নৃ-বৈচিত্র্যমণ্ডিত প্রাকৃতিক লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম। এখানকার অধিকাংশ মানুষ দুর্গম এলাকায় বসবাস করে। মৌলিক সেবাসমূহ তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছানো কষ্টসাধ্য। সঙ্গত কারণেই শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের লোকজন। ‘আলোকিত হোক পাহাড়’ স্লোগানকে সামনে রেখে পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী এবং তাদের শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে ‘হিল সোসাইটি’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন।

পাহাড়ে আলো ছড়ানোর লক্ষ্যে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন পার্বত্য অঞ্চলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা হলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী সাদিক কায়েম, একই বর্ষের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী ইরফানুল হক ও সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের এস এম ফরহাদ।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সামাজিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে এ সংগঠন। বিশেষ করে পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে গত বছর ‘ফ্রি অ্যাডমিশন কেয়ার’ প্রজেক্টের মাধ্যমে ২৫০ এর বেশি শিক্ষার্থীকে বিভিন্নভাবে শিক্ষা সহায়তা ও পরামর্শ দিয়েছে পাহাড়ের আলোকবর্তিকা খ্যাত  হিল সোসাইটি । ২০২০-২১ সেশনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় হিল সোসাইটির ফ্রি অ্যাডমিশন কেয়ার  প্রজেক্টের মাধ্যমে পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় পার্বত্য অঞ্চল থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক (৫৩ জন) শিক্ষার্থী চান্স পেয়েছে। চান্স পাওয়া এ শিক্ষার্থীদের সম্প্রতি সংবর্ধনা দিয়েছে সংগঠনটি।

হিল সোসাইটির ফ্রি অ্যাডমিশন কেয়ারের সার্বিক দিক-নির্দেশনা ও সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন তানভীর ইসলাম। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘হিল সোসাইটিকে আমি আজীবন মনে রাখব, কারণ এ সংগঠন আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে স্বপ্ন দেখতে হয় এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে যেতে হয়। আমার ভর্তি ও যাবতীয় সমস্যায় হিল সোসাইটি যেভাবে পাশে ছিল, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। পাহাড়ে শিক্ষার উন্নয়নে হিল সোসাইটির অবদান পাহাড়ের মানুষ মনে রাখবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী সানু আক্তার নদী বলেন, ‘হিল সোসাইটি পরিবারের নিঃস্বার্থ কঠোর পরিশ্রমের ফলেই আজ আমরা এতটুকু আসতে পেরেছি। তাদের এ অবদান কোনো কিছুর বিনিময়ে কখনো শোধ করতে পারব না। অ্যাডমিশনের আগে থেকে শুরু করে এখনো হিল সোসাইটি পরিবার আমাদের পাশে আছে। এ সোসাইটির হাত ধরেই আমাদের পাহাড় এগিয়ে যাচ্ছে।’

হিল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাদিক কায়েম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী এবং তাদের শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করার জন্য আমরা হিল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছি। অভাবী ও ছিন্নমূলদের জন্য ত্রাণ, শিক্ষার্থীদের ফ্রি অ্যাডমিশন কেয়ার, লিডারশিপ বিল্ডিং প্রোগ্রাম, ভর্তি সহায়তা, কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনাসহ বিভিন্ন ধরনের এনলাইটেন প্রোগ্রামের মাধ্যমে পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছি আমরা।’

সহ-প্রতিষ্ঠাতা এস এম ফরহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যে মাটিতে বেড়ে উঠেছি, সে মাটির মানুষগুলোকে সুন্দর একটি সমাজ উপহার দেওয়ার প্রত্যয় নিয়েই আমরা হিল সোসাইটি গড়ে তুলি। আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করলে পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে পিছিয়ে। এ সব সমস্যার সমাধানকল্পে খুবই ছোট্ট পরিসরে কাজ শুরু করলেও ২ বছর পার না হতেই শত শত সচেতন শিক্ষার্থী আমাদের স্বেচ্ছাসেবক টিমে যুক্ত হয়েছে। কাজের পরিধিও বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে। এই স্বপ্নবাজ তরুণদের হাতেই আলোকিত পাহাড় গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে বলে প্রত্যাশা করি।’

আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইরফানুল হক বলেন, ‘হিল সোসাইটি পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ও গঠনমূলক উন্নয়ন করতে চায়। দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসরত পাহাড়ের মানুষদের পাশে থাকতে চায় হিল সোসাইটি। আমরা আলোকিত পাহাড় গড়ায় অবদান রাখতে চাই।’

এইচআর/আরএইচ