছিল তারা। তবে, লোকসানের কারণে রুটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) শফিউল আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সব ধরনের নিয়মকানুন মেনে সময় মতো নিউইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন করেছে। এ বছরের শুরু থেকে আমরা আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করি। আইনজীবী নিয়োগ দেই। তিনি আমাদের ৭০টি কোয়েরি দিয়েছিলেন।  আমরা সেগুলোর তথ্য দিয়েছি এবং সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আবেদন জমা দিয়েছি। বিমানের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার সে সব প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা- ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ও বাংলাদেশের বেবিচকের মধ্যে সবকিছু ঠিক থাকলে অনুমোদন পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন : ঢাকা টু মিডল ইস্ট—আকাশপথ কেন বিদেশিদের দখলে?

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো বিমানবন্দরে বাংলাদেশের ফ্লাইট পরিচালনার অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ‘লেভেল- ১ সেফটি রেটিংয়ে উত্তীর্ণ’ করতে না পারা। বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) যখন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) রেটিংসহ সব শর্ত পূরণ করবে কেবল তখনই দেশটিতে উড়ার স্বপ্নপূরণ হবে বিমানের।

এআর/এসএম