শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টিভির পর্দায় দেখানো হচ্ছে ফ্লাইট বাতিলের চিত্র

গত ১১ এপ্রিল সভা করে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। মাত্র চারদিনের মাথায় ১৫ এপ্রিল বিশেষ ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয় ফ্লাইট চলাচল। এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, বেবিচকের এমন ‘হুটহাট’ সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা। যাত্রী না পেয়ে কয়েকটি ফ্লাইট বাতিলও হয়েছে। শনিবার (১৭ এপ্রিল) মোট সাতটি ফ্লাইট বাতিল করেছে এয়ারলাইন্সগুলো। একই কারণে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা

এয়ারলাইন্সগুলোর বক্তব্য হলো, ১৫ এপ্রিল রাত ৯টার পর তারা জানতে পারে যে ১৭ তারিখ (এপ্রিল) থেকে পাঁচ দেশে ফ্লাইট চালু হবে। এর পরপরই ফ্লাইট চালু ও অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে একদিনের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন দুষ্কর ছিল। তাই শনিবার সব মিলিয়ে সাতটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। 

এত অল্প সময়ে বেশ কয়েকটি দেশের বিমানবন্দর উড়োজাহাজ অবতরণের অনুমতি দেয়নি। এছাড়া যাত্রীরাও করোনা টেস্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি। তাই ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ফ্লাইটের যাত্রীদের ৭২ ঘণ্টা আগে বাধ্যতামূলক করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য হোটেল বুকিংয়ের কপি, হেলথ ইন্স্যুরেন্স এবং বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এত অল্প সময়ের মধ্যে তাদের পক্ষে এগুলো সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল না বলে অনেকেই শনিবারের টিকিট কাটেননি। ফলে ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে।

এত অল্প সময়ে বেশ কয়েকটি দেশের বিমানবন্দর উড়োজাহাজ অবতরণের অনুমতি দেয়নি। এছাড়া যাত্রীরাও করোনা টেস্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি। তাই ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা

ফয়েজ আহমেদ রিয়াদ নামের এক প্রবাসী বলেন, ‘সরকার হুটহাট করে একদিনের ব্যবধানে ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত দিল। অথচ ফ্লাইটে চড়ার জন্য যে করোনা সার্টিফিকেট লাগে, সেটা নিতেই ৪৮ ঘণ্টা লেগে যায়। এছাড়া শুক্রবার সরকারি ছুটির কারণে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অনুমোদনও নেওয়া যায়নি। সবমিলে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’

বিমান বন্দরে এসে জানতে পারেন ফ্লাইট বাতিল, ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা

সন্ধ্যায় ২৬৫ যাত্রী নিয়ে সৌদি গেল বিমানের প্রথম বিশেষ ফ্লাইট

শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ২৬৫ যাত্রী নিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশ্যে উড়াল দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম বিশেষ ফ্লাইট। বিমানের জনসংযোগ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার জানান, বিমানের ফ্লাইট নম্বর বিজি ৪০৩৫ ফ্লাইটটি জেদ্দার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এটি স্থানীয় সময় রাত ১০টায় জেদ্দায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

শনিবার বাতিল হয়েছে যেসব ফ্লাইট

বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে যাওয়া ১০টি ফ্লাইটের মধ্যে পাঁচটি এদিন (শনিবার) বাতিল হয়েছে। বাতিলের অন্যতম কারণ ছিল অবতরণের অনুমতি না পাওয়া এবং যাত্রী সংকট। বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর মধ্যে ৩১৪ যাত্রী নিয়ে বিমান বাংলাদেশের রিয়াদের ফ্লাইটটির উড্ডয়নের কথা ছিল সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে। ফ্লাইটটি সৌদিতে অবতরণের অনুমতি পায়নি। তবে, ফ্লাইটটি মধ্যরাত ৩টায় ফের উড্ডয়নের কথা রয়েছে।

