ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক জটিলতায় সৃষ্ট নানান হয়রানি বন্ধের প্রতিবাদে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। এর আগের অবস্থান কর্মসূচি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি এবং ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন এই শিক্ষার্থী।

পুনরায় অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিসি স্যারকে এর আগে যখন স্মারকলিপি দিয়েছিলাম, তখন তিনি দাবিগুলো যৌক্তিক এবং তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ভিসি স্যার কথা রাখেননি। এমনকি রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে আজ আমাকে বাঁধাও দেওয়া হয়েছে। ৯টায় অফিস টাইম থাকলেও, ৯টা ৪০ মিনিটে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে অনুপস্থিত। সেই ছবি তুলতে গেলে আমি বাঁধার সম্মুখীন হই।

তিনি আরও বলেন, বেঁধে দেওয়া দশ কর্মদিবস শেষ হলেও রেজিস্টার বিল্ডিংয়ের সমস্যা সমাধানে ভিসি স্যার কোন পদক্ষেপ নেননি। আমাদের একটি দাবিও পূরণ করেননি। কিংবা দাবি পূরণে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেননি। রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের অবস্থা যা ছিল, তা-ই রয়েছে।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলবে উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, পর্যাপ্ত সময়, গঠনমূলক পরামর্শ, সময়োপযোগী দিক নির্দেশনা দেওয়ার পরও আট দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের অসহযোগিতামূলক আচরণে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি ক্ষুব্ধ। এই অনিয়মের শৃঙ্খল ভাঙতে হবে। এবার আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমার অবস্থান কর্মসূচি চলবে।

সমস্যাগুলো সমাধানকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবি পেশ করেন হাসনাত। দাবিগুলো হচ্ছে-

১। শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসনের জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে। যেখানে সেবাগ্রহীতারা সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

২। প্রশাসনিক সব কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটাইজড করতে হবে।

৩। নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিসগুলোর অভ্যন্তরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

৪। প্রশাসনিক ভবনে অফিসগুলোর প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে। ডিসপ্লেতে অফিসগুলোর নাম, কক্ষ নম্বর ও সেখানে প্রদত্ত সেবার বিবরণী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম ও ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদর্শন করতে হবে।

৫। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনেরও সংস্কার করতে হবে।

৬। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক বিদ্যা, পেশাদারিত্ব, মানুষিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারগুলোর শরণাপন্ন হতে হবে।

৭। অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত থাকতে পারবে না। সে নিরিখে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবগুলোতে স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে।

৮। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশ বান্ধব করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশ বজায় রাখতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য হানিকর ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপ্রয়োজনীয় পোস্টার লিফলেট ও ব্যানার ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।

এইচআর/এমএইচএস