ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল আবর্জনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ, মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘শতবর্ষের মিলনমেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এ আয়োজনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মেলায় আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। 

উপহার সামগ্রীর নিম্ন মান, নিম্নমানের খাবার, বিভিন্ন সামগ্রীর অপ্রতুলতা ও ঠিক সময়ে টোকেন না পাওয়াসহ নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তোলেন অনেকেই। সব মিলিয়ে আয়োজন দেখে সাবেক শিক্ষার্থীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।

তারা বলছেন, অনুষ্ঠানের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি দেড় হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। সস্ত্রীক আসতে চাইলে আলাদাভাবে স্ত্রীর রেজিস্ট্রেশনও করতে হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এ আয়োজনে স্পনসর হিসেবে ছিল। সে অনুযায়ী প্রত্যাশাও ছিল বেশি। কিন্তু অনুষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা হতাশ করেছে।

মিলনমেলায় অতিথিদের সকাল সাড়ে ৮টা থেকে নাস্তা দেওয়া হয়। নাস্তায় ছিল দুটি পরটা, ভাজি, হালুয়া, ডিম ও এক বোতল পানি। সাবেক শিক্ষার্থীরা বলছিলেন, রাতে প্যাকেট করা এসব খাবার মুখেও দেওয়া যাচ্ছিল না। পরোটা ছিল ইটের মতো শক্ত।  অনেকে খেতে না পেরে নাস্তা ফেলে দেন।

অতিথিদের বক্তব্য পর্বে পুরো প্যান্ডেল অনেকটা শূন্য হয়ে যায়। সূচি অনুযায়ী দুপুরে ১টা ২০ মিনিটে মধ্যাহ্নভোজ পর্ব শুরু করার কথা থাকলেও ৩০ মিনিট আগে থেকে খাবার পরিবেশন শুরু হয়ে যায়। যার ফলে প্যান্ডেল ছেড়ে সবাই খাবার খেতে চলে যান। 

তখন বক্তব্য রাখার এক পর্যায়ে সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদু বলেন, শুরু থেকে অনুষ্ঠানের যে আমেজ ছিল সেটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এরপর তিনি এক মিনিট বক্তব্য দিয়েই নেমে পড়েন। এ সময় অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার আসনে বসার জন্য সবাইকে বারবার অনুরোধ করেন।

অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে বিশেষ করে খাবার পরিবেশনের স্থানে পরিবেশ ছিল নাজুক। দেখা যায়, যে যেখানে খুশি খাবারের উচ্ছিষ্ট ও ময়লা ফেলে গেছেন। কিন্তু পরিষ্কার করার কেউ নেই। পাশাপাশি হাত পরিষ্কার করার জন্য স্থাপিত বেসিনগুলোতে পর্যাপ্ত হ্যান্ডওয়াশ ছিল না, জমে ছিল পানি। অনুষ্ঠানে খাবারের জন্য বসানো হয় প্রায় ২০০টি টেবিল। কিন্তু সে অনুযায়ী খাবার পরিবেশকের সংখ্যা ছিল খুবই কম।

পাশাপাশি অনুষ্ঠানের পূর্বঘোষিত সময়সূচির মধ্যেও কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয় ১৫মিনিট পর আর সূচি অনুযায়ী দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের আগে উদ্বোধনী আলোচনা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি শেষ করতে দুপুর ১টা পার হয়ে যায়। মূল আলোচনা ‘বাংলাদেশের পথযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’ ১২টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে ১টা ২০ মিনিটে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অনুষ্ঠান শুরু করতেই দেড়টা বেজে যায়।

আনিসুর রহমান নামে সাবেক এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের শতবর্ষের মিলনমেলায় এমন আয়োজন দেখে হতভম্ব হয়েছি। এত টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়ে নিম্ন মানের উপহার, খাবারের মানও খারাপ। সকালের নাস্তা খেতে হয়েছে বাইরে গিয়ে। এছাড়া দুপুরের খাবারের সময় নিজেদের খাবার নিজেদেরই পরিবেশন করতে হয়েছে। সবমিলে উপস্থিত থাকতে পেরে ভালো লাগলেও ব্যবস্থাপনা ভালো লাগেনি।

মাসুদুর রহমান নামে সাবেক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির এ অনুষ্ঠানের উপহারসামগ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি বলেই  আমি মনে করি। কালো রঙের চটের ব্যাগে পানি লাগলেই রঙ উঠে নষ্ট হবে এবং ব্যবহারকারীর পোশাক নষ্ট করবে। এছাড়া খাবারের মানসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনাও ভালো লাগেনি। আরও ভালো কিছু আশা করেছিলাম।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি ছিল না। কারো কোনো অভিযোগ নেই, সবাই আনন্দ করেছেন। দু-চারজন মানুষ তো এমন থাকবেই। আমরা তো সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারব না। এমন একটি অনুষ্ঠান এ সময়ে করতে পারছি, এটাই তো আমাদের কাছে বড়।

এইচআর/আরএইচ