ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সভ্যতার অত্যাশ্চর্য বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্য আজকের পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ধ্বংস করে দিচ্ছে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে এবং পৃথিবী এখন মানুষের বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। আজকের পৃথিবীতে পুঁজিবাদ হচ্ছে সবচেয়ে বড় শত্রু।

শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। লেখক সংঘের এবারের সম্মেলনের স্লোগান ‘ভয়ের মাঝে অভয় বাজাও, সাহসী প্রাণে চিত্ত জাগাও’। এবারের সম্মেলন থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা বিরোধী সকল কালাকানুন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, সাহিত্যে একটা দুর্দশা চলছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। এ বিপদের জন্য প্রযুক্তি দায়ী নয়, বরং প্রযুক্তির ওপর পুঁজিবাদী আধিপত্যের কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। পুঁজিবাদ মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা চায়, ভোগবিলাসে উৎসাহিত করতে চায়। পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্যের কারণে আজ পৃথিবী বিপন্ন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের কারণে নয়, পুঁজিবাদের বিকাশের কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

আলোচনা সভায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অতীতে তাকালে আমরা দেখব যে, প্রযুক্তি সবসময় সাহিত্যকে সহযোগিতা করেছে। যখন কাগজ বা ছাপাখানা ছিল না, তখন প্রযুক্তিই কাগজ ও ছাপাখানা এনেছে। এরপরে যখন রেডিও এলো তখন ধারণা করা হলো সাহিত্যের বদলে এবার মানুষ রেডিও শুনবে, সাহিত্য পড়বে না। কিন্তু দেখা গেল রেডিও সাহিত্যকে ব্যবহার করছে। ঠিক একইরকমভাবে টেলিভিশনও সাহিত্যকে শেষ করতে পারেনি। কিন্তু, আজকের চলমান সাহিত্যের এই বিপদ প্রযুক্তির কারণে সৃষ্টি হয়নি বরং প্রযুক্তির উপর  পুঁজিবাদের যে আধিপত্য সেটার কারণে সৃষ্টি হয়েছে।

পরিবেশ না থাকলে লেখক তৈরি হয় না উল্লেখ করে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের এই অধ্যাপক বলেন, ৪০০ বছর পূর্বের ইংরেজি সাহিত্যের সাথে আমরা পরিচিত। ইংরেজি সাহিত্যের দুজন শেক্সপিয়র ও ফ্রান্সিস বেকন তারা উঠে এসেছেন যদিও তখন সভ্যতা এতটা অগ্রসর ছিল না।

বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া পিনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক, নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। 

প্রগতি লেখক সংঘের সহসম্পাদক অভিনু কিবরিয়া ইসলামের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান হীরা, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর গৌতম।

এইচআর/এসকেডি