একই কারণে ঢাকা থেকে দাম্মামের ১৫১ যাত্রীবাহী এবং দুবাইয়ের ২৯০ যাত্রীবাহী ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। এছাড়া বিমানের দুবাইগামী (দ্বিতীয় ফ্লাইট) বিজি- ১৪৭ ফ্লাইটটিতে মাত্র ১০ জন যাত্রী হওয়ায় সেটিও বাতিল করা হয়েছে।

এদিন (শনিবার) বাংলাদেশে আসা দুটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। দুবাই থেকে ফ্লাই দুবাই এবং বিমান বাংলাদেশের রিয়াদের ফ্লাইটটি। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাই দুবাইয়ের ফ্লাইটটিতে ফেরার পথে মাত্র ১০ যাত্রী টিকিট কাটেন। আর বিমানে ওঠেন মাত্র দুজন যাত্রী। 

এছাড়া সকালে সালাম এয়ারের একটি ফ্লাইট মাসকাট থেকে ৪০ যাত্রী নিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে। ইতিহাদের একটি ফ্লাইট ১৪৫ যাত্রী নিয়ে রাত ৭টার ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশে অবতরণ করে।

এ প্রসঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ উল-আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

টিকিটের জন্য সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের বাইরে প্রবাসীদের ভিড়

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-পিআর) তাহেরা খন্দকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মাত্র ২০ থেকে ২২ জন যাত্রী থাকায় এসব ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। আমরা বলেছিলাম, ফ্লাইট চলাচল বন্ধের নির্দেশনার কারণে বাতিল হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীরা টিকিট পরিবর্তন করে এসব ফ্লাইটে চড়তে পারবেন। তবে যাত্রীদের করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেটসহ নানা কাগজপত্র প্রস্তুত করে ভ্রমণ করতে হয়। এ কারণে হয়ত তারা আজ ফ্লাইটের টিকিট বুক করতে পারেননি।’

এদিকে, ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়ে ফের ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘করোনার প্রাদুর্ভাবে ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণার পর পরবর্তীতে যাত্রীদের স্বার্থেই আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয়ে বৈঠক করি। এরপর এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিই।’

টিকিটের জন্য সড়কে বিক্ষোভ

একদিকে যখন যাত্রীর অভাবে ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে, অন্যদিকে ১৪ থেকে ১৬ এপ্রিল বাতিল হওয়া ফ্লাইটের টিকিটের তারিখ পরিবর্তনের জন্য রাজধানীতে বিক্ষোভ হয়েছে। শনিবার সকালে কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও হোটেলের বাইরে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন প্রবাসীরা। তবে করোনা সংক্রমণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে কার্যালয়টি এ সময় বন্ধ ছিল।

সেখানে উপস্থিত আয়নাল হোসেন নামে এক জেদ্দা প্রবাসী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার থেকে ফ্লাইট চালুর কথা শুনে সৌদি এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ে আসি। এখানে এসে তাদের কার্যালয় বন্ধ পাই। আমার ১৫ তারিখের (এপ্রিল) ফ্লাইট ছিল। এখন কবে যাব, কবে করোনার টেস্ট করাব, কিছুই জানি না। কর্তৃপক্ষও কিছু বলছে না।

এদিকে, সৌদি এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় বলা হয়েছে, সৌদি এয়ারলাইন্সের শিডিউল ফ্লাইট চলবে। তবে ১৪, ১৫ ও ১৬ এপ্রিলে বাতিল হওয়া ফ্লাইটের বিষয়ে সেখানে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

শাহজালালে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে বিমানের বহর

এর আগে ১১ এপ্রিল বেবিচক জানায়, ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ চলাকালীন সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দেওয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে।

গত ১৫ এপ্রিল এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে শনিবার থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে প্রায় ১০০টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের কারণে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার অভিবাসী শ্রমিককে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরার সুযোগ দিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়।

এআর/আরএইচ/এমএআর