জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন সংগঠনের পদবঞ্চিত শতাধিক নেতা।

শনিবার দুপুরে পদবঞ্চিত নেতাদের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুহুল কবির রিজভীর মাধ্যমে স্মারকলিপি দেন।

স্মারকলিপিতে তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পদবঞ্চিতরা বলেন, আমরা ওয়ান-ইলেভেনের দুঃসময় থেকে শুরু করে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাজনীতিকেই আমরা আমাদের জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছি। বারংবার জেল-জুলুম ও নিপীড়নের শিকার হয়েও রাজপথ ছাড়িনি। এরপর ২০১৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের আন্দোলন, ২০১৫ সালের আন্দোলনসহ দলীয় সকল ঝুঁকিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমরা সক্রিয় থেকেছি। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

এতে নেতারা আরও বলেন, আমরা এ নিয়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বারবার সাক্ষাৎ করে দুঃসময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নেতাকর্মীদের প্রাপ্য মূল্যায়ন নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে প্রতীকী অনশনের মাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কোনো দাবি নয়, নেতাকর্মীদের প্রাপ্য অধিকার। ছাত্রদলের ইতিহাসে এবারই প্রথম দীর্ঘ আড়াই বছরেও কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারা।

তারা বলেন, বিদ্যমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হলে আমাদের অনেক সহযোদ্ধার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিপন্ন হতে পারে। পরবর্তী কমিটির বয়সের বিধিনিষেধের জটিলতায় অনেকেই বাদ পড়তে পারেন। দুঃসময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেকেই দীর্ঘদিনের ত্যাগ ও পরিশ্রমের কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন না পেয়েই সংগঠন থেকে বিদায় হবার আশঙ্কা করছেন। এ অবস্থায় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উদাসীনতায় আমাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় আমাদের আশা-ভরসা ও ন্যায্যতা প্রাপ্তির চূড়ান্ত ভরসাস্থল হিসেবে আমরা একান্তই বাধ্য হয়ে আপনার দ্বারস্থ হলাম। আমরা জীবনের সোনালী সময়গুলো জাতীয়তাবাদের রাজনীতির জন্য নিবেদিত করেছি। শুধু একটা সাংগঠনিক পরিচয় নিয়ে সংগঠনে কাজ করার সুযোগ চাই। আমরা স্বল্প মেয়াদের জন্যে হলেও আমাদের প্রাপ্য একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি চাই।

স্মারকলিপি প্রদানে প্রতিনিধিদলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা মো. মুতাছিম বিল্লাহ, মো. আনোয়ার পারভেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. শামীম হোসেন, ঢাকা কলেজের জহির হাসান মোহন, তিতুমীর কলেজের রেজওয়ানুল হক সবুজ, হাফিজুর রহমান লিটন, বাংলা কলেজের  শামীম খান, ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সম্রাট খান, কাজী সাইমুমসহ ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের পদ প্রত্যাশী নেতৃবৃন্দ।

মুতাছিম বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি পূর্ণাঙ্গের জন্য আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। হঠাৎ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। অথচ দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতি করেও আমরা প্রাপ্য সম্মান পেলাম না। আমরা চাই স্বল্প মেয়াদে হলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়ে সম্মানজনক বিদায়। আশা করি, আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার কারণে প্রায় দুই বছর চলে গেছে। তবুও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারা আমাদের ব্যর্থতা। আমরা আমাদের জায়গা থেকে নেতার কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। এখন সংগঠনের অভিভাবক সংগঠনের ভালোর জন্য যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সে সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাব।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে ফজলুর রহমান খোকন সভাপতি এবং ইকবাল হোসেন শ্যামল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর এ কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি বর্তমান নেতৃত্ব। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়।

এইচআর/এসকেডি