পরীক্ষার কারণে ছাত্রলীগ পরিচালিত গেস্টরুমে উপস্থিত থাকতে না পারায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ওই হলের ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে।

রোববার (২৪ জুলাই) রাত ১১টার দিকে হলের ১৭৭নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ভারপ্রাপ্ত হল প্রভোস্টের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. শিপন মিয়া। তিনি তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা শঙ্কায় হলের বাইরে অবস্থান করছেন ওই শিক্ষার্থী।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীর নাম ইয়াসির আরাফাত প্লাবন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্টzবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। প্লাবন হল শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং হল সভাপতি তানভীর শিকদারের অনুসারী।

আরও দেখুন >> এসএম হলে ‘মৃত্যুর’ সঙ্গে বসবাস তাদের

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, বিভাগের পরীক্ষার জন্য ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারিনি। এ জন্য আমাকে রাতে ছাত্রলীগের পলিটিক্যাল রুমে যেতে কয়েকবার ফোন দেন বড় ভাইয়েরা। কিন্তু পরীক্ষার প্রস্তুতির কারণে তাদের ফোন ধরতে পারিনি। পরে আমাকে খুঁজে ধরে নিয়ে যেতে কয়েকজনকে পাঠানো হয়। তারা আমাকে হলের ১৭৭ নম্বর রুমে (পলিটিক্যাল রুম) ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে এক পর্যায়ে প্লাবন (অভিযুক্ত) চড় মারেন। পরীক্ষার আগের রাতে এ ধরনের নির্যাতন করায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। পরে রাতে হল থেকে বের হয়ে অন্য হলে অবস্থান করে পরীক্ষা দিই। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

শিপনের অভিযোগ, প্লাবনের চড়-থাপ্পড় মারার পাশাপাশি ছাত্রলীগ কর্মী আল ইমরান তাকে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটে খোঁচা মেরেছেন। ইয়াছিন আল শাহীন তার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। তারা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছেন। অভিযুক্ত এই দুই ছাত্রলীগ কর্মীও হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদারের অনুসারী বলে জানা গেছে।

আরও দেখুন >> সালাম না দেওয়ায় ছাত্রলীগকর্মীর থাপ্পড়, কানে শুনছেন না ঢাবি ছাত্র

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদারের নির্দেশে সবাইকে গেস্টরুমে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। যারা আসতে দেরি করেছে কিংবা পরীক্ষার কারণে আসতে পারেনি তাদেরকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। শিপনসহ ৮ জনকে নির্যাতন করা হয়েছে। প্রতিবাদের চেষ্টা করলে আবারও ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা খুবই অসহায়।

অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী প্লাবন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ছোট ভাই হিসেবে নরমাল বিহেভ করেছি। সে হয়ত বিষয়টা সিরিয়াসলি নিয়েছে। তাকে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্যও বলা হয়নি। এটা সম্পূর্ণ ভুল বুঝাবুঝি।

আরও দেখুন >> সম্মেলন পেছানোর চেষ্টায় জয়-লেখক

এ বিষয়ে জানতে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদারের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসাইন বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) একটা সভা ডেকেছি। সেখানে আলোচনা করে একটা তদন্ত কমিটি করা হবে। ওই আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। হল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ছাত্র নির্যাতন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো ধরনের অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় নয়।

এইচআর/ওএফ