রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় বিচার দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)।

শুক্রবার (২২ এপ্রিল) ডুজার সভাপতি মামুন তুষার ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রুবেল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, নিউ মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সময় দীপ্ত টিভির সাংবাদিক আসিফ সুমিত, মানবজমিনের শুভ্র দেব, ডেইলি স্টারের প্রবীর দাস ও বাংলা ট্রিবিউনের শাহেদ শফিকসহ আরও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হন। বিবদমান দুই পক্ষের সমর্থকরা যেভাবে সাংবাদিকদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছেন, তা কোনো সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারে না। এ ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে পদদলিত করা হয়েছে৷ এই ঘটনা একইসঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্মম দৃষ্টান্ত।

গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, নিউ মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনটি মামলা হয়েছে৷ তিন মামলার মধ্যে দুটির বাদী পুলিশ৷ এর মধ্যে একটি মামলা করা হয়েছে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে, অন্যটি দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জ্বালাও-পোড়াও ও পুলিশের কাজের বাধা দেওয়ার অভিযোগে৷ অন্যদিকে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত ডেলিভারি ম্যান নাহিদ মিয়ার চাচা মো. সাঈদ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন৷
 
নিউ মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সময় সাংবাদিক নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে৷ কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা-ব্যথা নেই৷ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো ধরনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না৷ এটি অনুমেয় যে নির্যাতিত-লাঞ্ছিত সাংবাদিকেরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সমর্থন না পেলে আইনি জটিলতায় নিজেদের জড়াতে চাইবেন না৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি মনে করে, অতীতে সাংবাদিক নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনায় কোনো বিচার বা প্রশাসনিক পদক্ষেপের উদাহরণ না থাকায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে৷ নিউ মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনার সময় সাংবাদিকদের নির্যাতন-লাঞ্ছনার ঘটনাসহ অতীতে ঘটে যাওয়া এ ধরনের ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাংবিধানিক অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি৷

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, আপনারা প্রয়োজনীয় সব ধরনের সমর্থন নিয়ে নির্যাতিত-লাঞ্ছিত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াবেন৷ কারণ প্রতিশ্রুতিশীল ও দক্ষ সাংবাদিকরাই গণমাধ্যমের প্রাণশক্তি৷ তারা ভালো থাকলে গণমাধ্যমও ভালো থাকবে৷ রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সাংবিধানিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সাংবাদিক নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনার প্রতিকারে প্রয়োজনে পৃথক আদালত গঠন করা হোক৷ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে গণমাধ্যমের অসামান্য ভূমিকাকে বিবেচনায় নিয়ে সাংবাদিক নির্যাতন ও লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হোক৷

এইচআর/এসকেডি