তিন শিক্ষকের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ৩ ঘণ্টা তালাবদ্ধ থাকা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাতে তিনি বুকে ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি হন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ঘটনার পর থেকেই অধ্যাপক আশরাফ মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই কারণেই তিনি অসুস্থ হয়েছেন বলে দাবি করেন অধ্যাপকের স্ত্রী তাহমিয়া তাসনিম। 

শুক্রবার (১ জুলাই) বিকেলে নগরীর নেক্সাস হাসপাতালে তাহমিয়া তাসনিম বলেন, আশরাফ আলী সিদ্দিকী উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের রোগী। গত ১৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ কক্ষে তালাবদ্ধ থাকার পর থেকেই তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করে আসছিলেন। ঘটনার পর তিনি ময়মনসিংহের একজন চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই বুকে ব্যথা শুরু হয়। রাতে ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের বিচার চেয়ে ড. আশরাফের স্ত্রী আরও বলেন, বারবার আমার স্বামী ড. আশরাফকে ওই বিভাগের ৩ শিক্ষক হেনস্তা করে আসছেন। তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয় বলে বিশেষ ক্ষমতায় শিক্ষক নকিবুল হাসান খান, রকিবুল হাসান, আলিম মিয়া বারবার এমন কর্মকাণ্ড করেও বিচারের বাইরে থেকে যাচ্ছেন। একাধিকবার দরজায় তালা লাগিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের ঘটনার পরও তারা হুমকি অব্যাহত রেখেছেন। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার স্বামীর কোনো ক্ষতি হলে এই দায় কে নেবে? 

হাসপাতালে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক বলেন, রোগীর হার্টের অবস্থা ভালো নয়। প্রেসার হাই। চিন্তা থেকেই এমন হচ্ছে। পেসেন্টের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর থেকেই অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। পরবর্তীতে আরও বেশ কিছু পরীক্ষার পর রোগীর অবস্থা জানানো যাবে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, এটি দুঃখজনক ঘটনা। আমি ড. আশরাফ সিদ্দিকীর কাছ থেকে একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। একই সঙ্গে অন্য ৩ শিক্ষকও একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন। আমরা এই ঘটনাটিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। 

উপাচার্য আরও বলেন, দুই অনুষদের ডিন ও সাবেক এক ডিনকে দিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। আর সেটির ওপর ভিত্তি করেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এভাবে চলতে থাকলে বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম অচল হয়ে যাবে, যা আমরা হতে দিতে পারি না।

এর আগে, নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে ড. আশরাফ আবেদন করলেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর প্রশাসনের নিশ্চুপ অবস্থানের কারণ দেখিয়ে ত্রিশাল মডেল থানায় বুধবার সাধারণ ডায়েরি করেন ড. আশরাফ সিদ্দিকী।

উবায়দুল হক/আরআই