প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পেরিয়েও নিশ্চিত হয়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭০০ শিক্ষকের জন্য রয়েছে ৪০ জনের বসবাসের মাত্র একটি ডরমিটরি; সেটাতেও নেই বসবাসের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। 

ভবনে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও কেয়ারটেকারের অভাব, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ না থাকা, এমনকি ডরমিটরি দেখভালের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ভবনে বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির লাইনে কোনো সমস্যা হলে কে ঠিক করবে এমন সিদ্ধান্তে ঝামেলা পোহাতে হয় শিক্ষকদের। কোনো কিছু নষ্ট হলে শিক্ষকদের নিজেদেরই ঠিক করতে হয়।

এছাড়া পুরোনো ঢাকার মতো জনবহুল এলাকায় অবস্থিত এই ডরমিটরিতে নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো ব্যবস্থা। ডরমিটরি দেখাশোনার জন্য কেয়ারটেকার, নিরাপত্তাকর্মী বা সিসি ক্যামেরা- কিছুই নেই ভবনটিতে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ডরমিটরিতে ঢুকতেই নিচের প্রবেশ দ্বার খোলা। নেই কোনো কেয়ারটেকার, নিরাপত্তাকর্মী বা সিসি ক্যামেরা। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে ছাদের দরজাও উন্মুক্ত দেখা যায়। ডরমিটরির সাথেই অন্যান্য আবাসিক ভবন থাকায় ভবনের ছাদ ও নিচের প্রবেশ গেটের মাধ্যমে সহজেই বহিরাগতরা ঢোকার আশঙ্কায় নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে জানান শিক্ষকরা।

এছাড়া ভবনের পাশে যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায় ময়লা। ছয়তলা ভবনের বিভিন্ন রুম থেকে ময়লা সরাসরি নিচে ফেলায় কোনো কোনো ফ্লাটের বাইরের অংশে ও জানালার ওপরেও ময়লা ঝুলতে দেখা যায়। ড্রেনগুলো উন্মুক্ত, পয়ঃনিষ্কাশন না হওয়ায় মশা মাছি ভনভন করতে দেখা যায়।

এসব বিষয়ে ডরমিটরিতে বসবাস করা কয়েকজন শিক্ষক বলেন, এখানে বসবাসের পরিবেশ খুবই খারাপ। কেয়ারটেকার না থাকায় ভবনের কোনো কিছু নষ্ট হয়ে গেলে আমাদেরই ঠিক করতে হয়। প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে ময়লা যেখানে-সেখানে পড়ে থাকে। পাশের ড্রেনে ময়লা নিষ্কাশন হয় না বলে আমরা ডেঙ্গুর আশঙ্কায় থাকি। কোনো পরিচালনা কমিটি না থাকায় মান সন্মানের কারণে অন্য কাউকে বলতেও পারি না। 

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষকদের বসবাসের এ ভবনে নিরাপত্তার জন্য কোনো সিকিউরিটি গার্ড বা সিসি ক্যামেরাও নেই। কে ভবনে আসে যায় দেখার কেউ নেই। কোনো নীতিমালা না থাকায় যে যেভাবে পারেন বসবাস করছেন। যদি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যথাযথ নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সার্ভিস চার্জ নিয়েও আমাদের বসবাসের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে, তাতেও আমরা রাজি।

নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, ডরমিটরিতে নীতিমালা অনুসরণ না করে মৌখিকভাবেই থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তদবির করতে পারলেই পছন্দের শিক্ষকদের মেলে ডরমিটরিতে থাকার সুযোগ। বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, নিয়মকানুন বাদেই নিজেদের মতো করে বসবাস করে আসছেন শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ডরমিটরি পরিচালনা কমিটি নামে ছয় সদস্যদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদকে আহ্বায়ক ও রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামানকে সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ, ছাত্র কল্যাণের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকি এবং অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক ড. কাজী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে সদস্য করে এ কমিটি করা হয়। কিন্তু ডরমিটরিতে বসবাসকারী কোন শিক্ষক প্রতিনিধিকে কমিটিতে না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ডরমিটরি পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, নীতিমালা অনুসারে নতুন করে শিক্ষকদের ডরমিটরিতে উঠতে আবেদন করতে বলা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সার্ভিস চার্জের মাধ্যমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সকল-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ডরমিটরিতে সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ডরমিটরি সংস্কার, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, কেয়ারটেকার ও নিরাপত্তাকর্মীসহ যে যে সুবিধাগুলো লাগে তার ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ডরমিটরি পরিচালনা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, মৌখিকভাবে অনুমতি নিয়ে শিক্ষকরা ডরমিটরিতে বসবাস করছেন। এতদিন নীতিমালার প্রয়োগ ও পরিচালনা কমিটি না থাকায় ডরমিটরিতে সমস্যা ছিল। ২০১৯ সালের জুন বা জুলাইয়ের দিকে একটি নীতিমালা পাস হয়। তবে এতদিন নীতিমালার প্রয়োগ ছিল না। এখন থেকে ডরমিটরির নতুন পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে নীতিমালা মেনে শিক্ষক তোলার পর ডরমিটরির সকল সমস্যা সমাধান হবে বলে আমরা শিক্ষক সমিতি আশা করছি।

এমটি/এনএফ