ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের নানা ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে না থাকে কোথাও একটু বসা বা টয়লেটের ব্যবস্থা, না থাকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা।  

এসব ভোগান্তি লাঘবে এবার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এই অভিভাবকদের বসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তারা করেছে চায়ের আয়োজনও। আর তাতেই অভিভাবকদের মন জিতে নিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 

গতকাল শুক্রবার এবং আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিট ও ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলার সময় ক্যাম্পাসের মল চত্বরে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্য চায়ের ব্যবস্থা করে ছাত্রলীগ। সেখানে তারা একটি ছাউনি টাঙায় এবং অভিভাবকদের বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করে। টাঙানো হয় একটি ব্যানারও, যাতে লেখা রয়েছে ‘চায়ের স্টলে অভিভাবকদের নিমন্ত্রণ’। দেখা যায়, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিজেরা চা বানিয়ে তা পরিবেশন করছেন অভিভাবকদের। অভিভাবকরাও এই আতিথ্য খুশি মনে গ্রহণ করছেন।

ক্যাম্পাসের সবুজের মাঝে বিশেষ এই চায়ের স্টলের দায়িত্বে ছিল মাস্টার দা সূর্যসেন হল এবং রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগ। আয়োজনের পেছনে থাকা নেতাকর্মীরা বলছেন, প্রতিদিন ৭০০-৮০০ অভিভাবকের জন্য তারা এ ব্যবস্থা রেখেছেন। চায়ের পাশাপাশি রাখা হয় লেবুর শরবতও। এছাড়া ঢাবি ছাত্রলীগের আরও একটি চায়ের স্টল ছিল কার্জন হলে। সেখানে অভিভাবকদের চা পান করানোর দায়িত্বে ছিল সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগ।

ঢাবি ছাত্রলীগের এমন আপ্যায়নে খুশি অভিভাবকরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এমন আপ্যায়ন পাব ভাবিনি। আমাদের বসার পাশাপাশি চায়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমন সুন্দর আয়োজনের জন্য ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ। 

কুমিল্লা থেকে ভর্তিচ্ছু মেয়ের সাথে এসেছিলেন আব্দুল হামিদ। অভিভাবক ছাউনিতে বসে চা পান করতে দেখা যায় তাকে। কেমন লাগছে জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এর আগে ২০১৮ সালে আমি আমার বড় মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেছিলাম, তখন এমন পরিবেশ পাইনি। বসারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এবার ছোট মেয়েকে নিয়ে এসে দেখলাম বেশ পরিবর্তন এসেছে। খুবই ভালো লাগছে, দারুণ পরিবেশ, ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ।

সাভার থেকে আসা আসমা আক্তার বলেন, এত সুন্দর আয়োজন দেখে ভালো লাগছে। আমার ছেলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারলে আরও ভালো লাগবে। যারা আমাদের সেবা করছে তাদের ধন্যবাদ।

সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান বলেন, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এখানে এসে বিড়ম্বনায় পড়েন। তাদের কথা বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অভিভাবক ছাউনি করা হয়েছে। আর এখানে অবস্থান করা অভিভাবকদের আমরা চায়ের নিমন্ত্রণ জানিয়েছি এবং বিনামূল্যে চা পান করাচ্ছি। আমরা নিজেরাই চা বানাচ্ছি।

রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসেন বলেন, আমরা আজ দুই দিন অভিভাবকদের চা পান করিয়েছি। প্রতিদিন ৭০০-৮০০ অভিভাবক আমাদের বানানো চা খেয়েছেন। এছাড়া যারা চা খান না তাদের জন্য আমরা লেবুর শরবতেরও ব্যবস্থা করেছি। তারা খুবই খুশি হয়েছেন এবং আমাদের জন্য দোয়া করেছেন।

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ভর্তি পরীক্ষা বা যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা আমাদের দেশে রীতিমতো উৎসবের মতো। দলবেঁধে আমাদের স্বজন ও পরিবার আসেন আমাদের ক্যাম্পাসে। এই সময়টুকুতে যেন তারা নিশ্চিন্তে থাকেন, সুন্দর পরিবেশ পান, ক্যাম্পাসের ছেলেমেয়েদের সাথে আড্ডা আর গল্প করতে পারেন, সেজন্যই এই বদ্বীপের মানুষের প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কর্মসূচি নিয়েছে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বরণডালি নিয়ে। ক্যাম্পাসজুড়ে রয়েছে ছাত্রলীগের অভিভাবক ছাউনি, চায়ের স্টলে নিমন্ত্রণ। জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল টয়লেট ব্যবহারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। 

চায়ের স্টল ছাড়াও ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জয় বাংলা বাইক সার্ভিস, অভিভাবক ছাউনি, ফ্রি মেডিক্যাল সেবা, তথ্য সহায়তা ডেস্কও প্রশংসা কুড়িয়েছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।  

এইচআর/এনএফ/জেএস