ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক যুবকের মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হল ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে।

বুধবার (৩ আগস্ট) এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রজিত দাস (২৮) নামে ভুক্তভোগী ওই যুবক। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগে জানান তিনি।

অভিযুক্ত মো. তুষার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী এবং মো. শামীমুল ইসলাম ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। তারা দুজনেই মাস্টারদা সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মারিয়াম জামান খান সোহানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ভুক্তভোগী প্রজিত নড়াইলের নরাগাতি থানা এলাকার গন্ধবাড়ীয়ার বিরেন্দ্র নাথ দাসের ছেলে। থানায় দেওয়া অভিযোগে তিনি বলেন, আমি মোটরসাইকেলযোগে পলাশী থেকে টিএসসির উদ্দেশে রওনা হই। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে এলে সূর্য সেন হলের মো. তুষার হোসেন ও মো. শামীমুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয় জন আমার মোটরসাইকেল থামিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।

তিনি বলেন, এ সময় মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন জোরপূর্বক নিয়ে যেতে চাইলে আমি প্রতিবাদ করি। পরে তারা আমাকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করে মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করেন। থাপ্পড়ে আমার কানের পর্দা ফেটে যায়। পরে তারা আমাকে সূর্য সেন হলের গেস্টরুমে নিয়ে ফের মারধর করেন। তারা আমার পালসার মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো ল-৫১-১২৭৫), আইফোন ও নগদ ১৭ হাজার টাকা নিয়ে যান। তারপর খালি হাতে ধাক্কা মেরে বের করে দিয়ে বলেন, ‘তুই সোজা চলে যাবি। ডানে বামে কোথাও তাকাবি না।’ এ সময় তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

বিষয়টি জানতে পেরে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগ নেতা মিলন খান ও স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতা সাগর হোসেন সোহাগ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা প্রজিতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন তিনি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী মো. শামীমুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তুষার ভাইয়ের সাথে তার (প্রজিত দাস) তর্কাতর্কি হচ্ছে দেখে আমরা এগিয়ে আসি। পরে আমাদের প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও সেখানে আসে। জুনিয়ররা একটু উত্তেজিত হয়ে তাকে গালিগালাজ করেছে, কয়েকটা চড় থাপ্পড় মেরেছে। পরে আমরা সিনিয়ররা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি এবং তাকে হলের গেস্টরুমে নিয়ে আসি। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি এবং ছাত্রলীগের বড় ভাইয়েরা এসে বিষয়টির সমাধান করে দেয়। এর বেশি কিছু ঘটেনি।

ছিনতাইয়ের ঘটনা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মোটরসাইকেলটি মিলন ভাইয়ের ছিল, উনি নিয়ে গেছেন। কেন আমাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বুঝতে পারছি না।

আরেক অভিযুক্ত মো. তুষার হোসেনকে কল করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার মন্তব্য জানা যায়নি।

সূর্য সেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি মারিয়াম জামান খান সোহান বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। এমন কিছু ঘটে থাকলে আমাকে জানানো হতো। আমি খোঁজ নেব।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। তাদের (অভিযুক্ত) সঙ্গে এখনো কথা বলতে পারিনি। বিষয়টি যাচাই করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা নেব।

এইচআর/আরএইচ